ঢাকা: উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে স্প্যানিশ জায়ান্ট ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার মুখোমুখি হয়েছিল জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুজেন। বার্সার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে জার্মান ক্লাবটির গতির ছন্দে খেই হারিয়ে ফেলা কাতালানরা ২-১ গোলের কষ্টার্জিত জয় তুলে নিয়েছে।
ম্যাচের প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়ে বার্সা। জার্মানির বুন্দেসলিগার চলতি মৌসুমের ৭ ম্যাচের ৪টিতেই জয় পাওয়া লেভারকুজেনের হয়ে ম্যাচের ২২ মিনিটে গোল করেন পাপাদোপৌলস। ৮০ মিনিটে সার্জি রবার্তোর গোলে সমতায় ফেরা কাতালানরা দুই মিনিট পরেই জয়সূচক গোলটি পায় সুয়ারেজের বুলেট গতির শট থেকে।
বার্সার কোচ লুইস এনরিক এ ম্যাচে তার শিষ্যদের ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলান। শুরুর একাদশে কাতালানদের হয়ে মাঠে নামেন টার স্টেগেন, দানি আলভেজ, জেরার্ড পিকে, মাশচেরানো, ম্যাথিউ, রেকিটিচ, বাসকুয়েটস, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, সান্দ্রো রামিরেজ, লুইস সুয়ারেজ এবং নেইমার।
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই লিড পেতে পারত অতিথি হিসেবে খেলতে নামা লেভারকুনে। বার্সার বামপাশ দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে গোলপোস্ট বরাবর শট নেন চিচারিতো। তবে, প্রস্তুত ছিলেন বার্সার গোলরক্ষক টার স্টেগেন। ফিরতি আক্রমণে লেভারকুজেনের ডি-বক্সে প্রবেশ করেন লিভারপুলের সাবেক তারকা সুয়ারেজ। অফসাইটের বাধায় আটকে যায় তার আক্রমণটি।
পঞ্চম মিনিটে নেইমারের তুলে মারা বলে হেড করেন রেকিটিচ। লেভারকুজেনের গোলরক্ষক লেনোর দারুণ পারফর্মে গোল বঞ্চিত হন ক্রোয়েশিয়ান তারকা। এরপর কিছুটা এলোমেলো খেলতে থাকা কাতালানরা ম্যাচের দশম মিনিটে ঝটিকা আক্রমণ করে বসে। নেইমারের বানানো বলে লেভারকুজেনের জাল লক্ষ্য করে আচমকাই জোরালো শট নেন সান্দ্রো। তবে, এবারো প্রস্তুত ছিলেন অতিথি গোলরক্ষক লেনো।
১৪ মিনিটের মাথায় অভিজ্ঞ ইনিয়েস্তা প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে বল বাড়িয়ে দেন সুয়ারেজকে লক্ষ্য করে। তবে, বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই তা চলে যায় লেনোর দখলে।
ম্যাচের ২২ মিনিটের মাথায় লিড নেয় লেভারকুজেন। হাকান চাহানগলুর দারুণ এক কর্ণার কিকে বার্সার গোলপোস্টের সামনে পড়ন্ত বলে হেড করেন পাপাদোপৌলস। তার সামনে জেরেমি ম্যাথিউ আর সুয়ারেজ থাকলেও কোনো বাধার দেওয়া দাঁড় করাতে পারেনি। কাতালানদের গোলবারের নিচে দায়িত্ব পালন করা টার স্টেগেনও আরেকবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে পারেননি।
মেসিবিহীন বার্সার আক্রমণভাগ কিছুতেই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছিল না গোল হজমের পর। বারবার ভুল পাসে আর নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে উল্টো লেভারকুজেনকে সুযোগ তৈরি করে দিতে থাকে কাতালানরা। ম্যাচের ৩৬ মিনেটের মাথায় ব্যবধান দ্বিগুন করার সুযোগ পায় লেভারকুজেন। পিকেকে কাটিয়ে বরুশিয়া মনচেনল্বার্গের সাবেক তারকা বেল্লারাবি জোরালো শট নেন। তবে, দলকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দেন টার স্টেগেন।
এক মিনিট পরেই বল নিয়ে দারুণ ভাবে তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে অতিথিদের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন নেইমার। দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে বল বের করে নিলেও নিজের পা জোড়া প্রতিপক্ষের সেই দুই ডিফেন্ডারের পায়ে ইচ্ছাকৃত লাগিয়ে ডি-বক্সের মধ্যেই পড়ে যান। আর নেইমারের এ অভিনয় ধরতে পেরে ব্রাজিল তারকাকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
পরের মিনিটেই নেইমারের দিক পরিবর্তন করা শটে গোল পেতে পারত বার্সা। প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের পা ছুঁয়ে বল গিয়ে লাগে লেভারকুজেনের গোলবারে। ফিরতি বলে শট নেন সান্দ্রো। তবে, এবারও শেষ মুহূর্তে পাপাদোপৌলস তা রুখে দেন।
প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হলে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সা।
বিরতির পর খেলার ৫০ মিনিটে চিচারিতোর সামনে সুযোগ আসে দলের লিড দ্বিগুন করার। গোলবারের ১২ গজ দূর থেকে রিয়ালের সাবেক তারকা যে শটটি নিয়েছেন সেটি রুখে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়েনি বার্সার গোলরক্ষকের। গোলবারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায় চিচারিতোর শটটি।
৫২ মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ন সুযোগ এসেছিল স্বাগতিকদের সামনে। ইনিয়েস্তার বাড়ানো বলে সান্দ্রোর শটটি লেভারকুজেনের গোলবারের অল্প বাইরে দিয়ে চলে যায়। চার মিনিট পরে ইনিয়েস্তা-রেকিটিচ-নেইমারের একটি প্রচেষ্টা নষ্ট হয়।
খেলার ৬০ মিনিটে আঘাত পান বার্সার পুরোনো সৈনিক ইনিয়েস্তা। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন জরদি আলবা। দুই মিনিট পর সান্দ্রোকে তুলে নিয়ে এনরিক মাঠে নামান মুনির আল হাদ্দাদিকে।
৭০ মিনিটে সুয়ারেজের জোরালো শট কর্ণারের মাধ্যমে রুখে দেন লেভারকুজেনের ডিফেন্ডার। নেইমারের কর্ণার কিক থেকে বল পেয়ে রেকিটিচ শট নেন, এবারো ডিফেন্সে বাধা পায় বল। ফিরতি বলে হেড করেন পিকে। তবে, নিজের গ্লাভসবন্দি করতে বেগ পেতে হয়নি লেনোর।
৭২ মিনিটের মাথায় রেকিটিচের জায়গায় খেলতে নামেন সার্জি রবার্তো।
৮০ মিনিটে সমতায় ফেরে বার্সা। ডানপাশ দিয়ে আলবার বাড়ানো বলে শট নেন মুনির। তবে লেনোর বাধা তিনিও টপকাতে পারেননি। লেভারকুজেনের গোলরক্ষক ঠিকমতো নিজের নিয়ন্ত্রণে বল রাখতে না পারায় ফিরতি বল পান সার্জি রবার্তো। আলতো টোকায় বল জড়িয়ে দেন তিনি।
এর দুই মিনিট পরেই মুনির-সুয়ারেজ জুটির দারুণ এক বোঝাপড়ায় প্রথমবার লিড নেয় স্বাগতিকরা। ম্যাচের ৮২ মিনিটে মুনির তিন ডিফেন্ডারকে অসাধারণ ভাবে বোকা বানিয়ে সামনে থাকা সুয়ারেজকে পাস দেন। বুলেট গতিতে লেভারকুজেনের জালে বল জড়িয়ে দেন উরুগুয়ের তারকা সুয়ারেজ। ফলে, ২-১ এ এগিয়ে যায় কাতালানরা।
৮৬ মিনিটে মুনিরের কাছ থেকে বল পান নেইমার, সেখান থেকে তিনি বল বাড়িয়ে দেন সুয়ারেজকে। লিভারপুলের সাবেক তারকা শট নিলেও তা গোলবারের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্যাম্প ন্যুতে স্বাগতিক হিসেবে খেলতে নামা মেসিবিহীন বার্সেলোনা।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৬ ঘণ্টা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
এমআর