ঢাকা: শঙ্কাটা আগে থেকেই ছিল। অবশেষে সেটাই বাস্তবে পরিণত হলো।
দাপুটে এ জয়ের ফলে এএফসি’র বাছাইপর্বের ‘ডি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন সৌদি আরবের কিশোরেরা। পক্ষান্তরে, এএফসির মূলপর্বের টিকিট পাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য প্রায় ‘অসম্ভব’ হয়ে গেল। দ্বিতীয় ম্যাচটা স্বাগতিকদের জন্য এখন শ্রেফ নিয়মরক্ষার মতোই।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর একই ভেন্যুতে আরেক পরাশক্তি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
ম্যাচের শুরুতে কি দুর্দান্ত বাংলাদেশকেই না দেখ গেল! বল দখলের লড়াইয়ে, রক্ষণ সামাল দিতে কিংবা আক্রমণের পসরা সাজাতে। সবদিকেই সৌদি আরবকে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন শাওন বাহিনী। সারওয়ার জামান নিপু তো রীতিমতো উৎসবের আমেজ এনে দেন বাংলাদেশকে, দারুণ এক গোল করে।
মধ্যমাঠের সারথী মোস্তাজিব খানের দুর্দান্ত ক্রস থেকে সৌদির জালে বল পাঠান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা ফুটবলার নিপু। কিন্তু লিডটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের, স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১১ মিনিটের।
গোল হজমের পর বাংলাদেশের উপর রীতিমতো আহত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সৌদি আরব। অধিনায়ক আলমাস নাইফ মুসা গোল করে অতিথিদের লড়াইয়ে প্রাণ দেন।
প্রথমার্ধের জমজমাট লড়াইটা শেষ অবধি ১-১ গোলে থমকে দাঁড়ায়।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধেই পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্রনাট্য। ম্যাচটাকে বড্ড এক তরফা বানিয়ে ফেলে সৌদি আরব। কারণটাও অনুমেয়। গোলরক্ষক ফয়সালের লাল কার্ড দেখে মাঠছাড়াটা রীতিমতো নাজেহাল করে তোলে বাংলাদেশকে। দশ জনে পরিণত হওয়া স্বাগতিকদের ম্যাচের বাকি সময়ে খুঁজেই পাওয়া গেল না। দ্বিতীয়ার্ধে চার চারটে গোল হজম করতে হয়েছে তাদের, শেষ ১০ মিনিটেই তিনটি। কে বলবে এই দলটা কদিন আগে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে!
১০ জনের দলে পরিণত হলেও বাংলাদেশের কাছ থেকে যতটা পরিচ্ছন্ন ফুটবলের আশা ছিল তাতে গুঁড়েবালি। সৌদি আরবের জাল খুঁজে নেয়া দূরে থাক, শাওন বাহিনীকে ব্যস্তসময় কাটাতে হয়েছে নিজেদের বিপদসীমায়।
বলতে গেলে সৌদি কিশোররা বাংলাদেশের রক্ষণভাগের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছে বিরতির পর। অতিথিদের আক্রমণের তোপে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে স্বাগতিকদের বাধার প্রাচীর। ম্যাচ শেষে তাই বাংলাদেশকে পুড়তে হলো আক্ষেপের যন্ত্রণায়। কেন গোলরক্ষক ফয়সাল সৌদি ফুটবলার তারিককে অনর্থক ট্যাকল করেছিলেন। তিনি লাল কার্ড না দেখলে হয়তো ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত। জয় না হোক দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে পারত জিলানীর বাংলাদেশ।
অবশ্য লড়াইয়ের আগেই দারুণ সংবাদ পেয়েছিল সৌদি আরব। চোটের কারণে বাংলাদেশের কাণ্ডারী আতিকুজ্জামানের ছিটকে যাওয়া, সঙ্গে বয়সের মারপ্যাচে সাদ-খলিলের দর্শকবনে যাওয়াটা। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ যেন একটা খর্বশক্তির দল। এই ত্রি-নক্ষত্রের শূন্যতা হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছে লাল-সবুজরা। তাতে ইতিহাসের আরেকদফা পুনরাবৃত্তিও হয়ে গেল। তিন বারের লড়াইয়ে প্রতিবারই পরাজয়ের তিক্ত স্বাদের অভিজ্ঞতা হলো বাংলাদেশের।
কিন্তু এবারের হারটা ছাপিয়ে গেল লাল-সবুজদের অতীতের দুটোকেও (১-০, ৪-০)। সৌদির বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রতিশোধের নেশাটা তাই আড়ালেই থেকে গেল।
বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো এটা অবশ্য না বললেই নয়। দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিকদের যেভাবে টুটি চেপে ধরেছিল তাতে সৌদি আরবের বড় জয়ই প্রাপ্য ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি গোলপোস্টের রসিকতায়। এদিন দু’দুবার সৌদিকে গোলবঞ্চিত করেছে ক্রসবার। তবুও লজ্জার হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।
শেষ দশ মিনিটের স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনটি গোল হজম করেছেন জিলানীর ছাত্ররা। তারিকের গোলে পিছিয়ে যাওয়ার (২-১) পর লড়াইয়ে ফেরার যে একটা সম্ভাবনা ছিল সেটাও উবে গেছে, ৮১ মিনিটে সৌদিকে পেনাল্টি ‘উপহার’ দিয়ে। ইমনের ফাউলের খেসারত দিতে পারেননি পরিবর্তিত গোলরক্ষক নূর আলম। স্পট কিক থেকে বাংলাদেশের জালে বল জড়ান মালি। ৮৪ মিনিটে সোলায়মানের গোলে স্কোর লাইন দাঁড়ায় ৪-১-এ। ম্যাচের অন্তিম সময়ে বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন হামাদ আবদান।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আরএসএল/এমআর