ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

অনাদর অবহেলায় জাতীয় খেলা কাবাডি

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৬
অনাদর অবহেলায় জাতীয় খেলা কাবাডি ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: পৃথিবীতে হয়তো এমন কোন দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে দেশের জাতীয় খেলা এতটা অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি আজ দারুণভাবে উপেক্ষিত এবং অবহেলিত।

দেশের খেলাধুলার অভিভাবক অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সঠিক নজরদারী, তত্ত্বাবধান ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এদেশের জাতীয় খেলা কাবাডির এই নাজুক অবস্থা।
 
দেশের কাবাডির আজকের এই নাজুক অবস্থা ভাবাচ্ছে খোদ কাবাডি ফেডারেশনকেও। জাতীয় খেলাটির বেহাল দশার কারণ হিসেবে কাবাডি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মোঃ নিজামউদ্দিন চৌধুরী পারভেজ জানালেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য কোন ভাতা নেই। যারা গরীব তারা কাবাডি খেলে। বিত্তবানেরা এখানে আসে না। ক্রিকেট, ফুটবল ও হকির মত বাজেট আমাদের নেই। আমাদের উপরে উঠার জন্য সব চাইতে বড় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন ম্যাচ। বিদেশে গিয়ে অনুশীলন ম্যাচ খেলা খুবই প্রয়োজন যা আমরা টাকার অভাবে পারছি না। আমাদের একটি একাডেমিও নেই। ’
 
অথচ, ১৯৭৪ সালে জাতীয় খেলা হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার পর থেকেই দেশে ও দেশের বাইরে সুনাম কুড়িয়েছে লাল-সবুজের জাতীয় খেলা কাবাডি।
 
১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে রৌপ্য, ১৯৮৭ সালে ভারতে রৌপ্য এবং ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে ব্রোঞ্জ জয়ের পর ১৯৯৩-২০১৬ পর্যন্ত এসএ গেমসের প্রতিটি আসরেই ব্রোঞ্জ জিতে আসছে বাংলাদেশ কাবাডি দল।
 
সবশেষ গেল ফেব্রুয়ারিতে ভারতে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে বাংলাদেশ ছেলে কাবাডি দল ব্রোঞ্জ জিতলেও রৌপ্য জিতেছে মেয়েরা।

এসএ গেমসের পাশাপাশি ২০০৮-২০১৪ পর্যন্ত বীচ এশিয়ান গেমসের প্রতিটি আসরেই ব্রোঞ্জ জিতেছে বাংলাদেশ। আর ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে দেশ থেকে ২২টি ফেডারেশন অংশ নিলেও ফলাফল কিন্তু এনে দিয়েছে একমাত্র ক্রিকেট ও কাবাডি।

 
শুধু এসএ বা এশিয়ান গেমসেই কেন? বিশ্বকাপেও এদেশের কাবাডি খেলোয়াড়রা দেশের পতাকা তুলে ধরেছেন উচ্চে। ভারতে ২০০৪ ও ২০০৭ কাবাডি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ জয়ের গৌরব লাভ করেছে বাংলাদেশ। এমন পারফরম্যান্সের কারণেই বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে লাল-সবুজের কাবাডি দল ৫ নম্বরে আর এশিয়ান র‌্যাংকিংয়ে রয়েছে ৩ নম্বরে।
 
গেল দুই আসরের ধারাবাহিকতায় আসছে ৭-২২ অক্টোবর ভারতের আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তৃতীয় কাবাডি বিশ্বকাপ। যেখানে এবারও পদক জিততে অংশগ্রহলণ করবে বাংলাদেশ। তবে আশার কথা হলো, এত অভাব ও অবহেলার মধ্যেও নিজেদের সেরা প্রস্তুতি নিয়েই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে বলে আশ্বস্ত করলেন পারভেজ, ‘প্রস্তুতি ভাল। আশা করি তৃতীয় বিশ্বকাপেও আমরা শিরোপা জিতবো। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমরা বাংলাদেশ ও ভারত থেকে দু’জন কোচ পাচ্ছি। তাদের তত্ত্বাবধানে প্লেয়াররা প্রস্তুতি নেবে। আর আমাদের প্লেয়াররাও বেশ দক্ষ। ওদের ফিটনেসও সন্তোষজনক। ’
 
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তা ছাড়া কি করে কাবাডি ফেডারেশন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে? উত্তরটি কাবাডি সহ-সভাপতি দিলের এভাবে, ‘আমাদের টাইটেল স্পন্সর ওয়াল্টন। তারাই আমাদের ফেডারেশনের বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। আর কেউ আসতে চায় না। কারণ সবাই ফলাফল দেখতে চায়। তবে আমি বলবো আমাদের ফলাফল আছে। কিন্তু দেখেন আমরা সেই অনুযায়ী পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছি না। অলিম্পিক আমাদের অভিভাবক সংগঠন, অনেক টাকা খরচ করে অন্যান্য ফেডারেশনের জন্য। তাদের জন্য কোচ নিয়ে আসছে কিন্তু আমাদেরতো কোনদিনও বললো না দুই বছরের জন্য এই কোচ দিলাম আপনারা ভালভাবে প্রশিক্ষণ নিন। তাহলে আমরা কোথায় যাব?’
 
পারভেজের হতবাক করা এসব কথার শেষে জানতে চাইলাম কী করলে এদেশের জাতীয় খেলা কাবাডিকে এই দৈন্যদশা থেকে বের করে আনা যাবে? তিনি জানালেন, ‘জাতীয় খেলাকে জাতীয়রূপ ধারণ করতে হলে সর্বস্তরের জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে। জাতির সকলের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হবে। আরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারের স্বদিচ্ছাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত, এখানে প্রয়োজন শতভাগ পেশাদারিত্ব। প্রয়োজন গণমাধ্যমের স্বদিচ্ছা। পাশাপাশি প্রয়োজন সরকারের মনোযোগ। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ১৪ আগস্ট ২০১৬
এইচএল/এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।