ময়মনসিংহ: টানা দু’বার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপের গৌরব অর্জনের পর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যেসব ফুটবল কন্যারা তাদের কপালে পুরস্কারের বদলে জুটেছে তিরস্কার!
ধারাবাহিকতা ধরে রেখে অসাধারণ নৈপুণ্যের মাধ্যমে দেশের ফুটবলে নবজাগরণের সূত্রপাত করা প্রমীলা ফুটবলারদের কদর মোটেও বুঝতে পারেনি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সংবর্ধনা ও সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়নশিপ ক্যাম্পের ব্যস্ততার কারণে ৪৫তম গ্রীষ্মকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে খেলতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাদের করা হয়েছে লাঞ্ছনা।
অসাধারণ কীর্তি গড়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা এসব মেয়েরা ঘরে ফিরেও নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের আচরণে হতবাক ও মর্মাহত। বিদ্যালয় থেকে এসব শিক্ষার্থীদের ছাঁটাইয়ের হুমকিতে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে সময় কাটছে তাদের।
অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল টিমে খেলছেন গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষা গ্রাম কলসিন্দুরের ৯ ফুটবলার। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে অপরাজেয় থেকে গত মঙ্গলবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বাড়ি ফিরেছেন গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।
কিন্তু বাড়ি ফেরার একদিন পরেই সেই আনন্দ যেন ফিকে হয়ে গেছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রীষ্মকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে কুমিল্লা যাচ্ছে কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়।
এ প্রতিযোগিতায় নিজেদের বিদ্যালয়ের হয়ে খেলতে সানজিদা-মার্জিয়া-তাসলিমা ও তহুরাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিদ্যালয়ে নিজেদের অভিভাবকসহ ডেকে আনা হয় ওই ৯ নারী ফুটবলারকে।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক তাসলিমা বলেন, ‘শিক্ষকদের তলবে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে তারা গিয়েছিলেন নিজেদের বিদ্যালয়ে। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাফুফে আমাদের সংবর্ধনা দেবে। এ জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর আমাদের ঢাকায় যেতে হবে। সাফ ফুটবলের ক্যাম্পও শুরু হবে ক’দিন বাদেই। এ সব বিষয় তুলে ধরলে উল্টো আমাদের শরীরচর্চা শিক্ষক জোবেদ আলী ক্ষেপে যান।
আমাদের অভিভাবকদের বলেছেন, বন্ড সই দিয়ে আপনাদের মেয়েদের নিয়ে যান। ওরা আর কোনদিন স্কুলে পড়া তো দূরের কথা, নাম নিলেই ওদের জুতাপেটা করে দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। ’
উদ্বিঘ্ন তাসলিমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সামনে আমাদের কয়েকজনের টেস্ট পরীক্ষা। যদি আমাদের রেজিস্ট্রেশন না করে টিসি দিয়ে দেয় তাহলে তো আর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হবে না। ’
সেরা এগারতে খেলা গোলকিপার মাহমুদা আক্তারও করেন একই অভিযোগ।
তাসলিমার বাবা সবুজ মিয়া’র অভিযোগ করে বলেন, ‘না খেললে আমগর মেয়েগরে বিদ্যালয় থেইক্ক্যা বাইর কইরা দিবার হুমকি দিছে জোবেদ স্যার। আমারেও মারপিট করছে। আমি পুলিশরে জানাইছি। ’
একই রকম কথা জানিয়ে নাজমার বাবা আবুল কালাম বলেন, ‘মাস্টাররা আমগরে ডাইক্যা নিয়া অপমান করছে। মাইয়াগরে বহিষ্কার করবার হুমকি দিছে। ’
অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক জোবেদ আলী তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলম জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে ধরতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে ধরতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬
এমএএএম/এমজেএফ/
** অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দলের তাসলিমার বাবাকে মারধর