ঢাকা: নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজার অন্ধভক্ত মেহেদী হাসান। সঙ্গে তার তিন বন্ধু রাফি, মারুফ ও পলাশ।
শনিবার ( ১ অক্টোবর) মাশরাফির নেতৃত্বে যে ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ, সেই ম্যাচেও মাঠে উপস্থিত ছিলো চার বন্ধু। তবে চার বন্ধুর মধ্যে হঠাৎই এমন এক কাণ্ড করে বসলেন মেহেদী, যে তাকে নিয়ে আলোচনা আজ দেশজুড়ে।
শনিবার খেলা চলার সময় মাঠে ঢুকে প্রিয় মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে ‘মোলাকাত’ করে রাতারাতি ‘টক অব দি টাউনে’ পরিণত হয়েছেন মেহেদী।
তারুণ্যের উচ্ছ্বাসেই হোক কিংবা প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’ এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের হেতু থেকেই হোক, বিষয়টিকে অবশ্য ভালোভাবে নেয়নি বেরসিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলাফল হিসেবে রাতটা মিরপুর থানার হাজতখানাতেই কাটাতে হয়েছে তাদের।
অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাতের মধ্যেই দফায় দফায় কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের।
হাজতখানায় তাদের সঙ্গে একই লকআপে আটক ছিলেন এক ব্যক্তি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)। শনিবার রাতে ছাড়া পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের হাজতখানায় চার বন্ধুর ‘অভিজ্ঞতা’র বিষয়টি খোলাসা করেন তিনি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মেহেদীসহ চার বন্ধুকে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে মিরপুর মডেল থানায় নিয়ে আসা হয়। থানার হাজতখানায় তাদেরকে কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শুধু তাই নয় এর মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার কারণে দশজন পুলিশ সদস্যকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
মাশরাফির এই অন্ধ ভক্তদের বাড়ি সাভারে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সবাই সাভারে থাকে। শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে আসে তারা। কিন্তু টিকিট না পাওয়ায় কালোবাজারে টিকিট কেটে ভিআইপি গ্যালারিতে প্রবেশ করেন। তারপর চার বন্ধু মিলে ভিআইপি গ্যালারিতে বসে বার্গার খায়। এ সময় মেহেদী বন্ধুদের বলতে থাকে কিছুক্ষণ পর সবাই একটা ম্যাজিক দেখবে। কিন্তু ম্যাজিকটা যে কি সেটা অপর তিন বন্ধু বুঝে উঠতে পারেনি তখনও।
এর মধ্যেই বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের ২৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি মাত্রই শেষ করেছেন তাসকিন। ফিরছিলেন বোলিং মার্কে। হঠাৎ গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের গ্যালারি থেকে দৌড়ে এসে মাঠে ঢুকে যান মেহেদী। মুহূর্তেই খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, মাঠের মধ্যে দৌড়ে গিয়ে টাইগার দলপতি মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। অবশ্য মাশরাফি প্রথমে ভক্তের কাণ্ড দেখে হতবাক হলেও পরে ভক্তকে জড়িয়ে ধরেন। এর মধ্যে ছুটে আসেন মাঠে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা। তারা মেহেদীকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যান। তবে মেহেদীকে কিছু না করার জন্য নিরাপত্তাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান টাইগার দলপতি মাশরাফি। মাশরাফি বলেন, ‘সে আমার বড় ভক্ত। তাকে যেন কিছু না বলা হয়’।
মাশরাফির এই ‘পাগল’ ভক্ত মেহেদী হাসান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া বন্ধু মারুফ, রাফি ও পলাশ এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে খোঁজ নিতে শনিবার (১ অক্টোবর) গভীররাতে মিরপুর মডেল থানায় গেলে দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাতে শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে মেহেদীসহ চারজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তারা সবাই এক অপরের বন্ধু বলে জানা গেছে। ’
মেহেদী হাসানসহ তাদের সঙ্গে কথা বলা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখন কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মেহেদীসহ তার বন্ধুদের কয়েক দফায় থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই সে একটি উত্তর দিচ্ছে‘ সে মাশরাফির অন্ধভক্ত’। এছাড়া অন্য আর কোনো কিছুই তাদের থেকে জানা যায়নি।
তবে মেহেদীসহ তার বন্ধুদের ছেড়ে দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার পক্ষে কিছুই বলা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২,২০১৬
এসজে/আরআই