ঢাকা: কিছুক্ষণ আগেই বিদ্যুৎ চলে গেছে। জেনারেটরও নেই।
এমন স্বল্প আলোতে আর যাই হোক টেবিল টেনিস খেলা অসম্ভব। কেননা টেবিলে টেনিসের লাইনগুলো সরু এবং নেট ছোট হওয়ায় পয়েন্ট কাউন্টের জন্য আলোর পর্যাপ্ততা খুবই জরুরী। তারপরেও দেখা গেল সেই সীমাবদ্ধতাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মোবাইলের আলোয় বেশ কয়েকজন তরুণ খেলে যাচ্ছেন।
আলো বলতে কিছুই নেই, তারপরেও ওদের সার্ভিস, স্ম্যাশ, টেকনিক দেখে মনেই হচ্ছিল না বিদ্যুৎ নেই। যেন অন্ধকারেও ওরা সাবলিল, ইনডোরের সাময়িক এই অন্ধকার ওদের প্রবল ইচ্ছে শক্তির সামনে বারবারই হার মানছিল। বলছিলাম কতিপয় অদম্য তরুণের কথা যারা এসেছেন শেখ রাসেল স্কুল টেবিল টেনিসের প্রথম আসরে অংশ নিতে।
এমন অভানীয় দৃশ্য দেখে কৌতুহল ধরে রাখা গেল না। তাই কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম অন্ধকারে খেলতে সমস্যা হচ্ছে না? ‘হ্যা, একটুতো হচ্ছেই। কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ বিদ্যুৎ এলেই আমাদের ম্যাচ শুরু হবে। তাই অন্ধকারেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা কোন ব্যাপারই না। ’ বললেন বিকেএসপি থেকে ছেলেদের এককে টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া নাজমুল।
বিকেএসপির ছাত্র নাজমুল গত দু’দিনে ম্যাচ খেলেছেন ৫টি কিন্তু এই পর্যন্ত একটি ম্যাচ তো অনেক দূরের কথা, হারেননি একটি সেটও। বিদ্যুৎ এলে যে ম্যাচটি তিনি খেলবেন সেখানে জিততে পারলেই উঠে যাবেন সেমিফাইনালে।
নাজমুল বিকেএসপি’র দশম শ্রেনীর ছাত্র। ওখানে টেবিল টেনিসেই ভর্তি হয়েছেন। ভবিষ্যতেও নিজেকে সফল একজন টেবিল টেনিস প্লেয়ার হিসেবেই দেখতে চান। তার বাবার স্বপ্ন ভবিষ্যতে তিনি অলিম্পক জিতবেন। কিন্তু এদেশে খেলাটির যে অবস্থা তাতে স্বপ্ন পূরণে তিনি কতটুকু সফল হবেন সেটি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তার দিন যাচ্ছে!
এ ব্যাপারে নাজমুলের ভাষ্য, ‘আমাদের দেশে টেবিল টেনিস ভীষণ অবহেলিত। বছরে খুব কম টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্ট আয়োজন করা না হলে আমরা খেলতে পারবো না। চার বছর যাবৎ আমি বিকেএসপিতে কিন্তু এটাই আমার প্রথম কোনো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট। একাডেমিতে আমরা সারাদিনই খেলি কিন্তু বছরে কোন টুর্নামেন্টই পাই না। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র যে টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে আমার মতে বছরে ১০টি এমন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা উচিত। ’
কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখা গেল আরেকদল তরুণ সেই অন্ধকারে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। ওরা এসেছে রাজধানীর সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে। ওদেরও ইচ্ছে এই টুর্নামেন্টে ভালো কিছু করার। প্রথমবারের মতো এমন টুর্নামেন্টে সুযোগ পেয়েছেন তাই হাতছাড়া করতে চাইছেন না।
তবে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বলেই প্রতিযোগিতায় ফিরতে অন্ধকারের ভেতরেও অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন রিফাত নামের এক ছাত্র, ‘চরম ইচ্ছে শক্তি থাকলে জীবনে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। ’
হ্যাঁ, এমন সত্যকে পাথেয় করেই ওরা অন্ধকারকে তুচ্ছজ্ঞান করে এগিয়ে চলেছে বিজয়ের পথে। সফলতা হয়তা এই টুর্নামেন্ট দিয়ে নাও আসতে পারে কিন্তু তাতে কি? আজকের এই সাময়িক অন্ধকারের ভেতরের এমন প্রয়াসই আগামীতে ওদের জয়ের আলোয় উদ্ভাসিত করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, ২০ অক্টোবর ২০১৬
এইচএল/এমআরএম