ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

ঈশ্বরদীতে দুই যুগ পর নৌকাবাইচ, মাসব্যাপী উৎসবের আমেজ

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
ঈশ্বরদীতে দুই যুগ পর নৌকাবাইচ, মাসব্যাপী উৎসবের আমেজ ঈশ্বরদীতে চলছে নৌকাবাইচের মাসব্যাপী মহড়া। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা (ঈশ্বরদী): পদ্মানদীর তীরজুড়ে সারি সারি গণজমায়েত। দলগুলোতে রয়েছে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর ও আবাল-বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ। বসেছে ছোট ছোট হরেক রকমের দোকান। বাড়িতে বাড়িতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছে আত্মীয়-স্বজন। এলাকার ঘরে ঘরে চলছে উৎসবের মিষ্টি আমেজ। 

বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর গড়াতেই জমায়েত বাড়তে থাকে পদ্মাপাড়ে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মাইক বাঁধা, বাঁশির ভূ-ভূ শব্দ আর হরেক রকমের সুরেলা বোল (আঞ্চলিক শব্দ অর্থাৎ বচন) নিয়ে চলছে নৌকা বাইচের মাসব্যাপী মহড়া।

এ উপলক্ষে পদ্মানদীতে শোভা পাচ্ছে নানা নামে নৌকা, রং-বেরংয়ের পোশাকে সজ্জিত হয়ে খেলোয়াড়রা নৌকাবাইচে অংশ নিচ্ছে।  

যদিও এ প্রতিযোগিতার আরও একদিন বাকি। তারপরও প্রতি দিনই পদ্মানদীর তীরে জনসমাগম বাড়ছে। আর সে কারণেই এবার প্রতিযোগিতাটি ‘গণ আনন্দ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা পদ্মানদীর তীরে গিয়ে দূর থেকে শোনা যায় নৌকাবাইচে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের নানা রকম বোল। সোনার বাংলা, সোনার তরী, মায়ের দোয়া পঙ্খীরাজ, ময়ূরপঙ্খী, বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস ফাইটারসহ বিভিন্ন নামে দেওয়া হয়েছে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নৌকাগুলো নাম। আর নৌকায় উড়ানো হয়েছে লাল-সবুজের পতাকা। নৌকার লগি বৈঠা (হাল) ধরে এক সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে ‘বল বল বল বল রে, আল্লাহ বল রে’, ‘হেইয়া রে হেইয়া বল’ ‘আয়ছি মেলায় খেলবো খেলা, দোয়া করো ভাই’ ‘শেখ হাসিনার নৌকা, জিতবে বারে বার’সহ এ ধরনের নানা রকম বোল।  

ওই পল্লি চিকিৎসক ইউনুছ আলী বাংলানিউজকে বলেন, নৌকাবাইচ একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। বিগত ২৬ বছর পর আবার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এতে এলাকায় উৎসবের আমেজ চলছে।

লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ও নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার অন্যতম তত্ত্বাবধায়ক জিয়াউল ইসলাম জিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এলাকাতে সুস্থ বিনোদনের অভাব রয়েছে। প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় ঈশ্বরদীর আশেপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিনই নারী-পুরুষ প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি দেখতে আসছে। দুপুরের পর থেকে শুরু হয়ে সূর্য অস্তমিত যাওয়া পর্যন্ত এ প্রস্তুতি চলে।

লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নৌকাবাইচ একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। ২৫ থেকে ২৬ বছর আগে এ এলাকায় নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। কিন্তু নানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এবার তা ‘গণ আনন্দ নৌকাবাইচ’ নামে শুরু করা হয়েছে। এলাকার সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সাড়া পাওয়া গেছে। এলাকায় উৎসবের আমেজ লেগেছে।

নৌকাবাইচের প্রধান আয়োজক লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরিফ বাংলানিউজকে জানান, নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা এ এলাকার মানুষের প্রাণের উৎসব ছিলো। পদ্মাপাড়ের মানুষ নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা মাঝি-মাল্লার কাজ করে। তাদের দাবির কারণেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এ প্রতিযোগিতাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অসন্তোষের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। বর্তমানে লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের মানুষ শান্ত হয়ে গেছে। সবদিক থেকে মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, আগামী শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় উপস্থিত থাকবেন- ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ, পাবনা জেলা প্রশাসক (ডিসি), পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশের সার্কেল, ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা।

সুস্থ বিনোদনের অভাব থাকায় এলাকাবাসী এ খেলাকে দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। উপভোগ করতে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছে পদ্মাপাড়ে। এবারের প্রতিযোগিতাটি যদি এলাকাবাসী সুস্থ ও সুন্দরভাবে সমাপ্ত করে, তাহলে এর ধারাবাকিতা ধরে রাখা যাবে বলে আশাবাদী চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরিফ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।