চট্টগ্রাম: মুজিববর্ষ উপলক্ষে আগামী ১ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস’। গেমসকে সামনে রেখে প্রস্তুতি সেরেছে অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন।
বাংলানিউজ: আসন্ন বাংলাদেশ গেমস নিয়ে ফেডারেশনের পরিকল্পনা কি?
আবদুর রকিব মন্টু: এবারের ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের’ অ্যাথলেটিক্স ডিসিপ্লিনটি অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। ইভেন্টটি ফেডারেশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গেমসের মাধ্যমে আগামীর আন্তর্জাতিক ইভেন্টের জন্য অ্যাথলেটদের তৈরি করা হবে। সামনে সাফ গেমস, ইসলামিক গেমস সহ আন্তর্জাতিক অনেক ইভেন্ট রয়েছে। যেখানে অ্যাথলেটরা লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বাংলাদেশ গেমসে ভালো ফলাফল করা অ্যাথলেটদের সুযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার।
বাংলানিউজ: দায়িত্ব নেওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি ছিল?
আবদুর রকিব মন্টু: আমরা যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করি তখন পুরো ফেডারেশন অনেকটাই দুর্বল অবস্থায় ছিল। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ শুরু করি আমরা। অদক্ষতা এবং পরিকল্পনা না থাকার কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফেডারেশন কালো তালিকাভুক্ত ছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করি। তাছাড়া দেশের খেলোয়াড়রা কোনো খেলা পায়নি, পরিকল্পনার অভাবে ফেডারেশনের ৮০ লাখ টাকার ওপরে উন্নয়ন বাজেট ফেরত চলে যায়।
বাংলানিউজ: আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ফেডারেশনে কি কি পরিবর্তন এসেছে?
আবদুর রকিব মন্টু: খেলা পরিচালনা করার মতো কোনো অভিজ্ঞ লোক ছিল না আমাদের। বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২৫ জন অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বমানের ফেডারেশন তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলানিউজ: তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহে আপনাদের পরিকল্পনা কি?
আবদুর রকিব মন্টু: একটি বড় ফেডারেশন বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে বহির্বিশ্বে তার ঐতিহ্য ধরে রেখে অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু গড়ে তোলা বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও প্রান্তিক পর্যায় থেকে খেলোয়াড় তুলে এনে ট্রেনিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। অন্য বিভাগগুলোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে যারা ভালো করবে তাদেরকে নিয়ে আমরা ঢাকায় একটি জাতীয় ক্যাম্প করবো। সেখান থেকে ভালো ক্রীড়াবিদ বাছাই করা হবে, যারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
বাংলানিউজ: এখন পর্যন্ত আপনাদের অর্জন কি?
আবদুর রকিব মন্টু: দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সভাপতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করার কারণে গালা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। শুধু তা-ই নয় বিভিন্ন দেশে খেলায় অংশগ্রহণ করার কারণে এশিয়া অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির দুটি সাংগঠনিক পদেও আমাদেরকে রাখা হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে ফান্ডের পরিমাণও। বাৎসরিক ১৫ হাজার ডলার ছাড়াও ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে এসেছে অতিরিক্ত ২৫ হাজার ডলার। আগে ফেডারেশনের ফান্ডে জমা ছিল মাত্র ২৭ লাখ টাকা। আর বর্তমানে এক কোটি ৬৫ লাখ টাকার ফান্ড হয়েছে।
বাংলানিউজ: খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিতে আপনাদের পরিকল্পনা কি?
আবদুর রকিব মন্টু: আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার। শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে খেলাধুলাকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং খোলোয়াড়দের জন্য খেলার কোটা অন্তর্ভুক্ত করা। তাছাড়া চাকরির ক্ষেত্রেও কোটা পদ্ধতি চালু করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলানিউজ: করোনা পরিস্থিতিতে ফেডারেশনের ভূমিকা কি ছিল?
আবদুর রকিব মন্টু: করোনা পরিস্থিতিতে দুস্থ ক্রীড়াবিদদের পাশে দাঁড়িয়েছে ফেডারেশন। আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার একটি ফান্ড তৈরি করেছিলাম। করোনায় মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয়নি তখন আমরা সাহায্য নিয়ে সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। পাশাপাশি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও আমরা আর্থিক সহায়তা পেয়েছি, যা ক্রীড়াবিদদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক ও অফিসিয়ালদের জন্য ভার্চুয়াল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
বাংলানিউজ: আগামী দিনগুলোতে ক্রীড়াপঞ্জিতে খেলা বাড়ানো কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
আবদুর রকিব মন্টু: করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২০২০ সালে ৩৬তম জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগীতা ও ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৪৪তম জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার সফল আয়োজন সম্পন্ন হয়। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশকে সবার সামনে তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা ম্যারাথন আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২১
এসএস/এমএম/এসি/টিসি