ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

বসুন্ধরা এমডিকে আজীবন সদস্য পদ ও সংবর্ধনা দিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
বসুন্ধরা এমডিকে আজীবন সদস্য পদ ও সংবর্ধনা দিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব

কলকাতা: বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিশিষ্ট ক্রীড়াপ্রেমী ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরকে সংবর্ধনা দিয়েছে ভারতের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল। একইসঙ্গে তাকে ক্লাবটির আজীবন সদস্য করা হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কলকাতায় এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর সহধর্মিনী সাবরিনা সোবহান।

সংবর্ধনায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে সোবহান দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্লাবের লাল-হলুদ জার্সি, উত্তরীয়, ক্লাবের গোল্ড কয়েন, ফলের বাস্কেট, কলকাতার নানা স্বাদের মিষ্টি, বাংলার পাঞ্জাবি ও শাড়ি।

অনুষ্ঠানে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, আপনাদের আন্তরিকতা আমাকে শুধু মুগ্ধ করেনি, আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আপনারা কিনে নিয়েছেন। আমিও বাংলাদেশে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এখানে অনেকবার শুনছি এপার বাংলা-ওপার বাংলা। আসলে বাংলাতো একটাই, ভাষাতো এক, মানুষগুলো তো এক, শুধু মাঝখানে একটা লাইন এসে গেছে। তাই বলে খেলা বন্ধ থাকবে? আসুন বাংলাকে খেলাধুলার মাধ্যমে এক করি। আমি চাই শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের খেলা হোক। আমি আশা করব, ক্লাবের কর্মকর্তারা আমার প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। খেলার পুরো স্পন্সর বসুন্ধরা করবে।

এরপর শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সঙ্গে কলকাতাবাসীর পরিচয় করাতে গিয়ে তিনি বলেন, শেখ রাসেল হলেন বাংলাদেশের জাতির পিতার সন্তান। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা। উনি আমাকে এই ক্লাবের দায়িত্ব দিয়েছেন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।  

বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে যা বলবেন সব করে দেবো। আপনারা আন্তরিকতা দিয়ে আমাকে কিনে নিয়েছেন।

এ সময় ইস্টবেঙ্গলের সভ্য-সমর্থকরা তাকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।  

ক্লাব কর্মকর্তা নীতু সরকার বলেন, ওনার শব্দ চয়ন আমাকে মুগ্ধ করেছে। ভারতের ফুটবল ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সিডিউল ম্যাচ করলে নিশ্চয় বাংলাদেশে গিয়ে খেলব। আগামী দিনে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র এবং ইস্টবেঙ্গলের কী সমন্বয় ঘটে তা পরে জানতে পারবেন। এখনই সবকিছু বলবো না।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সচিব কল্যাণ মজুমদার, ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট শান্তিরঞ্জন দাসগুপ্ত, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি ইমরুল হাসানসহ বিশিষ্টজনরা।  

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরার ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের গণমাধ্যমগুলোর ঊর্ধ্বতনরা।  

ভারতের ইতিহাসে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গুরুত্ব
ভারতের ইতিহাসে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯২০ সালের ১ আগস্ট অধুনা পূর্ববঙ্গের আবেগের স্ফুলিঙ্গ থেকে জন্ম নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। সুরেশ চন্দ্রচৌধুরী, শৈলেস বসু ও নসা সেন- এই তিন পূর্বপুরুষের হাত ধরে শুরু হয়েছিল খেলার মাঠে পূর্ববঙ্গের অস্তিত্ব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই। দল প্রথম মাঠে নামে ১১ আগস্ট হারকিউলিস কাপে। তখন পূর্ববঙ্গের বহু বিত্তবান মানুষ ছিলেন শহর কলকাতায়। আবেগী স্রোতে ভেসে যেতে এগিয়ে আসেন তারাও।

তার ঠিক একবছর পর ইস্টবেঙ্গল ক্লাব মোহনবাগানের সঙ্গে ভাগাভাগি করে চলে আসে ময়দানে। যা বর্তমান ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এরপর ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদন পাওয়া এবং কলকাতা ফুটবল লিগের প্রস্তুতি। জন্ম নেয় ঘটি-বাঙালের লড়াই। ১৯২৫ সালে ইস্টবেঙ্গল সুযোগ পায় প্রথম ডিভিশনে খেলার। সুযোগ পেয়েই হারায় মোহনবাগান দলকে।

মাঠের বাইরে বাঙালদের হেয় করার জবাব প্রথমবার ফুটবলের মাধ্যমে দেয় ইস্টবেঙ্গল। ঘটিদের কৌলিন্যে সেটাই ছিল প্রথম এক সজোরে আঘাত। এরপর মাঠের বাইরে ফুটবল রাজনীতিতে জর্জরিত হয়ে ইস্টবেঙ্গলকে নেমে যেত হয় প্রথম ডিভিশন থেকে। সভ্য-সমর্থকরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে হাতে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে। সেই প্রতিবাদের মশালই পরে হয়ে ওঠে ক্লাবের প্রতীক।

১৯৩১ সালে আবার ক্লাব উঠে আসে প্রথম ডিভিশনে। এরপর ভারতের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে প্রভাব বিস্তার করে ইস্টবেঙ্গল। চীনের অলিম্পিক দলকে হারানোর পর ইউরোপ সফরে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। পরপর জেতা এবং ড্র, খালি পায়ে ইস্টবেঙ্গলের লড়াই দেখে গোটা ইউরোপ বিস্মিত হয়ে যায়।

এরপর ৭০-এর দশকে শুরু হয় ইস্টবেঙ্গলের সোনালী যুগ। খানসেনাদের অত্যাচারে যখন বাংলাদেশের মানুষ শরণার্থী হয়ে আসতে শুরু করে কলকাতায়। তখন হাজারো কষ্টে, ব্যথা-বেদনায় সে সময় তাদের একমাত্র বিনোদন ছিল এই ইস্টবেঙ্গলের খেলা। সভ্য-সমর্থকদের দেশ ছাড়ার ক্ষোভ প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে এই ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। দর্পে-গর্বে-প্রতিবাদে, ইতিহাসের পাতায় ক্লাবটি পাকাপাকি জায়গা করে নেয়। শতাব্দী প্রাচীন সেই ক্লাবের বিরামহীন আজও পথচলা।

প্রতিবাদের আগুন থেকে তৈরি ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা আজও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, ‘মাছের রাজা ইলিশ আর খেলাতে ফুটবল, সেই খেলাতে সেরা দল আমার-তোমার-সবার ইস্টবেঙ্গল। ’ 

সেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাব এই প্রথম বাংলাদেশের বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি ক্রীড়াপ্রেমী সায়েম সোবহান আনভীরকে সম্মান জানালো।

খেলাধুলার মাধ্যমে দুই বাংলার মিলনের ডাক বসুন্ধরা এমডির

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
ভিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।