ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

বাংলাদেশিদের চিৎকারে আনন্দের কান্না পেয়েছিল তাদের

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২২
বাংলাদেশিদের চিৎকারে আনন্দের কান্না পেয়েছিল তাদের

সিলেট থেকে: মাথায় হিজাব, পরনে জার্সি। নারী এশিয়া কাপে সাত দল খেলছে, অনেক অনেক ক্রিকেটার তবুও মালয়েশিয়ার মেয়েদের আলাদা করা সহজ।

শারীরিক গড়ন প্রায় সবারই কম। অল্প বয়সের ছাপও মুখে স্পষ্ট। এশিয়া কাপ তাদের জন্য একরকম ‘শিক্ষা সফর’।

এমনিতে মালয়েশিয়ার মেয়েদের অভিষেক ২০০৬ সালে। প্রায় দেড় যুগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায়। শুরুটাও হয়েছিল স্বপ্নের মতো করে, সিঙ্গাপুরকে ৫৮ রানে হারিয়ে। ২০১৭ তে এসএ গেমস জেতার পর মিলেছে টি-টোয়েন্টি স্ট্যাটাস।

এশিয়া কাপে এসে অবশ্য দেখা মিলছে না ভালো কিছুর। পাকিস্তানের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে গেছে তারা। তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না। ভারত ম্যাচের টসের সময় মালয়েশিয়ান অধিনায়ক উইনিফ্রড দুরাসিঙ্গাম জানিয়ে দিলেন, হরমনপ্রীতদের বিপক্ষে খেলাটাও তাদের জন্য বড় ব্যাপার।

মাঠেও দেখা গেল তার ছাপ। ভারতের উইকেট গেল চারটি, প্রতিটির পরই দেখা মিলল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, দৌড়ে যেন আকাশ ছুঁতে চাইলেন কেউ কেউ। বোঝা গেল উইকেটের চেয়ে তাদের কাছে ‘ভারতের কেউ আউট’ ব্যাপারটাই জরুরি।  

ম্যাচ শেষে অটোগ্রাফ, পরামর্শ যে যা পারলেন, তা কেড়ে নিলেন মালয়েশিয়ার মেয়েরা। ম্যাচ শেষে শুধু নিজের কথাটুকু বললেন দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা মাশ ইলায়শা, ‘আমি জেমাইমার কাছে ব্যাটিংয়ের টিপস চেয়েছিলাম। ও আমাকে ভালো উপদেশ দিয়েছে। আমি সেটা গ্রহণ করা শেখার চেষ্টা করবো। ’

মালয়েশিয়ার মেয়েদের রোমাঞ্চের সমুদ্রের ভেতর আবেগে ভাসিয়েছে বাংলাদেশের কিছু মানুষ। সিলেট আউটার মাঠে চেয়ার সাজানো গ্যালারি আদতে নেই। সবুজে ঢেকে যাওয়া উঁচু উঁচু টিলাতে বসেই দেখতে হয় খেলা।  

ভারত ম্যাচের বেশির ভাগ সময়জুড়েই ভেসে এলো ‘মালয়েশিয়া’, ‘মালয়েশিয়া’ চিৎকার। তাদের সমর্থন কানে বেজেছে ওই দেশের মেয়েদের। সংবাদ সম্মেলনে সমর্থনকে মনে করিয়ে দিতেই মাশা বলেন, ‘আমাদের কান্না পেয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ মালয়েশিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে! তাদের প্রতি আমাদের অনেক কৃতজ্ঞতা!’

শেষ করি একটা ছোট্ট আক্ষেপের গল্প বলে। ভারতের ব্যাটারদের সঙ্গে পেরে উঠবে না মালয়েশিয়া, এটাই নিয়তি। ভারত সে পথে এগিয়েও যাচ্ছিল খুব ভালোভাবে। ১৭ ওভার শেষে ১ উইকেটে হারিয়ে ১৫৮ রান করে ফেলেছিল ভারত।

১৮তম ওভারে এলেন নূর দানিয়া। প্রথম বলে তাকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হলেন শেফালি ভার্মা। এরপরের বলেই তিনি ফেরালেন কিরান নাভগির। এক লাফে যেন চাঁদেই চলে যেতে চাইলেন নূর!

কিন্তু নিয়তি তাকে আবার নামিয়ে আনলো মাটিতে। তার এক বল পরই নূরের ওই ওভারে ক্যাচ ছাড়লেন মাশা। সহজ ক্যাচই। তবুও নূর একটুও রাগলেন না, উলটো আঙুল দেখিয়ে বোঝালেন, ‘ঠিক আছে’।

ক্যাচ ছাড়ার পরের কথোপকথন শুনতে চাইলে নূর বলেন, ‘আমি তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। এরপর বলেছি ঠিক আছে আবার বল করো, হয়তো আরেকটা উইকেট পেয়ে যাবে। ও কী বলল? বলেছে, হ্যাঁ ঠিক আছে, পেয়ে যাবো!’

ক্রিকেট তো এমনই। আকাশে তুলে দেয় আনন্দে। আক্ষেপে জ্বালায়। হাসায়, রোমাঞ্চিত করে প্রতিপক্ষের নাম দেখেও। মালয়েশিয়া-ভারত ম্যাচ দেখালো অনেক কিছু। হাজার মাইল দূরে এসেও অপরিচিত মানুষদের ভালোবাসায় কান্নার দৃশ্যও!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২২
এমএইচবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।