‘এই তো প্রেম’। কয়েক বছর ধরেই কাগজে-কলমে ছিলো ছবিটি।
শাকিব খান ও বিন্দুর চুক্তিবদ্ধ হওয়া
২০০৯ সাল। সোহেল আরমান তখন মাত্রই ছবির কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখে শেষ করেছেন। এফডিসিতে মহাব্যস্ত শাকিব। তাই তার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো সোহেলকে। কাজের বিরতিতে পরিচালকের গাড়িতে উঠে শাকিব বললেন, ‘ছবির কাহিনীটা শুনি। ’ হাতে সময় অল্প। সোহেল আরমান বললেন, ‘আমার মনে আছে, মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য কাহিনী শোনার জন্য এসেছিলেন শাকিব। কাহিনী শোনার পর কিছুক্ষণ পরপর তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো- ‘তারপর!’ এদিকে কাজের তাড়া দিতে অনেকে ডাকলেও শাকিব তাদেরকে গাড়ির ভেতর থেকেই ইশারায় জানিয়ে দেন- ‘আসছি। পুরো গল্প শোনার পর সূর্য ডুবে যাচ্ছিলো। গল্পটা শেষ হতেই শাকিবের চোখ ছলছল করলো। তার সময় পাওয়া অনেক মুশকিল ছিলো তখন। তবুও শাকিব বললেন, ‘ছবিটিতে কাজ করতে চাই। ’
এদিকে বিন্দু তখন খিজির হায়াত খানের ‘জাগো’ ছবিতে অভিনয় করছিলেন। পাশাপাশি সোহেল আরমানের ধারাবাহিক নাটক ‘নাইওর’-এর কাজও ছিলো তার হাতে। কাজের ফাঁকে প্রায়ই ছবির গল্পটা বিন্দুকে বলতেন সোহেল। একদিন ‘জাগো’ ছবির সেটে তাকে প্রস্তাব দেওয়ার পর সবার সামনে তিনি মুচকি হেসে বলে দেন, ‘আমি অবশ্যই কাজটা করবো। ’
আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই
এ গানই ‘এই তো প্রেম’ ছবির প্রাণ। সুর ও সংগীত পরিচালনায় হাবিব। তিনিই এতে কণ্ঠ দিয়েছেন ন্যান্সিকে নিয়ে। পরিচালক সোহেল আরমানই লিখেছেন গানটা। হাবিবের সঙ্গে আলোচনা চ‚ড়ান্ত করার পর বাসায় খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়েন তিনি। কিন্তু একের পর এক লাইন লিখছেন আর কেটে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছিলেন কাগজগুলো। এভাবে হয়ে যায় অনেক রাত। হঠাৎ তার মা (সুরাইয়া আক্তার চৌধুরী) এসে একটি কাগজ উঠিয়ে দেখেন গানের প্রথম কয়েকটি লাইন এমন- ‘আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই/ আমায় কতোটা ভালোবাসো সেকথা জানতে চাই। ’ এই লাইনটা পড়ার পর মা বললেন, ‘এই গানটা লিখ। আমার মনে হয় ভালো হবে। ’ এরপর তার আশীর্বাদ নিয়ে গানটি লেখা শেষ করেন সোহেল আরমান।
* ‘আমি তোমার মনের ভেতর’ গানের ভিডিও :
গানের দৃশ্যধারণের জন্য জরিমানা
‘আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই’ গানটির দৃশ্যধারণের জন্য নির্বাচন করা হয় মানিকগঞ্জের একটি গ্রামের সর্ষে ফুলের ক্ষেত। তাদেরকে সহায়তা করার আশ্বাস দিলেন কৃষক মোস্তফা। দৃশ্যধারণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। ক্যামেরা প্রস্তুত হতেই গ্রামের শত শত লোক শাকিব ও বিন্দুকে দেখতে ভিড় জমায়। এ কারণে নষ্ট হয়ে যায় সর্ষে ফুলের ক্ষেত। এরপর অনুরোধ করে সবাইকে বলেকয়ে কাজ শেষ করার পর দেখা গেলো, ক্ষেতের অনেক সর্ষে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে জরিমানা দিতে হয়েছে ক্ষেতের মালিকের কাছে। শাকিব বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে যে এতো মানুষের দেখা পাবো বুঝিনি। কাজ শুরুর আগে মানুষ কোথা থেকে যেন স্রোতের মতো আসছিলো!’
‘তোমায় আমি জোৎস্না দেবো’ গানের সময় যা ঘটেছিলো
পরিচালনা আর গান লেখার পাশাপাশি ছবিটিতে কোরিওগ্রাফার হিসেবেও কাজ করেছেন সোহেল আরমান। ‘তোমায় আমি জোৎস্না দেবো’ গানে বিন্দুকে তিনি সব বুঝিয়ে দেন। এর দৃশ্যধারণও হয় মানিকগঞ্জে। তখন অনেক শীত। সম্ভবত ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ছবিটির প্রধান চিত্রগ্রাহক স্বপন এবং অন্য অনেককে পানিতে ভিজে ভিজে কাজ করতে হয়েছে। গানটি গেয়েছেন ন্যান্সি।
শাকিব-বিন্দুর প্রথম শট
২০১০ সালে এ ছবির প্রথম দৃশ্যায়ন হয়। মানিকগঞ্জের কৈরি গ্রামের একটি হিজল গাছের নিচে শাকিব খান ও বিন্দু প্রস্তুত। সেখানে এক বিলের মাঝে কচুরিপানা, মাঝ দিয়ে চলে গেছে সরু মেঠোপথ। গানের শুরুতে শাকিব ও বিন্দু মেঠোপথ দিয়ে চলে যান। কিন্তু কেউই জানতেন না, গ্রামের বাসিন্দারা চলাফেরার সুবিধার্থে বানানো হয়েছে এটি। শাকিব-বিন্দু দু’জনই সুরে সুরে পথ দিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু ফেরার সময় যেখানেই তারা পা দেন, তলিয়ে যায় মাটি! বিলের দু’পাশ পূর্ণ কচুরিপানায়। তাই ইউনিটের লোকজনের সহায়তায় তারা দু’জন ওই পথটা পার হতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫