ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

‘প্রার্থনা’ ঈদের এক নম্বর ছবি: জয়

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
‘প্রার্থনা’ ঈদের এক নম্বর ছবি: জয় শাহরিয়ার নাজিম জয়

আর অল্প ক’টা দিন। ঈদে মুক্তি ‘প্রার্থনা’র।

শাহরিয়ার নাজিম জয়ের পরিচালনায় প্রথম ছবি এটা। এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কথা হচ্ছিলো তার সঙ্গে। মুঠোফোনে। ও-প্রান্তে তিনি খানিকটা অসুস্থ। নেবুলাইজার নেবেন। সাক্ষাৎকার শুরুর আগে বললেন, ‘কতোক্ষণ লাগবে?’ উত্তর- দশ মিনিট। ‘ওকে, শুরু করি তাহলে’ বলে প্রস্তুত হলেন। ফোনোলাপ বলে বোঝা গেলো না, নড়েচড়ে বসলেন কি-না!

বাংলানিউজ: অনেক বছর ধরে অভিনয় করছেন। নাটক নির্মাণ, লেখালেখিও চলছে। ‘প্রার্থনা’ দিয়ে শাহরিয়ার নাজিম জয় চলচ্চিত্র পরিচালক হয়ে উঠলো। প্রার্থনার গল্প- শিশু নির্যাতন, বৃদ্ধাশ্রম, পরকীয়া নিয়ে।   সিনেমা করবেন বলেই কি গল্পটা ভেবেছেন, নাকি আগেই বিষয়গুলো ছিলো আপনার মাথায়?
জয়: সিনেমা করবো বলেই ভেবেছি। কারণ, সিনেমা করার কথা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্লট চিন্তা করছিলাম। অনেক গবেষণা করে আমার মনে হলো, আমি এমন একটা প্লট খুঁজছি, যা নকল নয়। মৌলিক গল্প, আমাদের সমাজের গল্প, যা কেউ আগে কখনও উপস্থাপন করেনি। আমি একটু নতুনভাবে নতুনত্ব নিয়ে উপস্থাপন করেছি। আমার প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে আমিই প্রথম সিনেমার নির্মাতা হলাম। আমার আগের প্রজন্মেও কেউ সিনেমা বানাতে পারেনি। শুধু তৌকীর আহমেদ ছাড়া। চ্যানেল আই আমার গল্প শুনে, মুগ্ধ হয়েই কাজটা করতে দিয়েছে।

বাংলানিউজ: বাসাবাড়িতে শিশু নির্যাতনের যে ব্যাপার, যে ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা, সেটা তো আপনার সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে...
জয়: খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে হয়ে উঠেছে। এটা তো নতুন গজিয়ে ওঠা কোনো সমস্যা নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এবং...

বাংলানিউজ: সে প্রসঙ্গে আসছি। ইদানিং পত্রপত্রিকায় বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে আসছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে জোর প্রতিবাদ উঠছে শিশু নির্যাতন নিয়ে। সবাই কথা বলছে। মানে বিষয়টি নিয়ে মানুষ এখন সচেতন। এটা তো আপনার জন্য খুব ভালো হলো, নাকি?
জয়: এটা তো আমার গল্পকে আরও সমৃদ্ধশালী করলো। সার্থকতা খুঁজে পেলাম। গল্পের সঙ্গে, সমস্যাগুলোর সঙ্গে মানুষ আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হতে পারবে।

বাংলানিউজ: যাদের নিয়ে আপনি কাজ করলেন- তৌকীর আহমেদ, নওশীন, কল্যাণ, মৌসুমী নাগ; তারা তো সবাই টিভি নাটকের। দীর্ঘদিন একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। ‘প্রার্থনা’ করতে গিয়ে কি মনে হয়েছে এটা আলাদা কিছু? মানে কোনো চাপ মনে হয়েছে? যেহেতু এটা সিনেমা।
জয়: আসলে আমি যখন নাটক বানাই, কোনো চাপ মনে হয় না। সিনেমা বানাতে এসেও মনে হয়নি। কঠিন করে যারা ভাবে, চিন্তা করে, সাধারণ জিনিসকে যারা প্যাঁচিয়ে ফেলে বেশি; তাদের এ সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আসলে আপনাকে স্বচ্ছ হতে হবে। অতো কিছু চিন্তা না করে আপনি যদি দর্শকের কথা মাথায় রেখে, সময়টাকে তুলে আনেন, একটা সাধারণ গল্প বলেন, তাহলে দর্শক সন্তুষ্ট হয়। আপনার কাজটাও কম সময়ে হয়ে যায়।

বাংলানিউজ: আর ক’দিন পরেই মুক্তি। রাত পেরোলেই প্রিমিয়ার। ইতোমধ্যে তিনটি গান দর্শক দেখে ফেলেছে। দেখেছে ট্রেলারও। কেমন আশা করছেন?
জয়: আশা করছি, এ ছবি দেখে, আপনারা যারাই দেখবেন তারা নতুন করে সিনেমা নিয়ে ভাবতে শুরু করবেন। এই ভাবনাটি আপনাদের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে পারবো বলে মনে হচ্ছে। আমি তো বলবো যে, ঈদে যেসব ছবি মুক্তি পাচ্ছে; গল্পের দিক থেকে একদম শতভাগ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারি, আমার ছবির আশপাশে কোনো গল্প ঘেঁষতে পারবে না।

বাংলানিউজ: সে আশা করা যেতেই পারে। দৃশ্যধারণে নামার আগে, ছবিটি নিয়ে যে চিন্তাভাবনা ছিলো আপনার, যেভাবে চিত্রনাট্য লিখেছিলেন; তার কতোখানি তুলে আনতে পারলেন?
জয়: শোনেন, আপনাকে একটা কথা বলি, একটি বাণিজ্যিক ছবির প্রি-প্রোডাকশনে যে খরচ হয়; সে টাকা দিয়েই সম্পূর্ণ একটি ছবি বানিয়ে ফেলেছি! এই কৃতিত্ব আমাকে দিতেই হবে যে, এরকম অল্প বাজেটে এমন মানসম্পন্ন ছবি বানানো সম্ভব। এটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে যে, বাংলাদেশের বাজার ছোট। আমরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করছি। কিন্তু টাকা উঠছে না। প্রযোজক হারিয়ে যাচ্ছেন। চলচ্চিত্র শিল্প নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটাকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে, কম বাজেটে ভালো ছবি বানানো।

এখন যারা চার কোটি টাকা দিয়ে ছবি বানাচ্ছে, তারা তো পুরো টাকা তুলতে পারছেন না। লোকে বলে, তাহলে এখানে ব্ল্যাকমানি সাদা করার প্রক্রিয়া চলছে। তাহলে চলচ্চিত্র শিল্পের কী উন্নতি হচ্ছে? চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতি হতে হলে আপনাকে কম বাজেটে ভালো ছবি বানাতে হবে। সেটা করতে গেলে ভালো গল্প লাগবে। আমি আপনাদেরকে এটাই বোঝাতে চাচ্ছি যে, ‘প্রার্থনা’কে যদি একটি আদর্শ ছবি হিসেবে নেন, তাহলে ভবিষ্যতে চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে গেলে এ ধরনের ছবি দরকার হবে।

আজকে আপনি যদি ‘আশিকী’ কিংবা ‘রাজাবাবু’র কথা বলেন, তাহলে এগুলো তো বিশাল বাজেটের। আপনি ‘আশিকী’কে বলবেন, ওইদেশি নায়ক, ভারতীয় সংস্কৃতি ঢুকে যাচ্ছে; এই ছবি সুপার-ডুপার হিট হলে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের কী হবে? নুসরাত ফারিয়া সুপারহিট নায়িকা হবে, এ ছাড়া আর কী হবে?
‘রাজাবাবু’ যে ধরনের ছবি, এ ধারাটা গত পাঁচ বছর ধরে চলছে তো চলছেই। এর মধ্যে আপনি কী নতুনত্ব পাবেন? সে হিসেবে যদি বলেন, তাহলে ঈদের এক নম্বর ছবি ‘প্রার্থনা’।

বাংলানিউজ: গল্পের দিক থেকে?
জয়: হ্যাঁ। বাকিগুলো তো ফ্যান্টাসি। সিনেমা হচ্ছে জীবনের প্রতিচ্ছবি। ঈদে যে ছবিগুলো মুক্তি পাচ্ছে, আমার প্রতিযোগী যারা, সেগুলো তো ফ্যান্টাসি ছবি। এসবের সঙ্গে বাস্তবের কী মিল আছে? আপনি যদি বাস্তবতার প্রতিচ্ছবির কথা আনেন, তাহলে ‘প্রার্থনা’ হচ্ছে সেই ছবি। এটাই একটা পূর্ণাঙ্গ ছবি। অসাধারণ ছবি।

বাংলানিউজ: তৌকীর আহমেদ, নওশীন, মৌসুমী, কল্যাণ- কেমন অভিনয় করলেন সবাই?
জয়: অসাধারণ কাজ করেছেন সবাই। আমার ধারণা সবাই সবার জীবনের সেরা চেষ্টাটা করেছেন। নওশীন, মৌসুমী এরা তো এর আগে অনেক ছবি করেছে; কিন্তু কোনোটাই মুক্তি পায়নি। সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, তাদের চলচ্চিত্রে অভিষেক আমার হাত ধরেই। আর যে বাচ্চা দু’টো অভিনয় করেছে, তারাই ছবির প্রাণ। অসাধারণ কাজ করেছে তারা।

বাংলানিউজ: শুভকামনা ‘প্রার্থনা’র জন্য।
জয়: ধন্যবাদ। প্রিমিয়ারে আসবেন কিন্তু।

বাংলাদেশ সময় : ২১১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ