ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

শুটিং লোকেশনে কিছুক্ষণ

শেষ দৃশ্যের আগেই সিনেমা শেষ!

সোমেশ্বর অলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
শেষ দৃশ্যের আগেই সিনেমা শেষ! ছবি: আফসানা হোসেন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চেনা বাড়িটিকে নতুন ঠেকলো। ভেতরে ছোট্ট চত্বরটিতে একটা দোলনা ছিলো, এখন নেই।

সেখানে এক আঙুল সমান ঘাঁস। নকল ঘাঁস! নকল বলতে অন্য জায়গা থেকে তুলে এনে বসানো হয়েছে। সবুজাভ ব্যাপারটা ঠিকই আছে। ওদিকে তিনতলার ওপরের ছাদ থেকে ঝুলছে লতাপাতা, বেশ লম্বা; দোতলার বারান্দা পেরিয়ে নেমেছে অনেকখানি।

চলছে ক্যামেরার মহড়া। কয়েকবার ক্যামেরায় ধরাও দিলো চরিত্রগুলো। কিন্তু নির্মাতার মনমতো হলো না। এদিকে এক শটে ধরা হচ্ছে নিচতলা ও দোতলার চালচিত্র। চরিত্র হাতেগোনা চারজন। ক্যামেরার অবস্থান ঠিক করতে করতে দুপুর গড়িয়েছে। এর মধ্যে উত্তরার আকাশে ঝকমকে বৃষ্টি! মানে, প্রায় অন্ধকার দুপুরটা যেন বৃষ্টিতে একটু আলোপেলো। গুমোট ও ভ্যাপসা গরম থেকে একটু স্বস্তি। শুরু না হওয়া শুটিং তখন বন্ধ। বৃষ্টির পর কয়েকবারের চেষ্টায় ক্রেনে চেপে আকাশ-মাটি ওঠানামা করে ক্যামেরা যা তুলে আনলো-

১. নিচতলার বারান্দায় মাঝবয়স পেরোনো একজন মানুষ সোফায় বসে কাজের লোককে নির্দেশনা দিচ্ছেন টবের গাছগুলো ঠিকভাবে পরিচর্যা করার জন্য।
২. দোতলার বারান্দায় একজন তরুণী তার তিন বছর বয়সী চঞ্চল ও দুষ্টু মেয়েটিকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় তার ঘরের ফোনটা বেজে ওঠে। তিনি সেদিকে তাকালেন। ব্যস, এটুকুই। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কী কী ঘটলো!

মেহের আফরোজ শাওন বনে গেলেন চলচ্চিত্রের পরিচালক। এটি তার পরিচালনায় প্রথম ছবির প্রথম দিনের কাজের প্রথম দৃশ্য। তার এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হলো তারই স্বামী হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। এটি প্রয়াত নন্দিত কথাশিল্পীর উপন্যাস ‘কৃষ্ণপক্ষ’র চলচ্চিত্ররূপ। হুমায়ূন আহমেদ নিজেই এটিকে ছবিতে রূপ দিতে চেয়েছিলেন। তাই ব্যাপারটা শাওনের জন্য আবেগতাড়িতও।

মনিটরে বসে শাওন যখন হ্যান্ডমাইক ছাড়াই ‘অ্যাকশন’ অথবা ‘কাট’ শব্দগুলো ছুঁড়ছিলেন, কিংবা দৃশ্যধারণের স্থান তৈরি হচ্ছে এমন অবস্থায় যখন তাকে একদৃষ্টে কোথাও তাকিয়ে থাকতে দেখা গেলো, বোঝা গেলো তখনই। শাওন পরিচালকের চেয়ারে বসে থেকেও কোথাও হারিয়ে যাচ্ছিলেন। তার এই ক্ষণে ক্ষণে হারিয়ে যাওয়াটা বোধহয় অপার্থিব আর জরুরিই, কারণ ‘কৃষ্ণপক্ষ’র আসল কারিগর যিনি, সেই অদৃশ্য হুমায়ূনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে তারপর শাওনকে ‘ওকে’ বলতে হচ্ছিলো!

শাওনের সন্তুষ্টি হাসি এনে দিলো মৌটুসী ও তার ছোট্ট মেয়ে আরিয়ার মুখে। প্রথমবার পর্দায় একসঙ্গে বাস্তবের মা-মেয়ে। আরিয়ার অভিনয়ে অভিষেক হলো হুমায়ূন আহমেদের গল্পের ছবিতে। মৌটুসী বেশ খুশি হলেও, এতো তাড়াতাড়ি এটা চাননি। শাওনের জোর পরামর্শে আরিয়াকে নিয়ে শুটিংস্পটে এসেছেন মৌটুসী। তিনি মনে করেছিলেন, ছোট্ট আরিয়াকে সামলাতেই পারবেন না! কিন্তু হলো উল্টো। এ যে অভিনেত্রীর মেয়ে বলে কথা! খাবার খেতে না চাওয়ার দৃশ্যটি সে ভালোভাবেই শেষ করলো, হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানালো ইউনিটের সবাই।

বারান্দা থেকে ক্যামেরা সরিয়ে নেওয়া হলো প্রধান ফটকের কাছে। রিকশা বিদায় দিয়ে মাহি গেট মাড়িয়ে ঢুকবেন, অবাক হবেন, তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন, ধীরে হেঁটে হেঁটে দরজার দিকে যাবেন- এই হলো দৃশ্য। শাড়ি পড়েছেন মাহি। সবার আগে শুটিংস্পটে এসেছেন জনপ্রিয় এই নায়িকা। দৃশ্য বুঝে নিয়ে বিকেল অবধি নিজের মধ্যে ছিলেন তিনি।

মাহি ক্যামেরা ছুঁয়ে সালাম করলেন। গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে তৈরি হলেন। শাওন তার শাড়ি ঠিক করে দিলেন। গেটের বাইরে তখন জটলা। বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা বলে কথা! শুটিংয়েরটি বাদে, আরও গোটা বিশেক ক্যামেরা তার দিকে তাক করা। সবই পাবলিকের মোবাইল ফোন! কেউ জুম করে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও। মাহির সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি অরুর মধ্যে আছেন। প্রিয় লেখকের যে চরিত্রটির জন্য কয়েকদিনে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। ৩-৪ বারের মাথায় মাহির শট ওকে হলো। এবার মাহি অপেক্ষারত আলোকচিত্রীদের উদ্দেশে হাসলেন। সবাই ঘিরে ধরলো তাকে।

এদিকে অন্য দৃশ্যে যাওয়ার আগে, এবার কেক কেটে ‘কৃষ্ণপক্ষ’র মহরতের প্রস্তুতি। ছবিটির পাত্রপাত্রী মৌটুসী, তানিয়া আহমেদ, মাহি কেকের সামনে দাঁড়ালেন। মহরত হলো আরিয়াকে কেক খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে। উপস্থিত ছিলেন এস আই টুটুলও। তিনি পরিচালককে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন ছবিটিতে জেবা চরিত্রে রূপদানকারী স্ত্রী তানিয়ার সঙ্গে। এ ছবির জন্য দুটি গান তৈরি করছেন টুটুল। দুটোই হুমায়ূন আহমেদের লেখা।

‘কৃষ্ণপক্ষ’ প্রেমের উপন্যাস। শাওন জানান, গল্পটা অনেকের পড়া। পর্দায় যেভাবে আসছে তাতে লেখকের কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে না। কিন্তু নতুনত্ব থাকবে। ‘শুনেছি, উপন্যাসের শেষ দৃশ্যটি রাখছেন না সিনেমায়?’ এমন প্রশ্নে শাওন একটু হাসলেন, বললেন, ‘বিষয়টি এখনই জানাতে চাইনি। হয়েছে কী, হুমায়ূন আহমেদের লেখায় হাত দেওয়ার অধিকার বা সাহস আমাদের নেই। কিন্তু দর্শকদের একটু ভাবনায় ফেলার জন্য শেষ দৃশ্যের আগেই সিনেমাটি শেষ হবে। এর অর্থ হলো, দুর্ঘটনায় পড়া অরুর স্বামী মুহিব বেঁচে আছে না মারা গেছে, সেটা প্রশ্ন থেকে যাবে। ’

আগামী ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে আলোর মুখ দেখবে ‘কৃষ্ণপক্ষ’। টানা শুটিংয়ে শেষ করা হবে ছবিটির কাজ। এতে আরও অভিনয় করবেন রিয়াজ ও ফেরদৌস। তাদের অংশের দৃশ্যধারণ শুরু ৬ অক্টোবর থেকে। শাওন জানান, প্রিপ্রোডাকশনে সময় কম পেলেও দৃশ্যধারণের বেলায় তাড়াহুড়ো নেই। সম্পাদনায়ও যত্ন নেওয়া হবে সর্বোচ্চ। হুমায়ূন আহমেদের লেখা নিয়ে ছবি হচ্ছে, তাকে শ্রদ্ধা জানানোর এই আয়োজনে আর যাই হোক, বিন্দুমাত্র অযত্ন রাখা যাবে না।

বাংলাদেশ সময় : ১২২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
এসও/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ