শিল্পী পরিবারে জন্ম, বেড়ে ওঠা, তারপর শিল্পীকে জীবনসঙ্গী করে একসঙ্গে পথচলা। অসংখ্য নাটক কালজয় করেছে তার অভিনয়ে।
বাংলানিউজ: ‘শেকল’ নামের নাটক দিয়ে আবার ফিরছেন। এতে আপনার চরিত্রটি কেমন?
বিপাশা হায়াত: এখানে এক ক্লাউনের সাজে অভিনয় করেছি। তার নাম আলেয়া। তার অভাবের সংসার। পুত্রকে নিয়ে কোনোরকম দিন কাটায় সে। আলেয়া একটি রেস্তোরাঁয় মিকি মাউসের পোশাক পরে বাচ্চাদের আনন্দ দেয়। এজন্য মজুরি দেওয়ার কথা থাকলেও গড়িমসি করা হয় তার সঙ্গে।
বাংলানিউজ: আলেয়াকে কেমন মনে হচ্ছে?
বিপাশা: আসলে চরিত্রে তেমন কোনো ভিন্নতা নেই। পোশাকে ভিন্নতা আছে। আমি মনে করি, যাদের রক্তে অভিনয়, তারা চরিত্রে ভিন্নতা বা পোশাকে ভিন্নতা খোঁজেন না। এসব কখনওই তেমন কোনো মুখ্য বিষয় নয়।
বাংলানিউজ: চরিত্র বুঝে পাওয়ার পর কিছু ভেবেছেন, কীভাবে ফুটিয়ে তুলতে চান...
বিপাশা: না, তেমন কোন আলাদা পরিকল্পনা বা সাহায্য আমাকে নিতে হয়নি। কারণ আগে যখন আমার ছেলেমেয়ে ছোট ছিলো তখন আমার মেয়েটা ক্লাউন খুব পছন্দ করতো। আবার আমার ছেলে খুব ভয়ও পেত। সেই থেকে দেখে দেখে তাদের কাজগুলো খুব পরিচিত ছিলো আমার কাছে।
বাংলানিউজ: অনিমেষ আইচ ‘শেকল’ কেমন বানিয়েছেন?
বিপাশা: যে জীবন খুব কষ্টের, যে জীবন আমাদের খুব অজানা সেইসব কাহিনী পাওয়া যায় অনিমেষ আইচের নাটকে। সে প্রতিটি নাটক তৈরি করে মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয় নিয়ে। ফলে আমি অনায়াসে চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতে পারি। অসাধারণ সব চরিত্র দর্শকদের সামনে এনেছে ও। সবাই জানে, অনিমেষ কাজ খুব যত্ন নিয়ে করে। এজন্যই ওর নাটক দিয়েই আবার অভিনয়ে ফিরলাম।
বাংলানিউজ: এবার ঈদে আর কী কী কাজ করছেন?
বিপাশা: চারটি কাজ করছি। 'শেকল' ছাড়াও গোলাম সোহরাব দোদুলের একটি ও আরিফ খানের একটি নাটক ও একটি টেলিছবিতে অভিনয় করছি। আমার লেখা টেলিছবি ‘রূপালি দিনের গল্প’ পরিচালনা করছেন আরিফ খান। আর নাটক ‘আরোহন’-এর নির্মাতা তৌকীর আহমেদ।
বাংলানিউজ: কোন ধরনের চরিত্রে কাজ করতে বেশি ভালো লাগে?
বিপাশা: আমার মতে, প্রকৃত সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় উপভোগ করা উচিত। তবে আমার পছন্দের চরিত্রগুলো হলো, সমাজের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষ। আমি মনে করি, একজন মানুষ কত অসহায়, সেটা অভিনয়ের পাশাপাশি মানুষ বিপাশা হায়াত হিসেবেও অনুভব করে কাজটা করলে অভিনয়টা বেশি প্রাণবন্ত হয়। আমি সেই মানুষদের কথা প্রায়ই ভাবি। আমার অভিনয়ের মাধ্যমে যদি দর্শকের মধ্যেও ভাবনাটা বপন করা যায় তাহলে আমাদের আশপাশে সব মানুষই ভালো থাকবে।
বাংলানিউজ: নাটকে অভিনয় কম করছেন কেন?
বিপাশা: এখন শুধু ছবি আঁকাআঁকিতেই মনোযোগ দিচ্ছি। বলতে পারেন এ কাজটা ফুলটাইম করে ফেলেছি। খুব বেশি পছন্দ না হলে কাজ করি না। সারাবছরই কাজের অনুরোধ আসে।
বাংলানিউজ: এখনকার নাটক দেখেন?
বিপাশা: আজকাল কাজের মান এতো খারাপ! সত্যি কথা বলতে, এখন তেমন টিভি দেখি না। নাটকের কথা ভাবলে চোখে জল চলে আসে। কিছুদিন আগেও নাটকের মান ভালো ছিলো। এখন কিছুই নেই। নাটক বোঝে না, নাটক কি সেটা জানে না, সেসব মানুষ এখন নাটক বানায়, নাটকে অভিনয় করে। আসলে মনের মতো কাহিনি, চরিত্র, পরিচালক পাই না বলে কাজ কমিয়ে দিয়েছি।
বাংলানিউজ: এ সময়ের নাটকের সঙ্কটগুলো কী কী?
বিপাশা: আসলে টিভি পর্দায় বেশি বেশি করে দেখালেই ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী হওয়া যায়, এমন চিন্তা করা ভুল। দর্শক হলেন বড় বিচারক। একটি নাটকের নির্মাণ, কাহিনি বা অভিনয় দেখে দর্শক সব ধরতে পারেন। আগে আমাদের মাত্র একটি চ্যানেল ছিলো। আমরা কত যত্ন নিয়ে কাজ করেছি। আর এখন কত চ্যানেল! আমার মনে হয় এখন কাজ দেখানোর সুযোগ বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় কাজের মান ভালো নেই। মানুষ সিনেমা হলে দেখতে যায় টিকেট কেটে। তাই দর্শকের হাতে পছন্দ করার একটা সুযোগ থাকে। কিন্তু নাটকের বেলায় সেটা নেই।
বাংলানিউজ: নতুনদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
বিপাশা: আমার মনে হয় কাজকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসতে হবে। অভিনয়কে আসলে একটা শিল্প, অংকের সূত্র, যুক্তিবিদ্যা, আবেগের মতো বিশ্লেষণ করি। এই বিশ্লেষণ যদি কেউ না জানে বা জানার চেষ্টা না করে, আমার মতে সে আজ না হয় কাল সবকিছু থেকে পিছিয়ে পড়বে। শুধু মুহূর্তের ওপর ভিত্তি করে মানুষ অভিনেতা-অভিনেত্রী হতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৬
টিএস/এসও/জেএইচ