‘আমি তোমাকে ভালোবাসি। ’ অথবা ‘তোমাকে আমার ভালো লাগে।
বাংলানিউজের সঙ্গে আড্ডার শুরুতে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব পাওয়া নিয়ে বলছিলেন ঢালিউডের নবাগতা বুবলি। পুরো নাম শবনম ইয়াসমিন বুবলি। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ডাক নাম বুবলি হলেও বাসায় কেউ তাকে ডাকে বাবাই। কেউবা বাবান, আবার কেউ বাবলা বলে। আর মা ডাকেন ‘মোহাম্মদ’ বলে। মায়ের এই নামে ডাকার কারণ জানিয়ে বললেন, ‘আমি বোনদের মধ্যে সবার ছোট। তখনও আমার ভাইয়ের জন্ম হয়নি। মা সবসময় আমাকে ছেলের মতো দেখতো বলেই এই নামে ডাকতেন। ’
তিন বোনের মধ্যে বড় বোন গান করেন। মেজবোন সংবাদ পাঠিকা। বুবলি নিজেও বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনে সংবাদ পাঠ করেছেন প্রায় তিন বছর। সংবাদ পাঠিকা হওয়ার গল্পটা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের শুরুর কথা। মেজবোন আমার আগেই সংবাদ পাঠিকা হয়েছিলেন। আমারও ইচ্ছে ছিলো সংবাদ পাঠিকা হবো। তাই সেই পথে পা বাড়ালাম। ’
বুবলি প্রথমে ভর্তি হন সংবাদ পাঠ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে (জবস এ-ওয়ান)। তবে বেশিদিন ক্লাশ করতে পারেননি। তিনটি ক্লাশ করেই পরিবারের সবাই মিলে দেশের বাইরে ঘুরতে চলে গেলেন। ফিরে এসে দেখেন সব ক্লাশ শেষে পরীক্ষা চলছে! তিনটি ক্লাশের অভিজ্ঞতা নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিলেন। প্রশিক্ষকরা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাদের অনুপ্রেরণায় অডিশন দিলেন বাংলাভিশনে। সুযোগও পেয়ে গেলেন।
২০১৩ সালে সংবাদ পাঠ শুরুর পর প্রশংসা কুড়ান বুবলি। ঢালিউডের সুপারস্টার শাকিব খানের নজরেও পড়েন তিনি। সেই সূত্রে এখন তারা রূপালি পর্দার জুটি। ইতিমধ্যে কিং খানের সঙ্গে দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এবারের ঈদে (১৩ সেপ্টেম্বর) মুক্তি পাবে দুটোই। এগুলো হলো ‘বসগিরি’ ও ‘শুটার’।
সংবাদ পাঠিকা থেকে বুবলির চিত্রনায়িকা হওয়ার গল্পটা চমকানোর মতোই। কীভাবে ঘটলো? বুবলি বললেন, ‘সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ শুরুর পর অনেকে মডেলিং ও নাটকে কাজ করার উৎসাহ দিয়েছেন। অভিনয় করতে আমার মাঝে মধ্যে ইচ্ছে থাকলেও পরিবার থেকে তেমন কোনো সমর্থন পাচ্ছিলাম না। ’
শাকিব খান তখন নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ছবির (প্রিয়া রে) জন্য নতুন নায়িকার খুঁজছিলেন। তার পছন্দ হয় বুবলিকে। তিনি ফোন করে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। বুবলি তাকে জানান, পরিবার অনুমতি দেবে না। আর পরিবারের বাইরে গিয়ে তার পক্ষে কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। শাকিব তাকে ভাবার সময় দেন। কিছুদিন পরে পরিচালক শামীম আহাম্মেদ রনি ফোন দিয়ে জানান, বুবলিকে তারা ‘বসগিরি’র জন্য নির্বাচন করে ফেলেছেন।
একটার পর এক ছবির প্রস্তাব পেলেও পরিবারের সম্মতি মিলছিলো না বুবলির। তারা দুই বোন শোবিজে কাজ করার পরও এটা হতবাক করার মতো ব্যাপার। বুবলি হাসতে হাসতে বললেন, ‘মা-বাবার মনে হতো মিডিয়া আর চলচ্চিত্রে কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে। তারা ভাবতেন, টিভি অথবা অন্য মিডিয়ার মতো চলচ্চিত্রের পরিবেশ কাজের উপযুক্ত নয়। এ কারণে তারা আমাকে চলচ্চিত্রে কাজ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। পরিচালক সস্ত্রীক বুবলিদের বাসায় গিয়ে তার মা-বাবাকে বোঝালেন। এই বলে আশ্বাস দেন, তাদের যদি কাজ বা পরিবেশ ভালো না লাগে তাহলে তারা আমাকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। ’
আর বাঁধা রইলো না। চলচ্চিত্রে অভিষেক হলো বুবলির। তবে অভিজ্ঞতাটা পুরোপুরি আনন্দের ছিলো না তার জন্য। বুবলী একটু অভিমানের স্বরে বললেন, ‘বসগিরির শুটিং শুরু হয়েছে নায়িকা ছাড়াই। সংবাদমাধ্যমে পড়ছিলাম শাকিব খানের পরবর্তী নায়িকা কে হবে? ব্যাপারটা নিয়ে যতোটা আনন্দিত ছিলাম, তার চেয়ে বেশি বিরক্ত লেগেছে। কেবলই মনে হচ্ছিলো, কেনো যে প্রস্তাবটা এলো? কেনো মা-বাবা রাজি হচ্ছেন না। অবশেষে পরিবারের সবার কাছ থেকে সম্মতি পাওয়ায় স্বস্তি এলো। ’
স্কুল-কলেজে অনেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অভিনয় করলেও বুবলির সেই অভিজ্ঞতা নেই। চলচ্চিত্রে আসার আগে কখনও অভিনয় করেছেন? উত্তরে তার ভাষ্য, ‘না না বাবা! অভিনয় কোনোদিনই করিনি। মাঝে মধ্যে সংবাদ পাঠ করাটা ভালোভাবে শেখার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতাম ওই পর্যন্ত। তবে বড় আপু গান শিখতো, তার সঙ্গে গান গাইতাম। মা আমাকে গানের স্কুলেও ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গান শেখাতে বরাবরই ফাঁকিবাজ ছিলাম। তাই গানটা ঠিকমতো শিখতে পারিনি। এখন আফসোস লাগে কেনো যে গানটা ভালো করে শিখলাম না! তবে ইদানীং গিটার বাজানো শিখছি। ’
‘বসগিরি’তে বুবলির প্রথম দৃশ্য ছিলো শাকিব খানের সঙ্গে। তখন কেমন লাগছিলো? প্রশ্নটা শুনে উত্তর দেওয়ার জন্য কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলেন বুবলি! চোখ খুলে বললেন, ‘সত্যি বলতে এখনও বিশ্বাস করতে পারি না বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খানের নায়িকা হয়েছি! প্রথম দিনের শুটিংয়ে নার্ভাসনেস থেকে আমার কি যে অবস্থা হয়েছিলো তা বোঝাতে পারবো না। প্রথমত জীবনে প্রথমবার অভিনয় করছি। তার ওপর আমার পাশে দাঁড়ানো শাকিব খান। ‘বসগিরি’তে আমার চরিত্র একজন শিক্ষানবীশ চিকিৎসকের। আমার প্রথম দৃশ্য ছিলো শাকিব খানকে চড় মারতে হবে। ভাবতে পারছিলাম না চরিত্রের মধ্যে থেকে একসঙ্গে দুই কাজ কীভাবে করবো। শাকিব ভাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। সেটে সবার কাছেই কাজ শিখেছি। ’
‘বসগিরি’র দৃশ্যায়ন শেষ হতে না হতেই আরেকটি ছবিতে (শুটার) চুক্তিবদ্ধ হয়ে শুটিং করেছেন বুবলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র এই শিক্ষার্থীকে এখন প্রায় সারাদিনই থাকতে হয় শুটিংয়ে। স্বাভাবিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পড়াশোনায়। বুবলি একটু মন খারাপ করে বললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ না করলে পড়া কিছুই বোঝা যায় না। আমি তো ক্লাশ করতেই পারছি না। তবে বন্ধুরা আমাকে অনেক সহায়তা করছে। আমাকে নোট রেডি করে দেয়। প্রতি সেমিস্টারে কম করে বিষয় নিই। এতে পড়াশোনায় ক্ষতির মাত্রাটা একটু কমানো যায়। ’
বুবলি এখন অবসর খুব একটা পান না। পেলে তার সময় কাটে কীভাবে? ‘আমি খুব ঘরকুনো মেয়ে। নিজের ঘরে থাকতেই বেশি ভালো লাগে। গান শুনি, টিভি দেখি, এমনকি খাবারও আমার ঘরেই খাই। ’
সংবাদ পাঠের পর চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? বুবলির সোজা উত্তর, ‘আগে তো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিলো পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করবো। মা-বাবার ইচ্ছাও এটাই। কিন্তু এখন বড়পর্দায় কাজ করছি। তাই এখন চলচ্চিত্র নিয়েই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। ’
* চলচ্চিত্রে আসা ও শাকিব খানকে নিয়ে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য বুবলির কথা :
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
টিএস/জেএইচ