ব্যাংকক থেকে: এভাবে আর কখনো বাংলাদেশকে দেখার সুযোগ হয়নি, যেভাবে সোমবার সকাল থেকে দেখবে থাইল্যান্ড। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৪ বছরে এবারই প্রথম সে ‘রূপ’ দেখার সুযোগ মিলছে থাইদের।
সকাল থেকে দেশটির রাজধানী ব্যাংককের কুইন সিরিকিত ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত শুরু হবে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০১৬’। আর সেখানেই থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারী ও দর্শণার্থীদের সামনে তুলে ধরা হবে বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক। বাংলাদেশকে ‘সঠিকভাবে’ না জানা থাইদের জন্য ইতিমধ্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছে সেখানকার বাংলাদেশকে।
প্রতিবছর ঢাকায় জাঁকজমকভাবে থাই পণ্য মেলার আয়োজন হলেও গত চার দশকে এবারই প্রথম বাংলাদেশের পণ্য দেখার সুযোগ পাচ্ছে থাইল্যান্ড। এ নিয়ে এদেশে অবস্থারত বাংলাদেশি কমিউনিটিও দারুণ খুশি।
সুকুম্মিত এলাকার এক নম্বর রাস্তা সংলগ্ন এক হোটেলে বসে থাইল্যান্ডে বসবাসকারী ব্যবসায়ী আজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, থাই পণ্য বলতে বাংলাদেশিরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অথচ আমাদের দেশ গার্মেন্টস, পাট, চামড়াসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কত এগিয়ে সে বিষয়েটি থাই জনগণ বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা জানেই না। তবে আশা করি এবার জানবে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, বিরাট এ আয়োজনকে সফল করতে থাইল্যান্ডে বসবাসরত সব বাংলাদেশি হাজির হবে। শুধু তাই না, আমাদের পরিচিত থাই ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুষদের এখানে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
রোববার থাইল্যান্ডে সরকারি ছুটির থাকলেও কুইন সিরিকিত ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের চিত্র ছিল ভিন্ন।
বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীরা স্টল নির্মাণ করে পণ্য সাজাতে ব্যস্ত। দেশের সংস্কৃতিকে থাইদের সামনে তুলে ধরতে আসা সাংস্কৃতিক কর্মীরাও সেরে নিয়েছেন তাদের রিহার্সেল।
মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশ নিয়ে থাইদের খুব বেশি জানার সুযোগ হয়নি। তবে ব্যাংককে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেড এক্সপো হলেও এটা শুধু ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, এর মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল ধারণার অবসান হবে।
সোমবার শুরু হয়ে এ মেলা চলবে ১ জুন পর্যন্ত। বাংলাদেশের ৫৫টি শীর্ষ কোম্পানি এতে অংশ নিচ্ছে।
থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক ও ব্যবসায়ীক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। তারই অংশ হিসেবে দেশের ৫ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবারের বাংলাদেশ এক্সপো-২০১৬ তে অংশ নিচ্ছেন।
রোববার পর্যন্ত ব্যাংককে উপস্থিত হন- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
সোমবার সকালে ঢাকা থেকে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের।
বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যের নানা দিক থাই ব্যবসায়ী ও জনগণের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি থাই বিনিয়োগ আকষর্ণেরও প্রচেষ্টা থাকবে এই এক্সপোতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ও ফ্যাশন শো থাকবে। ‘বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড থ্রেডস অব হেরিটেজ ফ্যাশন শো’শিরোনামের এই রেশম শিল্পীর সম্মানে উৎসর্গ করা হবে।
থাই রাণী সিরিকিত দেশের রেশম শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন।
বাংলাদেশের রেডিমেড গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, বোন চায়না এবং সিরামিক ও টাইলস, ফার্নিচার, অর্গানিক চা ও বিভিন্ন খাদ্য পণ্য, গ্লাস, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, লেদার ও ফুটওয়্যার, ফুড বেভারেজ, হিমায়িত খাবার, পলিমার, প্লাস্টিক, মেলামাইন, মোটর গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ, শিপবিল্ডিং, ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স,পাটজাত পণ্য, রেশম ওহস্তশিল্প, আইসিটি ও সফটওয়্যার, পর্যটন, হসপিটাল ও মেডিকেল সার্ভিস, কৃষি যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব, প্রসাধনী সামগ্রী ও অলঙ্কার উৎপাদন-রফতানিকারক অর্ধশতাধিকেরও বেশি প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডের এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৭ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৬
জেপি/এসএইচ