ব্যাংকক থেকে: তিন দিনের মহা আয়োজন শেষে পর্দা নেমেছে থাইল্যান্ডে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০১৬’ -এর। দেশটির রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মেলা শেষে বাংলাদেশকে যেন নতুন করে চিনলো থাইল্যান্ড।
পণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক বৃদ্ধিতে প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে দু’দেশের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণই ছিল এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
তিন দিনে দফায় দফায় বাংলাদেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে থাই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বৈঠকের মাধ্যমে সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একমত বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরাও।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে কুইন সিরিকিত ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০১৬ অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতবাস ও বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে এক্সপোর আয়োজন করে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, থাইল্যান্ডে এ মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে আমরা একটি নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করেছি। থাইল্যান্ডকে নতুন করে বাংলাদেশ চিনিয়েছি। বিক্রিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা চেয়েছি বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষমতাকে জানাতে, বাংলাদেশের পণ্যগুলোকে পরিচয় করিয়ে দিতে। এসব সম্পর্কে থাইল্যান্ড জানতো না। তবে এখন যাত্রা শুরু হলো, আশা করি তারা এবার বাংলাদেশের দিকে ফিরে তাকাবে।
দু’দেশের সংস্কৃতিতে মিল থাকায় দু’দেশেই একই ধরনের পণ্য উদপাদন করে। এ কারণে খাদ্য, পোশাকসহ বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যগুলো থাই বাজারে ঢুকতে বাধার সম্মুখীন হয়। উচ্চহারে শুল্কই এক্ষেত্রে প্রধান বাধা। তবে আগামী ২০১৭ সালে থাইল্যান্ড তাদের দেওয়া শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা পুনর্বিবেচনা করবে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত মুনা বলেন, এটা আমাদের জন্য সুখবর। আমরা আশা করব থাইল্যান্ড বাংলাদেশি রপ্তানিযোগ্য কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিশেষ দূত চালেরম্পোল থানচিত, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমাদ, থাই চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সাজ্জাতুজ জুম্মাসহ অন্যান্যরা সমাপনী মেলায় উপস্থিত ছিলেন।
তারা দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশে থাই বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারই ধারাকাহিকতায় থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ এক্সপো’র আয়োজন। সম্প্রতি বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো যত অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে তার মধ্যে এটাই শ্রেষ্ঠ। এই মেলা থেকে হয়তো ক্রয় আদেশ পাওয়া যায়নি, তবে এটা দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে অবদান রাখবে।
থাইল্যান্ডের নজর কাড়তে এ অনুষ্ঠানকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পাঁচ মন্ত্রী এ আয়োজনে অংশ নেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বিভিন্ন প্যানেল বৈঠকে অংশ নিয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
বাংলাদেশের এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী আপিরাদি তান্ত্রাপন। থাইল্যান্ডের থাই শিল্পমন্ত্রী ড. আটচাকা শিবুনরুয়াং, পর্যটন ও ক্রিরামন্ত্রী কোবকার্ন ওয়াতানাভরাংকুল, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপমন্ত্রী ড. পানসাক শিরিরুচাটাপুং, উপ শিল্পমন্ত্রী পর্নচাই তারকুলওয়ারানন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে দেশটির জ্বালানি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ন্যাশনাল রিফর্মস স্টেয়ারিং অ্যাসেমবিলির চেয়ারম্যান কুরুজিত নাকোরথাপসহ সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
ইফাদ, ইনসেপটা, স্কয়ার, বেক্সিমকো, আকিজ, প্রাণ, সুপারস্টারের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের পসরা নিয়ে মেলায় অংশ নেয়।
থাইল্যান্ডে আয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম এ মেলায় বিক্রি খুব বেশি না হলেও এ বাজারের সম্ভাব্যতা নিয়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। তবে বাংলাদেশ কমিউনিটিসহ দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটিতে ব্যাপকভাবে প্রচারণা করলে দর্শণার্থী বাড়তে পারতো বলেও মনে করেন তারা।
চামড়া, পাট, সিরামিক, ফার্মাসিটিক্যালসের মতো পণ্যে আগ্রহ দেখালেও বিশেষ কোনো অর্ডার মেলেনি।
** বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু: থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৬
জেপি/এমজেএফ/