ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রেজাল্ট

ফল প্রকাশে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় শিক্ষামন্ত্রীর ‘ধন্যবাদ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
ফল প্রকাশে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় শিক্ষামন্ত্রীর ‘ধন্যবাদ’ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল কিছুটা বিলম্বে প্রকাশিত হলেও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় শিক্ষা বোর্ডে, ডাক বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। 

রোববার (৩১ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ফল প্রকাশের পর সচিবলায় সংবাদ সম্মেলনে ফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, পরীক্ষা গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হয় ৮ মার্চ।

এবারও সুষ্ঠু, নকলমুক্ত এবং প্রশ্নফাঁসের গুজববিহীন পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘বিগত ১০ বছর পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হয়। কিন্তু মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে এবছর ৬০ দিনে ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সারাদেশে সব ধরনের পাবলিক পরিবহন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রধান পরীক্ষকদের নিরীক্ষতি ওএমআর ডাক বিভাগ বোর্ডসমূহে পৌঁছে দিয়ে ফল প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ডাক বিভাগ, জেলা প্রশাসন, প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং বোর্ডের কর্মকর্তাদের ঝুঁকি নিয়ে অপির্ত দায়িত্ব পালন করে ফলাফল প্রস্তুত করায় ফল প্রকাশিত হয়েছে।

এবার সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে গড়ে ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সবগুলো বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মোট ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে।

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৮৫ দশমিক ২২ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৮৭ দশমিক ৩১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এবার অনলাইন এবং মোবাইলই ছিল ফল পাওয়ার মাধ্যম।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গতবারের মতো এবারও সম্পূর্ণ পেপালেস ফল প্রকাশিত হচ্ছে।

‘কোভিড-১৯ এর কারণে ফল প্রকাশের দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থেকে সরাসরি মোবাইলে ফল প্রাপ্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফল প্রকাশের দিনে কোনো ধরনের সমাবেশ বা উৎসব না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’

পরীক্ষায় কৃতকার্য সব পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী অনুত্তীর্ণদের উদ্দেশ্যে বলেন, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি আশা করবো তারা নব উদ্যোমে পূর্ণ প্রস্তুতিতে আগামীতে পরীক্ষা দিয়ে সফলকাম হবে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, গত বছরের তুলনায় এবছরও ফলের সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়ছে। আমরা বিশ্বাস করি এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন- বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান, শিক্ষা উপকরণ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং নকলবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা।

পরীক্ষা সুচারুরূপে সম্পন্নের ক্ষেত্রে পদক্ষেপগুলো: পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকক্ষে শিক্ষার্থীদের আসন গ্রহণ, ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সব সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান, পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া, কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া, পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যতিত কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, গত বছরের ন্যায় এবারও উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়নরোধে বোর্ডসমূহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধান পরীক্ষকরাকে উত্তরমালা প্রণয়নের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রণীত নমুনা উত্তরমালার আলোকে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের গণগতমান যাচাইয়ের জন্য একটি প্রশ্নমালা সব প্রধান পরীক্ষককে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া সারাবছর পরীক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনলাইনে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহিত নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। শিক্ষা পরিবারের সবাইকে অভিনন্দন।

এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের এবং শ্রবণ-প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রেজাল্ট এর সর্বশেষ