ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ঝুঁকিতে ৪৫ শেয়ার!

নজরুল ইসলাম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪
ঝুঁকিতে ৪৫ শেয়ার! ছবি: প্রতীকী

দেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহে বেশ চাঙাভাব লক্ষ্য করা গেছে। গেল সপ্তাহের পাঁচদিনসহ টানা ছয়দিন বেড়েছে মূল্যসূচক ও লেনদেন।

গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনও দুই বছরেরও অধিক সময় পর তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

সব কিছু মিলে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে শেয়ারবাজারে। তবে ইতিবাচক বাজারে বিনিয়োগকারীদের বুঝেশুনে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। কারণ শেয়ারবাজারের সার্বিক পি/ই রেশিও এখনও শেয়ার কেনার উপযোগী হলেও অনেকগুলো কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ঝুঁকিতে। পি/ই রেশিও ছাড়াও কোম্পানিগুলোর মুনাফা ও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস), নেট সম্পদমূল্য (এনএভি) ইত্যাদি যাচাই করে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার পরামর্শ দেন তারা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, ৪৫টি কোম্পানির পি/ই রেশিও ৪০-এর উপরে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সর্বোচ্চ  ৪০ পিই রেশিও সম্পন্ন কোম্পানিগুলোর শেয়ারে মার্জিন ঋণের সুবিধা বেধে দিয়েছে। এজন্য ৪০ পিই রেশিওর শেয়ার ঝুঁকিমুক্ত বলে বিবেচনা করে বিএসইসি। এর বেশি হলেই শেয়ারগুলো বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে যায়।

তবে শেয়ার বিশেষজ্ঞদের মতে, কোম্পানির পিই রেশিও ২০-এর অধিক হলেই তাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো কোম্পানির পি/ই বেশি হলেও যদি তাদের মুনাফা ভালো হয়, ইপিএস ও প্রকৃত সম্পদমূল্য বাড়ে তবে সেসব কোম্পানির শেয়ার কেনা যেতে পারে।

পিই রেশিও ৪০-এর ঊর্ধ্বে থাকা কোম্পানিগুলো হলো- এসিআই লিমিটেড (১৩২.৮৪), এসিআই ফর্মুলেশন (৪০.৪৫), এমবি ফার্মা (৫৮.০৫), এপেক্স স্পিনিং ও নিটিং মিলস (৪৩.৯২), বেক্সিমকো সিনথেটিক্স (৪৯.৪৩), আনোয়ার গ্যালভানাইজিং (১৯১৪.২৯), বিডি অটোকারস (৬৫২.৫), দেশবন্ধু পলিমার (৪০.৪৩), ইস্টার্ন ক্যাবল (৯২.২১), রেনউইক যজ্ঞেশ্বর (৯২.৯১), ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস (৮০.৮৩), এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (৬২.৫), ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি (৪৩.৫২), মাইডাস ফিন্যান্স (১৪৯.৩৮), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (৬০.৩৬), ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস (৮৮.৮৫), ইনটেক অনলাইন (৩৫৫), ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (৬০.৩৭), সোনালী আঁশ (১৫৩.৬৪), মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ (৮৪.০৯), ওসমানিয়া গ্লাস (৪২.৭১), বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস (৩৪২.৫), কোহিনুর কেমিক্যালস (৪৩.৯১), শমরিতা হাসপাতাল (৪২.০৯), সমতা লেদার কমপ্লেক্স (১৪২.২৭), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল (৬১.০৪), আলহাজ টেক্সটাইল (৫৬.৫৫), হাক্কানি পাল্প ও পেপার মিলস (১০৭.৫), জেএমআই সিরিঞ্জ ও মেডিকেল ডিভাইস (৮২.৬৫), লিগ্যাসি ফুটওয়ার (৮৭.৫) কোম্পানি।

এছাড়া অ্যাটলাস বাংলাদেশ (৫৬.৩৫), ফার্মা এইড (৪২.৫৬), লিবরা ইনফিউশনস (১৫৪.৪৪), মুন্নু সিরামিক (৮৮.৬৮), মুন্নু জুট স্টাফলার (৬৩.৭১), ন্যাশনাল টিউব (৪০.৮৩), ফার্মা এইডস (৪২.৫৬), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স (২২২.৫), সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ (৯৬.৬৭),  বঙ্গজ (৮৭.৪৭), সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি (১৫০৪.৯১), ফাইন ফুডস (৪৫৫), দেশ গার্মেন্টস (৯৪.৯২), মডার্ন ডায়িং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং (৫২.০৮), সোনারগাঁও টেক্সটাইলস (৫৬.০৩)।

এ ব্যাপারে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, বাজার ভালো হলেই সব শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। একটি কোম্পানির শেয়ার কিনতে হলে তার আর্থিক প্রতিবেদন ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে তবে কিনতে হবে। বিশেষ করে কোম্পানিটি মুনাফা বা লোকসান রয়েছে কি-না, শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) কত, প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি), বিগত বছরগুলোতে লভ্যাংশ দেওয়ার ধরন ও ধারাবাহিকতা ইত্যাদি দেখে নিতে হবে।

১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের উদহারণ টেনে তিনি বলেন, সবারই শেয়ারবাজারে আসার দরকার নেই। যাদের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করার ক্ষমতা নেই তাদের এ ব্যবসায় আসা ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, বেকার সমস্যা সমাধানের জায়গা শেয়ারবাজার নয়। যাদের পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে ও যারা বাজার বুঝেন তাদেরই এখানে আসা উচিত।

শেয়ারবাজারে গত কয়েকদিনের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে বলেন, বাজারে ওঠানামা হবে এটা স্বাভাবিক। তবে কিছু কিছু সময় আছে যখন কোনো না কোনো কারণ থাকে। বর্তমানে ব্যাংকে অনেক অলস মানি পড়ে আছে। আর ব্যাংকের ঋণ সুদও কমে গেছে। তাই এ খাত থেকেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হতে পারে। এটাও ঊর্ধ্বগতির একটি কারণ।  

বাংলাদেশ সময় : ১০১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।