ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ডিএসইর আয়ে ধস

সাঈদ শিপন ও শেখ নাসির হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪
ডিএসইর আয়ে ধস

ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারে গত কয়েক বছর ধরে টানা মন্দা বিরাজ করছে। এর প্রভাবে ধস নেমেছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জর (ডিএসই) আয়ে।

দুই অর্থবছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির আয় কমেছে ১১১ কোটি টাকার উপরে বা তিন ভাগের এক ভাগ।
 
ডিএসইর সর্বশেষ বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
 
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরের পর থেকে কমতে থাকে ডিএসইর পরিচালনা আয়ের পরিমাণ। সর্বশেষ অর্থবছরে (২০১২-১৩) প্রতিষ্ঠাটির পরিচালনা আয় হয় ৬৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। আগের অর্থবছর (২০১১-১২) এ আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৮ কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার টাকা। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ১৭৪ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ দুই অর্থবছরের ব্যবধানে ডিএসইর আয় কমেছে ১১১ কোটি নয় লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
 
ডিএসইর সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী বলেন, লেনদেন বাড়লে আয় বাড়ে আবার লেনদেন কমলে আয় কমে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে লেনদেন ২০১০-২০১১ অর্থবছরের তুলনায় অনেক কমেছে। যে কারণে কমে গেছে আয়ের পরিমাণ।
 
বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ডিএসইর পরিচালনা আয়ের খাতের মধ্যে রয়েছে লাগা চার্জ, হাওলা চার্জ, তালিকাভুক্তিকরণ ফি, ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশন চার্জ, ভাড়া বাবদ আয়, লভ্যাংশ থেকে আয়, সদস্যদের চাঁদা, ডিপি চার্জ, ওটিসি মার্কেট থেকে আয়, লেনদেন বহির্ভূত আয়, নতুন সদস্য তালিকাভুক্ত ফি, টিভি থেকে সাবস্ক্রিপশন আয়, তথ্য বিক্রয় সংক্রান্ত চাঁদা ও অন্যান্য আয়। এরমধ্যে লেনদেন বহির্ভূত আয়, নতুন সদস্য তালিকাভুক্ত ফি, টিভি থেকে সাবস্ক্রিপশন আয় ও তথ্য বিক্রয় সংক্রান্ত চাঁদা এই চারটি দফা ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে নতুন সংযুক্ত হয়েছে।
 
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় পাঁচটি খাত থেকে ডিএসইর আয় বেড়েছে। আয় বাড়ার তালিকায় স্থান পাওয়া পাঁচটি খাত হলো সদস্যদের চাঁদা, লভ্যাংশ আয়, নতুন সদস্য তালিকাভুক্ত ফি, ভাড়া বাবদ আয় ও টিভি থেকে সাবস্ক্রিপশন আয়।
 
এ খাতেটির মধ্যে সদস্যদের চাঁদা বাবদ আয় হয়েছে ১১ লাখ ৩৭ হাজার টাক। যা আগের অর্থবছরে ছিল ১১ লাখ ১৩ হাজার টাক। লভ্যাংশ থেকে আয় হয়েছে চার কোটি আট লাখ ৩৭ হাজার টাকা। যা আগের বছর ছিল এক কোটি আট লাখ ৯০ হাজার টাকা। ভাড়া থেকে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। যা আগরে অর্থবছরে ছিল ১৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা। আর নতুন সদস্য তালিকাভুক্ত ফি থেকে আয় হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। যা আগের অর্থবছর ছিল ২০ লাখ টাকা। এছাড়া টিভি থেকে সাবস্ক্রিপশন আয় হয়েছে ৭২ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
 
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভীর মতে, ডিএসইর আয় মূলত নির্ভর করে লেনদেনের ওপর। লেনদেন যত বেশি হবে আয় তত বেশি হবে। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ডিএসই যে পরিমাণ আয় করেছে তা একটি রেকর্ড। ওই সময় লেনদেন ছিল অনেক বেশি। আর সর্বশেষ অর্থবছরে লেনদেন বেশ কমেছে যে কারণে ডিএসইর আয়ও কমেছে।
 
আয় কমার দিক থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে শীর্ষ স্থান দখল করেছে লাগা চার্জের খাতটি। এ খাতে আয়ের পরিমাণ ১২ কোটি ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা কমে হয়েছে ৩৪ কোটি ২৮ লাখ সাত হাজার টাকা। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতে আয়ের পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
                       
আয় হ্রাসে এর পরের স্থানে রয়েছে তালিকাভুক্তিকরণ ফি বাবদ আয়। এ খাতে মোট আয় হয়েছে ১১ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। যা আগের অর্থবছর ২০১১-১২ সালে ছিল ১৪ কোটি ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে আয় কমেছে তিন কোটি ২১ লাখ আট হাজার টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতে আয়ের পরিমাণ ছিলো ১৫ কোটি ৪০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
 
হাওলা চার্জ বাবদও আয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। এ খাতে দুই কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় কমে হয়েছে নয় কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। যা ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ১১ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। শেয়ারবাজারের ধস পরবর্তী ২০১০-১১ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি ৫১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
 
এছাড়া লেনদেন বহির্ভূত খাত থেকে সর্বশেষ অর্থবছরে আয় হয়েছে এক কোটি নয় লাখ ৪৮ হাজার টাকা। যা আগের অর্থবছরে ছিল এক কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তথ্য বিক্রয় সংক্রান্ত চাঁদা থেকে ‍আয় হয়েছে ৩২ লাখ ৪১ হাজার টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
 
ডিপি চার্জে আয় তিন লাখ টাকা ওপরে কমে হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল চার লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে এ খাতে আয় ছিল ১১ লাখ ৮ হাজার টাকা।
 
ওটিসি মার্কেট থেকে আয় হয়েছে আট হাজার টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬৪ হাজার টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে এ ‍আয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
 
অন্যান্য আয় হয়েছে এক কোটি ২২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা যা আগের অর্থবছরে ছিল এক কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে এই আয় ছিল  ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
 
এছাড়া ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশন চার্জ বাবদও সর্বশেষ অর্থবছরে ডিএসইর আয়ের কোনো তথ্য পায়নি। অর্থাৎ এ খাতে অর্থবছরটিতে ডিএসইর কোনো আয় হয়নি। অথচ আগের অর্থবছরে এ খাতে ডিএসইর আয় হয়েছিল ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতে আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।