ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ফের বিতর্কে আইপিও

নজরুল ইসলাম ও শেখ নাসির হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৪
ফের বিতর্কে আইপিও

ঢাকা: অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নেওয়ায় নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠেছে। বিনিয়োগকারীসহ শেয়ার বিশেষজ্ঞদের বিরোধীতার পরও উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়ে একের পর এক নতুন কোম্পানি মন্দা শেয়ারবাজারে আসার অনুমোদন পাচ্ছে।

ফলে আরও বিতর্কিত হয়ে পড়ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া।
 
শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে মুনাফা জালিয়াতির মাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে ও প্রসপেক্টাসে ভুল তথ্য দিয়ে বিএসইসি-এর কাছ থেকে আইপিওর অনুমোদন পাচ্ছে অনেক ফটকা কোম্পানি। বাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পর এসব কোম্পানির শেয়ার দর নেমে আসছে অর্ধেক মূল্যে।
 
অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন যাচাইকারী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইস্যু ম্যানেজার কোম্পানিগুলোর ওপর দায় চাপিয়ে নিশ্চুপ থাকছে। এতে সর্বশান্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
 
এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবসময় স্টক এক্সচেঞ্জের আইন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদন দিয়ে থাকি। তাই আইপিওর টাকা তোলার পর যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম কমে যায় তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তাছাড়া প্রিমিয়াম না দিলে বাজারে ভালো ভালো কোম্পানি আসবে না। ’
 
একাধিক কোম্পানির প্রসপেক্টাস থেকে জানা গেছে, অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নেওয়ার জন্য কোম্পানিগুলো শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস), মুনাফা ও শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য অধিক দেখায়। পরবর্তীতে বছর ঘুরতে না ঘুরতে আয় কম দেখানো বা লোকসান দেখাতে থাকে কোম্পানিগুলো। এর জের টানতে হয় বিনিয়োগকারীদের।
 
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, আর্থিক প্রতিবেদন দেখে কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে যদি ভুল তথ্য থাকে তবে সে দায়  প্রতিবেদন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর।
 
আইপিওর আগে আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিগুলো যে মুনাফা দেখায় পরবর্তীতে তা কমে অর্ধেকে নেমে আসে। তারপরও তাদের কেন অতিরিক্ত প্রিমিয়ামে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়-এমন এক প্রশ্নের জবাবে মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমরা সাধারণত অডিট রিপোর্ট ও ইস্যু ম্যানেজারের ডিউ ডিলিজেন্সের ওপর ভিত্তি করে আইপিও অনুমোদন দিয়ে থাকি। সেখানে তারা যদি মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে, তবে আমাদের সেখানে কিছুই করার নেই। তবে আমাদের দৃষ্টিতে যেসব বিষয় ধরা পরে আমরা সেগুলোর ব্যাখ্যা চেয়ে থাকি। ’
 
২০১০-২০১২ সময়ে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নিয়ে আইপিও অনুমোদন পাওয়া বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর বরাদ্দ মূল্যের চেয়ে কমে লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্য ৬৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৭৫ টাকা মূল্যে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়।
 
এছাড়া ৩০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৪০ টাকা মূল্যের জিবিবি পাওয়ার কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ২০ থেকে ২১ টাকায়, ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৫ টাকা মূল্যের জাহিন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
 
অন্যদিকে, সম্প্রতি ভুয়া তথ্য দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তুলতে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানি আইপিও অনুমোদন পাওয়ায় বিএসইসির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
 
এমনকি কোম্পানিটির চাঁদা নেওয়া স্থগিতের আদেশও দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। পরবর্তীতে ওই আদেশ ফের স্থগিত করে দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি।  
 
সম্প্রতি অধিক প্রিমিয়াম নিয়ে আইপিওতে আসার অনুমোদন প‍াওয়া কোম্পানির মধ্যে ২০ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, ১৭ টাকা প্রিমিয়াম নিচ্ছে ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ, ১৫ টাকা প্রিমিয়াম নিচ্ছে শাহজিবাজার পাওয়ারটেক, ১৫ টাকা প্রিমিয়াম নিচ্ছে পেনিনসুলা চিটাগং লিমিটেড।
 
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে মন্দা বাজারে ১০ টাকা প্রিমিয়াম নিলেও তা বেশি। তারা বলছেন, স্বল্প মূলধনী কোম্পানি এভাবেই ঝুঁকিতে থাকে। তার ওপর যদি ওইসব কোম্পানিকে প্রিমিয়াম দিয়ে আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়, তবে তার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। তবে ভালো কোম্পানি হলে তাদের প্রিমিয়াম দিতে হবে।
 
এ বিসয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ভালো কোম্পানি হলে প্রিমিয়াম দেওয়া যেতে পারে। তবে কোম্পানিগুলো আসলে প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য কি-না সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো, অডিট কোম্পানি এবং ইস্যু ম্যানেজার কোম্পানিকে খতিয়ে দেখতে হবে। না করলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
 
তাছাড়া কোনো কোম্পানি অধিক প্রিমিয়াম নিলে যদি সে কোম্পানির শেয়ার মূল্য অফার মূল্যের চেয়ে কমে যায়, তবে চিন্তার কিছু নেই। তবে এ ঘটনা যদি অধিকাংশ কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটে তবে মনে করতে হবে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে কোনো ঘাটতি রয়েছে। যা সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অডিটর ও ইস্যু ম্যানেজারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে বলে জানান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।