ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

মার্জিন ঋণ নীতিমালায় অনীহা মার্চেন্ট ব্যাংকের

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪
মার্জিন ঋণ নীতিমালায় অনীহা মার্চেন্ট ব্যাংকের

ঢাকা: পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্জিন ঋণের স্থায়ী নীতিমালায় অনীহা প্রকাশ করেছে অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক। তাদের দাবি মূলত বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে মার্জিন ঋণের অনুপাত নির্ধারণ হওয়া উচিত।



সম্প্রতি ৪/৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, তারা কখনই এই নীতিমালার পক্ষে না। এ নীতিমালা করে ঋণ সীমাবদ্ধ করলে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
 
তারা বলেন, বাজারে যখন দরপতন হয় তখনই বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার উৎকৃষ্ট সময়। এ সময় মার্জিন ঋণের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ না পেলে বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিও সমন্বয় করতে পারেন না। ফলে তাদের লোকসান বেড়ে যায়।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি তানজিল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা কখনও মার্জিন ঋণের নীতিমালার পক্ষে না। কারণ আমি যখন কাউকে ঋণ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সিকিউরিটি পাচ্ছি তখন তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ দিতে পারি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নীতিমালা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ’
 
তিনি আরও বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংক কাকে কতটুকু ঋণ দেবে সেটা তার বিষয়। আবার আমরা ওই বিনিয়োগকারীকে কতটুকু ঋণ দেব সেটা তার ধারণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। এখানে বিএসইসি-এর হস্তক্ষেপ করা সমীচিন নয়। তাদের কাজ স্টেক হোল্ডাররা নিয়মমতো কাজ করছে কি-না সেটা পর্যবেক্ষণ করা।   কিন্তু সেটা না করে তারা বিনিয়োগের নীতিমালা করে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করছে। তাই আমি মনে করি বিএসইসির এ ধরনের উদ্যোগ বাজারে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ’
 
এদিকে আগামী ১ জুলাই থেকে মার্জিন ঋণের  স্থায়ী নীতিমালা কার্যকর হতে যাচ্ছে। এদিন থেকে মার্জিন ঋণের হার হবে ১:০৫। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওতে যদি ১ লাখ টাকা পজেটিভ ইক্যুইটি থাকে তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন।
 
এএএ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ হাফিজ জানান, নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইন অনুযায়ী বাজারে একবারে যেন বিক্রয় চাপ না বাড়ে সেদিক বিবেচনা করে মার্জিন লোন প্রদানে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কাজ করছে। ২০১১ সালে যে ভুল সিদ্ধান্তে বাজারে ধস নেমেছিল সেটা সম্পর্কে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এখন অনেক সচেতন।
 
কিন্তু মার্জিন ঋণের বিষয়ে নীতিমালা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ নিতে পারবেন না। যার ফলে বাজারে লেনদেন কমতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমানে মার্জিন ঋণের হার ১:১। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওতে যদি ১ লাখ টাকা পজেটিভ ইক্যুইটি থাকে তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এক লাখ টাকা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন। তবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগটি আর থাকছে না।
 
অন্যদিকে, মার্জিন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে  কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করছে না অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক। অভিযোগ রয়েছে অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক এখনও ১:২ বা ১:১.৫ হারে মার্জিন লোন দিচ্ছে।
 
২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্জিন ঋণ প্রদানে স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ন করতে কিছু নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। যেখানে বলা হয়, ৩০ জুন ২০১৩ পর্যন্ত মার্জিন ঋণের হার থাকবে ১:২। অর্থাৎ গ্রাহকের তহবিলের দ্বিগুণ।
 
১ জুলাই, ২০১৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩ পর্যন্ত এ হার হবে ১:১.৫। অর্থাৎ গ্রাহকের তহবিলের দেড়গুণ। ১ জানুয়ারি, ২০১৪ থেকে ৩০ জুন, ২০১৪ এ হার হবে ১:১। অর্থাৎ এই সময়ে গ্রাহকের তহবিলের সমান মার্জিন লোন প্রদান করা যাবে।
 
পরবর্তীতে আগামী ১ জুলাই ২০১৪ থেকে মার্জিন ঋণের হার স্থায়ীভাবে ১:০.৫ কার্যকর হবে। অর্থাৎ গ্রাহকের তহবিলের অর্ধেক।
 
এ বিষয়ে আইডিএলসি  ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মার্জিন ঋণের নতুন এ হার শুধুমাত্র নতুন গ্রহকদের জন্য। পুরাতন গ্রহকরা এ নীতিমালার আওতায় আসবেন না। তাই আমি মনে করি এটা বাজারে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।