ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

শাহজিবাজারে কারসাজি

ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৫ কোটি টাকা জরিমানা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৫
ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৫ কোটি টাকা জরিমানা

ঢাকা: জ্বালানি ও বিদ্যু‍ৎ খাতের কোম্পানি শাহজিবাজার পাওয়ার লিমিটেডের(এসপিসিএল) শেয়ারের মূল্য কারসাজির অভিযোগে কয়েকজন বিনিয়োগকারী ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৫ কোটি টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
 
মঙ্গলবার(২ জুন’২০১৫) অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৫৪৬তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।


 
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়ায় প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে(পিআইএসএল) ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি সিকিউরিটিজ আইনগুলো ৩ মাসের মধ্যে পরিপালন করে কমিশনকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 
পিআইএসএল মিথ্যা ও অসত্য নিট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স তৈরির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অডিয়েন্স ১৯৯৬’র ১৮ ধারা ভঙ্গ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ডিলার হিসাব, বিনিয়োগকারীদের ক্যাশ হিসাব ও মার্জিন হিসাবে এভারেজ নিট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স’র ৪গুণ পর্যন্ত এসপিসিএল’র শেয়ার কিনেছে। যা মার্জিন রুলস ১৯৯৯’র রুল ৬’র লঙ্ঘন।

একক গ্রাহকের মার্জিন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি আইন লঙ্ঘন করেছ। মার্জিন রুলস ১৯৯৯’র রুল ৫ ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানটি একক গ্রাহককে এভারেজ নিট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স’র ২৫ শতাংশ’র বেশি মার্জিন ঋণ দিয়েছে।
 
পিআইএসএল’র করা অন্য অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে, গ্রাহকের হিসাবের শেয়ার ক্রয়ের আদেশ বাস্তবায়ন না করে ডিলার হিসাবে এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয় করা, এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয়ে পিআইএসএল সম্মিলিত গ্রাহক হিসাবের অর্থ ব্যবহার করা, পিআইএসএল ক্লায়েন্ট হিসাবে অনুমোদিত ঋণ অনুপাত রেশিও(১‍ঃ০.৫) এর অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ দেওয়া, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন পক্ষকে এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয়ে সম্পৃক্ত করে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করা।
 
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জরিমানা তালিকায় রয়েছে পিএফআই সিকিউরিটিজ। প্রতিষ্ঠানটিকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পিএফআই এসপিসিএল’র শেয়ার কিনতে সম্মিলিত গ্রাহক হিসাবের অর্থ ব্যবহার করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করেছে।
 
পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন পক্ষ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয়ে সম্পৃক্ত করেছে। এরমধ্যে বাজারে এসপিসিএল’র শেয়ারের কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি ও লেনদেনযোগ্য শেয়ারের ঘাটতি সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি করেছে।

একই সঙ্গে গ্রাহকের হিসাবে অনুমোদিত ঋণ অনুপাত রেশিও’র বেশি মার্জিন ঋণ দিয়েছে পিএফআই সিকিউরিটিজ।
 
অনিয়মে জড়িত থাকা আর এক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফিন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন পক্ষকে এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয়ে সম্পৃক্ত করে বাজারে শেয়ারটির কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে দর বৃদ্ধির অনিয়মের জড়িত।

পাশাপাশি গ্রাহকের হিসাবে অনুমোদিত ঋণ অনুপাত রেশিও’র বেশি মার্জিন ঋণ দিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছে প্রাইম ফিন্যান্স ক্যাপিটাল।
 
গ্রাহকের হিসাবে অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ দেওয়ার কারণে এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সার্প সিকিউরিটিজকে জরিমানা করা হয়েছে ২ লাখ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানটি ডিলার হিসাব, বিনিয়োগকারীদের ক্যাশ হিসাব ও মার্জিন হিসাবে তাদের এভারেজ নিট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স’র ১০০ শতাংশ’র বেশি এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয় করেছে। পাশাপাশি গ্রাহকের হিসাবে অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ দিয়েছে।
 
এসপিসিএল’র শেয়ারে অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ দেওয়ায় মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার বিএলআই ক্যাপিটালকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারসাজি করায় গ্যাটকো টেলিকমকে জরিমানা গুণতে হবে ৫ লাখ টাকা।

এই প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসপিসিএল’র লেনদেনযোগ্য শেয়ার ক্রয় ও তা সংরক্ষণের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে।

একই অনিয়মের কারণে লিবরা ট্রেডিং কর্পোরেশনকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 
বিপুল পরিমাণ এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয় করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় গোলাম মহিউদ্দিনকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এসপিসিএল’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান পিআরএল’র প্রত্যেক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক বিবরণীতে বাংলাদেশ একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড বিএএস-৮ পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় এসপিসিএল’র প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
 
আইন ভঙ্গের কারণে আবুল কালাম ইয়াজদানী, গোলাম মোস্তফা, নাসিমা আক্তার লতা ও স্টার শেয়ার বাজারের বিরুদ্ধে স্পেশাল ট্রাইবুনালে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে আবুল কালাম ইয়াজদানী বিও হিসাব পরিচালনার বিষয়ে কমিশনকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। অন্যরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয় ও সংরক্ষণের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করেছে।
 
এছাড়া এসপিসিএল’র শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করার মো. আমজাদ হোসেন ফকিরকে সতর্ক করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৫/আপডেটেড- ২১৪৯ ঘণ্টা
এএসএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।