ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারে ওষুধ, প্রকৌশল ও জ্বালানি খাত একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট লেনদেনের ৫২ শতাংশই রয়েছে এই তিনটি খাতের দখলে।
ডিএসইর খাত ভিত্তিক কোম্পানির তালিকায় দেখা যায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো মোট ২২ খাতে বিভক্ত। এই ২২ খাতে কোম্পানি আছে ৫৫৫টি। এরমধ্যে ওষুধ, প্রকৌশল ও জ্বালানি খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৭৬টি।
শতাংশ হিসাবে মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাড়ে ১৩ শতাংশ ওষুধ, প্রকৌশল ও জ্বালানি খাতের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ ১৩ শতাংশ কোম্পানির দখলেই রয়েছে মোট লেনদেনের ৫২ শতাংশ।
ডিএসইর জুলাই মাস শেষে তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাসটিতে লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে ওষুধ খাত। মোট লেনদেনের ২০ দশমিক ১৪ শতাংশই এ খাতটির দখলে। আগের মাস জুনে মোট লেনদেনে ওষুধ খাতের আবদান ছিলো ১৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৭টি।
ওষুধ খাতের পরেই রয়েছে প্রকৌশল খাত। জুলাই শেষে মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। জুনে মোট লেনদেনে প্রকৌশল খাতের অবদান ছিলো ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩১টি।
জুলাই শেষে লেনদেনে তৃতীয় স্থানে থাকা জ্বালানি খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি। জুলাইয়ে মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশই জ্বালানি খাতের। অবশ্য জুনে লেনদেনের শীর্ষে ছিলো এই খাতটি। ওই মাসে মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশই ছিলো জ্বালানি খাতে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুলাই শেষে মোট লেনদেনে ওষুধ, প্রকৌশল ও জ্বালানি খাত বাদে ডিএসইর বাকি ১৯টি খাতের প্রতিটির এককভাবে অবদান ১০ শতাংশের নীচে। এরমধ্যে ৫ শতাংশের ওপরে অবদান আছে মাত্র ৩টি খাতের।
এই তিনটি খাতের মধ্যে বস্ত্র খাতের অবদান ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। জুনে এই খাতের অবদান ছিলো ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। বিবিধ খাতের অবদান ৫ দশমিক ১১ শতাংশ। জুনে এ খাতের অবদান ছিলো ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
মোট লেনদেনে ৫ শতাংশের ওপরে অবদান থাকা বাকি খাতটি হলো ব্যাংক খাত। এ খাতের অবদান ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। জুনে যা ছিলো ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় ব্যাংক খাতের অবদান কমেছে।
এটি শুধু জুন-জুলাই মাসের চিত্র না। ২০১২ সালের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে এ খাতের অবদান কমছে। অথচ এক সময় শেয়ারবাজরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত হতো ব্যাংক খাত। শেয়ারবাজারের উত্থান-পতনে সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়তো এ খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম ওঠা-নামার ওপরে।
আগের বছরে অর্থাৎ ২০১৪ সালে মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ছিলো মাত্র ৯ শতাংশ। অথচ ব্যাংক কেলেঙ্কারির আগের বছরেও ২০১১ সালে লেনদেনের ৩০ শতাংশই ছিলো এ খাতের দখলে। এমনকি ২০১২ সাল শেষেও লেনদেনের শীর্ষে ছিলো ব্যাংক খাত। বছরটিতে মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ ছিলো ব্যাংক খাতে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। ২০১০, ২০১১ সালে ব্যাংক যে পরিমাণ মুনাফা করেছিলো এবং বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দিয়েছিলো তা এখন দিতে পারছে না।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া ও ব্যাংক ঋণের চাহিদা কমা এর প্রধান কারণ। মুনাফা ও লভ্যাংশ কমার কারণে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি মানুষের আস্থা হয়তো কিছুটি কমেছে। তবে শেয়ারবাজারে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম যে পর্যায়ে নেমেছে তার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ওষুধ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। এটির চাহিদা সব সময় থাকে। আর বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমার কারণে জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করছে। এরই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অন্য খাতগুলোর মধ্যে জুলাই শেষে সিমেন্ট খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর্থিক খাতের ৪ শতাংশ, টেলিযোগাযোগ ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ভ্রমণ ৩ দশমিক ১২ শতাংশ, খাদ্য ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও সিরামিক খাতের অবদান ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
বাকি সবকটি খাতের অবদান ১ শতাংশের ঘরে অথবা ১ শতাংশের নীচে। এরমধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১ দশমিক ২৩ শতাংশ, পাটের দশমিক ১০ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সেবা ও আবাসন ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আইটি দশমিক ৭১ শতাংশ, বিমা ১ দশমিক ৪০ শতাংশ, চামড়া দশমিক ৪৬ শতাংশ ও বন্ডের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ অবদান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৫
এএসএস/জেডএম