ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

‘অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার সর্ম্পকে ভাল ধারণা রাখেন না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
‘অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার সর্ম্পকে ভাল ধারণা রাখেন না’ মাতলুব আহমাদ। ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: সিএসপি অথবা বিদেশি কোনো ব্যাংকের অফিসার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হন তিনি। অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারের হাল ধরতে পড়াশুনা শেষে শুরু করেন ব্যবসা। কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে আজ ব্যবসায়ীদের নেতাও হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজ (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট। নাম তার আবদুল মাতলুব আহমাদ।

সফল এই ব্যবসায়ী একাধারে দেশের পুঁজিবাজার, বিমা খাত, ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ভারত, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অনেক চেম্বারের দায়িত্ব পালন করেন। তার গুলশানের বাসায় সম্প্রতি বাংলানিউজের মুখোমুখি হন তিনি।

একান্ত সাক্ষাতকারে তুলে ধরেন দেশের অর্থনীতি গতি-প্রকৃতি, আসন্ন বাজেট, পুঁজিবাজার, বিমা খাত এবং বিনিয়োগের সমস্যা ও সম্ভানা নিয়ে তার সুচিন্তিত মতামত। সাক্ষাৎকার নেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাহফুজুল ইসলাম। ছবি তুলেছেন স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট দীপু মালাকার

বাংলানিউজ: কেমন বাজেট চান?

মাতলুব আহম‍াদ:গত অর্থবছরের বাজেটে লোকাল ইন্ডাস্ট্রির (স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান) ওপর যে রকম ফ্রিডম চেয়েছিলাম অতোটা আসেনি। এবার লোকাল ইন্ডাস্ট্রির ওপর বেশি সার্পোট পাবো বলে আশা করছি। এই খাতে সার্পোট খুবই দরকার।

আমাদের ইন্ডাস্ট্রি গ্যাস ও বিদুৎ চায়, পাওয়ার চায়, ব্যবসায়ীরা চায় ট্যাক্স ইন অ্যান্ড আউটের ক্ষেত্রে সহায়তা ও স্বচ্ছতা। এসবে হয়রানি যতো কম হয় ততোই ভালো। সব মিলিয়ে, লোকাল ইন্ডাস্ট্রিজ বান্ধব একটা বাজেট দেখবো বলে আশা করছি।

এবার ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট হচ্ছে। দেশটি ছোট, এখানে জনসংখ্যা অনেক বেশি। এর জন্য আরো বড় বাজেট দরকার। যেখানে এক বাজেটের সমান অর্থ বছরে বিদেশে পাচার হয়। সেখানে বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকার হওয়া দারকার। আমরা ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেখার জন্য অধির আগ্র্রহে বসে আছি। সেক্ষেত্রে সময় হয়তো আরো তিন-চার বছর লাগতে পারে। মাতলুব আহমাদ।  ছবি: দীপু মালাকার

বাংলানিউজ: বাজেটে নতুন কি চমক থাকছে বলে মনে করেন?

মাতলুব আহমাদ:বাজেটে নতুন কোনো চমক এবার থাকবে না। তবে ভ্যাট অনলাইন এবং সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি(শুল্ক) ইফেক্ট এই দুটি নতুন করে কারেকশন করা হবে। আমি আশা রাখি, ডিউটি ট্রাকচারটা এমনভাবে করা হবে, যাতে লোকাল শিল্প একটু সুবিধা পাবে।

বাংলানিউজ: সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সামধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি?

মাতলুব আহমাদ: জনগণ আর অরাজকতা এক্সসেপট করবে না। বিগত দিনে দেখা গেছে, হরতাল দিলেও মানুষ তা গ্রহণ করে না। এখন মানুষ চিন্তা করে, কোন দলের ভিশন কি, ক্ষমতায় গেলে তারা জনগণের জন্য কি করবে?

কোনো দল যদি মনে করে ভাঙচুর করবে, তা হলে মানুষের ভোট পাবে না। কাজেই আমার বিশ্বাস, এবারের ইলেকশনে ভাঙচুর, মারপিট, হইচই হবে না। যদি কেউ এসব করেও, আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো। বাংলানিউজের মুখোমুখি মাতলুব আহমাদ।  ছবি: দীপু মালাকার

বাংলানিউজ: অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের ভূমিকা কম হওয়ার কারণ কি? কি করে এটা বাড়ানো যাবে?

মাতলুব আহম‍াদ: এটা ঠিক, অর্থনীতিতে যতটুকু অবদান রাখার কথা পুঁজিবাজার ততটুকু রাখতে পারছে না। তার তিনটি কারণ রয়েছে, এর মধ্যে প্রথম কারণ, পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতার অভাব। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, পুঁজিবাজারে ঢোকার সিস্টেম খুবই কমপ্লিকেটেড, দীর্ঘ মেয়াদি ও খুবই এক্সপেনসিভ।
তিন নম্বর কারণ হচ্ছে-পুঁজিবাজারে এসে যদি কোনো কোম্পানি ব্যবসা করতে না পারে তাহলে চাইলেও বেরিয়ে যাওয়ার পথ নেই। এর ফলে বাজারে ভালো ভালো কোম্পানি আসছে না। পুঁজিবাজারকে জনপ্রিয় করতে এসব বাধা দূর করতে হবে।

পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা কম বলে বাজারের প্রতিও সরকারের আগ্রহ কম। তার কারণ, আমাদের যে অর্থমন্ত্রী (আবুল মাল আবদুল মুহিত)আছেন, তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে  ভাল ধারণা রাখেন না। ‘হি ডাজ নট ফিল পুঁজিবাজার ইজ এ সেইফ মুড অফ রাইজিং মানি’। যার জন্য পুঁজিবাজার স্লোলি চলছে।

বাংলানিউজ:বিমা সেক্টরকে নিয়ে সাধারণ মানুষের অবিশ্বাস কেন?

মাতলুব আহমাদ: বিমা খাতটা যখন শুরু হয়, তখন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মানুষের মনে ইন্স্যুরেন্স মানে চুরি, প্রতারণা, ঘুষ এসব ধারণা তৈরি হয়েছে। অথচ ইন্স্যুরেন্স করা হয়েছে মানুষকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্য। এখনো সেই ধারা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি কোম্পানিগুলো। এখনো ক্লেম হলে টাকা দেয় না। এসব কারণে বিমা কোম্পানির উপর মানুষের আস্থা উঠে গেছে।

আমরা শুধু আয় করবো, কিছু দেবো না। প্রিমিয়াম নেবো, ক্লেইম দেবো না। এই প্রবণতা থেকে বিমা কোম্পানিগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়ঃ ১১১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭
এমএফআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।