ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ইপিএস কারসাজিতে ৫৬ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে আমরা নেটওয়ার্ক

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
ইপিএস কারসাজিতে ৫৬ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে আমরা নেটওয়ার্ক ইপিএস কারসাজিতে ৫৬ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে আমরা নেটওয়ার্ক

ঢাকা: শেয়ার প্রতি কোম্পানির আয় (ইপিএস) কারসাজির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৫৬ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড। ইপিএস কারসাজির পাশাপাশি শ্রম আইনও মানছে না কোম্পানিটি। এই অবস্থায় কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করলে তার যৌক্তিক দাম ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ বিনোয়োগকারীদের মধ্যে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, প্রিমিয়ামসহ টাকা তোলার জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে গত ০৬ আগস্ট থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। চলবে ১৬ আগস্ট (বুধবার) পর্যন্ত।

এ জন্য নিয়ম অনুসারে কোম্পানিটি রোড শো এবং বিডিং শেষ করেছে।
 
আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, আমরা নেটওয়ার্ক কোম্পানির ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে ইপিএস গণনা ছাড়াই ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি শেয়ার ইস্যু করেছে। ফলে ৩ দশমিক ২২ টাকার পরিবর্তে কমিয়ে তা ৩ দশমিক ১৬ টাকা ইপিএস দেখানো হয়েছে।
 
অথচ বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্স (বিএএস)-৩৩ লঙ্ঘন করে ভুল ইপিএস দেখিয়েছে আমরা নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। হিসাব মান অনুযায়ী, ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে ইপিএস গণনা করতে হয়।
 
প্রতিবেদনের নগদ প্রবাহ (ক্যাশ ফ্লো) হিসাবের নোট-৩ এর সমাপনী অগ্রিম, ডিপোজিট ও প্রিপেমেন্টস হিসাবে ৪ কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও প্রারম্ভিক ৩ কোটি ১৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু ব্যালেন্স শিটে সমাপনী হিসাবে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার ও প্রারম্ভিক হিসাবে ৫ কোটি ১৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
 
বিএএস-৩৬ অনুযায়ী, অবচয় যোগ্য সম্পদের বর্তমান মূল্য যদি ভবিষ্যতে সুবিধা আনার তুলনায় কম হয় তাহলে ইমপেয়ারম্যান্ট করতে হয়। এতে ব্যয় বাড়ে ও সম্পদ কমে আসে। যা হওয়াটা স্বাভাবিক বলে মনে করেন হিসাববিদরা। কিন্তু আমরা নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য কোম্পানির মতো ইমপেয়ারম্যান্ট লোকসান না দেখিয়ে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে।
 
নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) করপোরেট গভর্নেন্স ফাইন্যান্সিয়াল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, যেকোন কোম্পানির ক্ষেত্রে ইমপেয়ারমেন্ট লস হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কোম্পানিগুলো গতানুগতিকভাবে তা না করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে থাকে।
 
এদিকে আইন অনুযায়ী, ২০০৬ সাল থেকে শ্রমিক ফান্ড গঠন বাধ্যতামূলক হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সাল থেকে এ ফান্ড গঠন করে। এছাড়া ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ফান্ড গঠন করা হলেও তা বিতরণ না করে আইন লঙ্ঘন করেছে আমরা নেটওয়ার্কস।
 
অপরদিকে প্রতি বছর কমে যাচ্ছে ইক্যুইটি (নিট সম্পদ) ব্যবহারের তুলনায় রিটার্নের পরিমাণ। কোম্পানির ২০১১ সালে রিটার্ন অন ইক্যুইটি হয় ২৯ দশমকি ৩৩ শতাংশ। ২০১২ সালে কমে হয় ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যা ২০১৩ সালে ২৩ দশমকি ২৩ শতাংশ, ২০১৪ সালে ১৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও ২০১৫ সালে ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ হয়েছে।
 
এ হিসাবে কোম্পানিটিতে নিট সম্পদ ব্যবহারের তুলনায় মুনাফার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ফলে বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করার পরামর্শ বাজার সংশ্লিষ্টদের।
 
পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহের লক্ষে কোম্পানিটি ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল রোড শো করে। এর পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে ১২ কোটি ৩৮ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৫ টাকা ঋণ পরিশোধ ব্যয় করবে। কোম্পানির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য (বিএমআরই) ১৫ কোটি ৫২ লাখ, ডাটা সেন্টার স্থাপনে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ও বিভিন্ন জায়গায় ওয়াইফাই হটস্পট স্থাপনের জন্য ১৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যবহার করবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়।
 
এ বিষয়ে কোম্পানির সিএফও এনামুল হককের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
  
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।