সিঙ্গাপুর: দুই বেডরুমের ছোট্ট একটি ফ্ল্যাট। চারজন মানুষ ভালোভাবেই থাকতে পারবে সেখানে।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়া সেলেগি রোডের একটি ফ্ল্যাটে মানবাধিকার সংস্থা মাইগ্রেশন ওয়ার্কার্স সেন্টারের এক আচমকা অভিযানে বিষয়টি বের হয়ে আসে।
রুমে বসবাসরত সবাই বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আসা নির্মাণ শ্রমিক। ‘হ্যারি কন্সট্রাকশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স’ নামক একটি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তারা সিঙ্গাপুরে আসেন।
বিদেশ থেকে শ্রমিক আনার পূর্বশর্ত হিসেবে নিয়োগকর্তাকেই শ্রমিকের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু খরচ বাঁচাতে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের শ্রমিকদের এই ধরনের ছোট্ট পরিসরে থাকার ব্যবস্থা করে থাকে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
বাসি খাবার, ময়লা ও দুর্গন্ধময় কাপড় ও ব্যাগের ছড়াছড়ি আর স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে দম বন্ধ হয়ে ওঠা পরিবেশের মধ্যে একে অন্যের গায়ের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে শুয়ে থাকা মানুষগুলো যেন নড়াচড়া করারই সুযোগ পাচ্ছিলেন না। রুমগুলোতে তিল পরিমাণ ঠাঁই না থাকায় অনেকে রান্নাঘর আর বারান্দাতেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর তখনই সেখানে হানা দেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মাইগ্রেশন ওয়ার্কার্স সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক বার্নার্ড মেনন জানান, এ ফ্ল্যাটের একজন শ্রমিক তাদের হটলাইনে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করলে তারা এ অভিযান চালান।
মেনন বলেন, এ ফ্ল্যোটের অবস্থা দেখার পর আমরা সাথে সাথে বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়কে জানাই। মানুষের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আমরা আশা করব, মন্ত্রণালয় এই কোম্পানি ও তার মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেবে।
এর পরেই শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উক্ত ফ্ল্যাটে আসেন। তারা ফ্ল্যাটে বসবাসরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য নেন এবং ছবি তুলে রাখেন।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে সর্বোচ্চ আট জন মানুষ থাকতে পারে। এতগুলো মানুষকে এভাবে একসাথে আমানবিকভাবে রাখাটা নিয়োগকর্তার নিষ্ঠুরতারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছি এবং এই কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে ।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে উক্ত কোম্পানির মালিকের দশ হাজার ডলার জরিমানা এবং সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। একইসঙ্গে ওই কোম্পানির সিঙ্গাপুরে ব্যবসার লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৪