সিঙ্গাপুর: মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশি কর্মী শাহ আলমের (৩১) চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত ৩০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার (আঠার লক্ষ টাকা) অনুদান সংগ্রহ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে ‘আর্চ টাইপ’ নামের একটি ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় গত অক্টোবর মাসে তার ব্রেন ক্যান্সার ধরা পড়ে।
শাহ আলম এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ চার বছর নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পর সম্প্রতি তার মেধা ও যোগ্যতার বলে পদোন্নতি হয়ে সুপারভাইজার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তার বেতনও বেড়ে যায়। নিজেকে সবে একজন সুখী মানুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছিলেন তিনি। বাড়িতে অপেক্ষারত স্ত্রীকে কথা দিয়েছেন- আর্থিক অবস্থা আরেকটু ভালো হলেই তাকে সিঙ্গাপুরে বেড়াতে নিয়ে আসবেন।
ঠিক তখনই তার সব স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ করে দিয়ে ধরা পড়ে এই মরণব্যাধি ব্রেন ক্যান্সার। ডাক্তার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন-এক বছরের মধ্যে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে তাকে আর বাঁচানো যাবেনা। কারণ, এই ক্যান্সার ইতিমধ্যেই তৃতীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
অন্য কোন কোম্পানি হলে হয়তো তাকে ‘কাজের জন্য অক্ষম’ বলে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতো।
কিন্তু তার নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান ‘আর্চ টাইপ’ মানবতার এই দায় এড়িয়ে যায়নি। তারা সিঙ্গাপুরের সবস্তরের মানুষের কাছে তাদের কর্মী শাহ আলমের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালায়।
তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই শাহ আলমের জন্য গঠন করা তহবিলে টাকা পাঠান। আবার অনেকেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে না পারলেও খোঁজ খবর নিয়ে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করেন।
‘আর্চ টাইপ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুইস চিয়া বলেন, আমরা শাহ আলমের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব। আমরা তার চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে এ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ৬০ হাজার ডলারের বেশি খরচ করেছি। তার মধ্যে ৩০ হাজার ডলার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান হিসেবে পেয়েছি, আর বাকি টাকা আমাদের কোম্পানির নিজস্ব তহবিল থেকে দিয়েছি।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় আমরা এখন তাকে বাংলাদেশে রেখে তার ক্যান্সারের চিকিৎসা করাব। ইতিমধ্যেই ঢাকা শহরে তার থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন রেডিওথেরাপি আর কেমোথেরাপির জন্য আমরা ঢাকায় একটি ভাল হাসপাতাল খুঁজছি।
লুইস চিয়া বলেন, আমরা সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসকে বলেছিলাম, তারা যেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালকে শাহ আলমের চিকিৎসার খরচ কমানোর অনুরোধ করেন। তাহলে হয়তো কম খরচে তার পুরো চিকিৎসা সিঙ্গাপুরেই করা যেত। কিন্তু দূতাবাস আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে লেবার ও ওয়েলফেয়ার কাউন্সেলর আয়েশা সিদ্দিকা শেলী বলেন, আমরা তাদের অনুরোধে সাড়া দেইনি, কারণ আমরা এটাকে একটা উদাহরণ হিসেবে রাখতে চাই না। সিঙ্গাপুরে অনেক বাংলাদেশি কর্মী আছেন। আজ আমরা শাহ আলমের জন্য সিঙ্গাপুরের হাসপাতালকে অনুরোধ করলে কালকে আরেকজন এসে আমাদের কাছে ধর্ণা দেবেন। সবার চাহিদা পূরণ করা তো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪