সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে: এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও সার্বিক উন্নতির দিক থেকে প্রথম কাতারে আছে সিঙ্গাপুর।
কুয়ালালামপুর থেকে সিঙ্গাপুর বাসে পাঁচ ঘণ্টার পথ।
দুপুরের ফ্লাইটে কুয়ালালামপুর থেকে রওনা হলাম। খুবই কম সময়ের ভ্রমণ। গন্তব্য চাঙ্গি বিমানবন্দর।
চাঙ্গি বিমানবন্দরকে বলা হয় পৃথিবীর দ্বিতীয় সেরা বিমানবন্দর। সুবিশাল তিনটি টার্মিনাল রয়েছে এখানে। একটি টার্মিনাল থেকে অন্যটিতে যেতে ব্যবহার করতে হয় টার্মিনাল ট্রেন। কিছুক্ষণ পর পর বিমানবন্দর কর্মকর্তারা আপনাকে দিক নির্দেশনায় সাহায্য করবেন। প্রতিটি টার্মিনালের একেকটি বিশাল শপিং মলের সমান।
সিঙ্গাপুর পুরো শহরটাই এমন পরিকল্পিত যে, নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ছোট শহরজুড়ে রয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন পাতাল রেল। আর রাস্তাঘাট এতোটাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন যে, দেখে মনে হবে মাত্র কয়েকদিন আগেই নির্মাণ করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের প্রধান ভাষা ইংরেজি। পাশাপাশি চীনা, মালয় ও তামিল ভাষারও প্রচলন আছে। সিঙ্গাপুরের অধিবাসীদের বেশির ভাগই চীনা বংশোদ্ভূত। এরপর রয়েছে মালয় ও ভারতীয় তামিল বংশোদ্ভূত। প্রবাসীদের সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো।
নিয়ম-শৃঙ্খলার দিক থেকে দেশটির তুলনা হয় না। কেউ কেউ মজা করে সিঙ্গাপুরকে ‘ফাইন সিটি’ বলে থাকেন। কারণ নিয়ম ভঙ্গ করলেই সিঙ্গাপুরে আপনাকে ফাইন (জরিমানা) গুনতে হতে পারে।
শহর ঘুরতে ঘুরতে দেখা হলো প্রবাসী বাংলাদেশি মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে। গত ২৭ বছর ধরে তিনি আছেন এই দেশে। নামকরা একটি অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। হাসিমাখা মুখ। পরিচয়ের পর বললেন, আমার ছেলে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করছে। চলো, তোমাকে সেখানে নিয়ে যাই। বসে গল্প হবে।
আমি তার সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতার ব্যাপারেই আগ্রহী শুনে বলতে লাগলেন, সিঙ্গাপুর যে খুব কম সময়ে চট করে উন্নতি করেছে এমনটা কিন্তু নয়। যেদিন তারা মালয় থেকে আলাদা হয়ে গেলো তারপর থেকেই দেশ গড়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। এ দেশের নিয়মকানুন অনেক স্বচ্ছ। বিভিন্ন গোত্রের মানুষ থাকলেও প্রতিটি নাগরিককে সমান চোখে দেখা হয়। কোনো কাজে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে বর্ণবৈষম্যকে বড় অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। কারো প্রতি বৈষম্য মানা হয় না। এখানকার রাস্তাঘাট, দোকান, বাড়িগুলো দেখলে মনে হয়, কিছুক্ষণ আগে রং করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরিয়ানদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ওরা অনেক মার্জিত ও সৌখিন। সারা মাসে হয়তো একটা শার্ট পড়বে। তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে নামি ব্র্যান্ডের।
এখানে বর্তমানে বাংলাদেশি কমিউনিটি ভালো অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক বাংলাদেশি পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হয়েছেন সিঙ্গাপুরে। তিনটি বাংলা স্কুলও রয়েছে। পাঠ্যসূচিতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলা বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
দূরে দেখা গেলো একদল তরুণ ক্রিকেট অনুশীলন শেষে ফিরছে। কামরুজ্জামানের ছেলে জাকি ফিরতেই চোখে পড়লো ব্যটের গায়ে ইংরেজিতে লেখা সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যে আমরা কতোটা ভালোবাসি, তা জাকি’র ব্যাটই বলে দেয়।
জীবনযাপনের খরচ মালয়েশিয়ার তুলনায় এখানে কিছুটা বেশি। বর্তমানে মালয়েশিয়ার মুদ্রামান কমে যাওয়ায় সিঙ্গাপুর ডলারের মান রিংগিতের তিন গুনে পৌঁছেছে।
এটি আমার দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর ভ্রমণ হলেও মাত্র তিন বছরে দেশটির বড় ধরনের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। গোটা শহর একদিনেই ঘুরে ফেলা যাবে। তবে সময় নিয়ে ঘুরলে অনেক কিছু দেখা ও জানার আছে সিঙ্গাপুরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
আরএম