দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বৃহত্তম এবং পুরনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার, ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের (তাড়াইল-করিমগঞ্জ উপজেলা) মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি।
বিগত তিনটি নির্বাচনে (২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮) মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এই আসনে মনোনয়ন এবং নির্বাচিত হয়ে আসছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। সেই হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে আসনটি নৌকার মাঝি শূন্য। এবার সেই শূন্যস্থান পূরণে মাঠে নেমেছেন জাতীয় ফুটবলার হিমেল।
আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে হিমেল জানান, ‘আমাদের পরিবার আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে বহু বছর ধরে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে আমরা সার্বক্ষণিক জনগণের সেবায় নিয়োজিত আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। আমার বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট জিন্নাতুল ইসলামের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমার রাজনীতিতে আসা। খেলাধুলার পাশাপাশি গেল ১০-১২ বছর ধরে আমি কিশোরগঞ্জ নিজ এলাকার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কর্মব্যস্ততার ফাঁক গলে প্রতি সপ্তাহে আমি এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করার চেষ্টা করি। তাদের পাশে থাকা এবং এলাকার নানাবিদ সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগদান করছি। আমার দুই বড় ভাইও কিশোরগঞ্জ আওয়ামী রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ’
আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে, তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা কিশোরগঞ্জের জনপ্রিয় নেতা অ্যাডভোকেট জিন্নাতুল ইসলামের সুযোগ্য সন্তান হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয়ী হিমেল আরো বলেন, ‘বিগত তিনটি নির্বাচনে আমাদের আসনে মহাজোটের প্রার্থী একজন সিনিয়র নেতা মনোনয়ন পেয়ে আসছেন। গেল ১৫ বছর এখানে নৌকার মাঝি শূন্য। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা দেশরত্ন শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনীত করেন এবং আমি নির্বাচিত হলে তারাইল-করিমগঞ্জের মানুষের ভাগ্যান্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। রাতদিন পরিশ্রম করে যাবো। তরুণ প্রার্থী হিসেবে আশাকরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিবেচিত করবেন, আমাকে কাজের সুযোগ দেবেন। যেভাবে তিনি দলে অনেক তরুণদের সুযোগ দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টা আর দূরদৃষ্টি-বিচক্ষণ নেতৃত্বে আমাদের দেশ উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্বে এখন সুপরিচিত। তবে দেশ যেভাবে উন্নয়ন-উন্নতি করছে আমাদের আসনে নৌকার মাঝি না থাকায় সেভাবে এগুতে পারেনি। আমি মনোনয়ন পেলে তাড়াইল-করিমগঞ্জ উপজেলার মানুষের ভাগ্যান্নয়নে কাজ করব, এলাকার উন্নয়নে নিজেকে সপে দেব। ’
হিমেলের বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট জিন্নাতুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের একজন প্রথিতযশা আইনজীবী, কৃতী রাজনীতিক, সমাজসেবক ও ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলাধীন জাওয়ার গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান জিন্নাতুল ইসলাম ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ মানুষ ছিলেন। জেলার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব দীর্ঘদিন পালন করেছেন। ২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর জিন্নাতুল ইসলাম পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
কিশোরগঞ্জের মানুষের ভাগ্যান্নয়নে নিবেদিত একজন আওয়ামী নেতা জিন্নাতুল ইসলামের সন্তান হিসেবে গর্বিত হিমেল আজ মনোনয়ন পত্র জমাদান শেষে বাবার প্রসঙ্গে বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে আমার বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট জিন্নাতুল ইসলাম মনোনয়নপ্রাপ্ত হন। বাবা আজ পৃথিবীতে নেই। জিন্নাতুল ইসলামের সন্তান হিসেবে, লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জাতীয় ফুটবলার হিসেবে দেশকে দীর্ঘসময় সেবা দিয়েছি। কতটা কি করতে পেরেছি অথবা কী পারিনি- তার বিবেচনার ভার আপনাদের। আমি শুধু আমার বাবার মতো দেশসেবক হতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো আন্তর্জাতিক নেতা হতে চাই। কিশোরগঞ্জ তাড়াইল-করিমগঞ্জবাসীর সেবা করতে চাই। ’
২০০০ সালে ঢাকার ফুটবলে যাত্রা শুরু তারকা গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেলের। ২০০৬ সালে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে হংকংয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় ফুটবল দলে অভিষেক। টানা দুই বার এশিয়ান গেমসে (২০০৬ ও ২০১০) খেলা গোলরক্ষক হিমেল। দীর্ঘ ইনজুরির (চারবার সার্জনের ছুরির নিচে যাওয়া) পরও দেড় দশক জাতীয় দলে খেলেছেন। দেশের সর্বোচ্চ ঘরোয়া ফুটবল আসর প্রিমিয়ার লিগে ২০০৭ থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত খেলেছেন। দেশের সব বড় ক্লাব আবাহনী, মোহামেডান থেকে শেখ জামাল, শেখ রাসেল, আরামবাগ, চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে খেলেছেন। প্রিমিয়ার লিগ থেকে স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আসরে দেশের জন্য অনেক সাফল্য বয়ে এনেছেন মাজহারুল ইসলাম হিমেল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
এআর