বুয়েনস আইরেস: আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)’র সভাপতি হুলিও গ্রন্দোনা ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর কার্লোস বিলার্দোর ওপর বেজায় ক্ষেপেছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। দুজনের তীব্র নিন্দা করেছেন সদ্য বিদায়ী কোচ।
৮৬’র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক মনে করেন কথা রাখেননি এএফএ সভাপতি। বুধবার স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ম্যারাডোনা বলেন,“গ্রন্দোনা আমার সঙ্গে মিথ্যা বলেছেন আর বিলার্দো বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ”
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে হারের পরও ম্যারাডোনার ওপর আস্থা রেখেছিলেন এএফএ সভাপতি। দেশে ফিরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও সম্মান পেয়েছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ফুটবলার।
লিখিত বক্তব্যে ম্যারাডোনা জানিয়েছেন,“দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ থেকে আমরা যখন ছিটকে পড়ি গ্রন্দোনা তখন সাজঘরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন আমার কাজে তিনি খুবই খুশি। কোচ হিসেবে থেকে যাওয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন। ”
ম্যারাডোনার সমালোচনার তীর বেশি ছুটেছে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বিলার্দোর দিকে। তাঁর মতে,“বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ায় সবাই যখন বিষন্ন ঠিক তখনই অন্ধকারে বসে বিলার্দো আমার বিদায়ের ছক কষছিলো। ”
আর্জেন্টাইন ফুটবলের সাবেক মহাতারকার কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০০৮ সালের নভেম্বরে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যদিয়ে। অভিষেকে খুবএকটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। একসময় বিশ্বকাপে খেলাটাই অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ে। ভাগ্য সহায় হওয়ায় শেষে বিশ্বকাপের টিকিট পায় ম্যারাডোনার দল।
এরপরই সংবাদ সম্মেলনে কড়া সমালোচনা করায় ফিফা দুই মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিষিদ্ধ করে আর্জেন্টাইন এই কোচকে। এখানেই শেষ নয় দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে অন্তত ১০০ জন ফুটবলারকে পরখ করে দেখেছেন ম্যারাডোনা। তাঁর সময়েই বলিভিয়ার মাঠে ৬-১ গোলে হারের লজ্জাও সইতে হয়েছে ফুটবল পাগল আর্জেন্টাইনদের।
কিন্তু বিশ্বকাপে যখন একের পর এক জয় পেতে থাকে মেসি-ম্যারাডোনার দল তখন থেকে অন্যতম ফেভারিটের মর্যাদা পায় আর্জেন্টিনা। যদিও শেষটা ভালো হয়নি।
ম্যারাডোনা বলেন, জার্মানির কাছে হারের দুঃখ এখনো তিনি ভুলতে পারেননি। অথচ এএফএ থেকে তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
কোচ হিসেবে জাতীয় দলের সঙ্গে থেকে যেতে চেয়েছেন ম্যারাডোনা। কিন্তু গ্রন্দোনা যখন সহযোগী সাতজন স্টাফকে বিদায় দেওয়ার কথা বলেছেন তখনই বেকে বসেছেন। আলোচনার টেবিল ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন এএফএ সভাপতির সামনে দিয়ে। বলেন,“সে জানে সহযোগী স্টাফদের ছাড়া আমার চলবে না। তাদের একজনকেও বাদ দেওয়ার পক্ষে ছিলাম না আমি। ”
“আর্জেন্টিনা ফুটবল জার্সির জন্য আমি নিজেকে উজার করে দিয়েছি। দুঃসময়ে দলের দায়িত্ব নিয়েছি। অথচ কাজ শেষ না করেই বিদায় নিতে হলো আমাকে” বলেছেন ম্যারাডোনা।
এদিকে ম্যারাডোনার অভিযোগের ভিত্তি খুঁজে পাচ্ছেন না এএফএ সভাপতি হুলিও গ্রন্দোনা। সাংবাদিকদের তিনি বলেন,“আমার তো মনে হয় না এখানে বিশ্বাসঘতকতার মতো কিছু হয়েছে। আমরা দলের ভালোর জন্য কোচিং স্টাফ পরিবর্তন চেয়েছিলোম। তাঁকে বিদায় করতে চাইনি। তাঁর দৃষ্টিতে এটা বিশ্বাসঘাতকতা হতে পারে। ”
ম্যারাডোনার বিদায়কে দুঃখজন মনে করছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ। আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন,“সে (ম্যারাডোনা) খুবই কঠিন সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলো। অনেকেরই ধারণা হয়েছিলো আমরা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবো না। ”
রাষ্ট্রপতির দৃষ্টিতে,“ম্যারাডোনার জন্য আমার খুবই খারাপ লাগছে। বিশ্বকাপে দলের পারফরমেন্স যথেষ্ট ভালো ছিলো। জানি না গ্রন্দোনার সঙ্গে তার কি হয়েছে। তবে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়া উচিৎ মনে হয়। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘন্টা, জুলাই ২৯, ২০১০