বাসন্তী রঙে নিজেদের রাঙিয়ে রাজধানীর রাজপথ, উদ্যান, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বা চারুকলার বকুল-তলা ঘুরে যারা ক্লান্ত আর এখন অন্যকোথাও যাবার কথা ভাবছেন। তাদের জন্য এক অপরূপ গন্তব্য হতে পারে—রুমা।
রুমাতেই দেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। আর চট্টগ্রাম থেকে যেকোন যানবাহনে ছয় ঘণ্টা সময়ে অনায়াসে পৌঁছানো যায়। রুমায় পৌঁছে প্রথমেই যেখানে যাওয়া যেতে পারে তা হলো রিজুক জলপ্রপাত। রুমা বাজার থেকে নৌকা নিয়ে এক ঘণ্টার কম সময়ে রিজুক জলপ্রপাতে পৌঁছানো যায়। রিজুক জলপ্রপাতে যাওয়ার সময় শঙ্খ নদীর দুই পাড়ের সবুজ আবাদি জমির নয়নাভিরাম দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। বসন্তে রুমার আকাশ নীল ও শঙ্খ নদীর পানির স্রোত কম থাকায় নদীর পানিকে মনে হতে পারে প্রাকৃতিক আয়না। সেখানে আশপাশের সকল কিছুই প্রতিফলিত হয়। দূর থেকে মনে হতে পারে, পাহাড়ের গায়ে কেউ নীল রঙের একটা পোচ দিয়ে দিয়েছে। বসন্তে রিজুক জলপ্রপাতের পানির প্রবাহও অবাক করার মতো। রিজুক জলপ্রপাতের পাশ দিয়ে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচুতে উঠলেই দেখা যাবে তিনটি ঝর্না মিলিত হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে রিজুক জলপ্রপাতকে বাঁচিয়ে রেখেছে। জলপ্রপাত থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই মারমা ও বমদের আকর্ষণীয় বাড়ি।
রিজুক জলপ্রপাত
পাহাড়ি সংস্কৃতির এসব বাড়িতে এই মুহূর্তে থাকার ব্যবস্থা নেই ভ্রমণকারীদের। তবে হিমালিকা প্রকল্পের মাধ্যমে খুব শীঘ্রই এমনসব বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হবে বলে কথাবার্তা শোনা গেল।
রুমা থেকে ইট বিছানো একঘণ্টার রাস্তা ধরে চলে যেতে পারেন আরথাপারার লুংমাইচাম। টেবিলসদৃশ পাথরের উঁচু লুংমাইচাম। এ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পাশের দেশের পাহাড়গুলোও দেখা যায়। স্থানীয়রা বলাবলি করে এই পাহাড়ে নাকি এককালে ভূতেদের বসবাস ছিল!
লুংমাইচাম পাহাড়
রুমা থেকে একটু দূরের স্থান, যেমন বগা লেক বা কেওক্রাডং যেতে হলে নিরাপত্তার জন্য রুমা বাজারে পর্যটক নিবন্ধন কেন্দ্রে নাম নিবন্ধন করতে হয় এবং সঙ্গে একজন গাইড নিতে হয়। উল্লেখ করা দরকার, নিবন্ধন কেন্দ্রে দায়িত্বরতদের আন্তরিকতা অসীম, পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে নিবন্ধনের কাজ শেষ হয়ে যায়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় দরকারি অনেক পরামর্শও।
কেওক্রাডং ভ্রমণকালে হাতে যাদের সময় কম—রুমা বাজার থেকে আট হাজার টাকায় একটি ‘চাঁন্দের গাড়ি’ ভাড়া করে নিতে পারেন। এ ব্যবস্থায় দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা সম্ভব। আর যদি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হন তো হেঁটে রওনা দিতে পারেন। কেওক্রাডং যাওয়ার পথে ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পার হলেই সামনে পড়বে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বগা লেক। আকাশের একমুঠো নীল নিয়ে বগা লেক নিজেও ধারণ করেছে সেই বর্ণিল রঙ। পাহাড়ের চূড়ায় নীল জলের আস্তর নীলাকাশের সাথে মিশে তৈরি করেছে এক প্রাকৃতিক কোলাজ—আকাশ, পাহাড় আর জলের মিতালি। বগা লেকের পাশে বমদের গ্রামে রাত্রিযাপন করতে চাইলে তিন বেলা থাকা-খাওয়াসহ প্রতিদিন ২০০/৩০০ টাকা পড়বে। সূর্য এখানে অনেক দেরি করে ওঠে, তাই এখানকার মানুষ অনেক আরামপ্রিয়। বগালেককে ঘিরে অনেক উপকথা। এরমধ্যে ড্রাগন রাজার গল্পটি বেশি প্রচলিত। শুনে নিতে পারেন স্থানীয়দের মুখেই!
বগালেক
চান্দের গাড়িতে আরো এক ঘণ্টার মতো চললে পৌঁছে যাবেন দেশের অন্যতম উঁচু শৃঙ্গ কেওক্রাডংয়ে। তাজিংডং চিহ্নিত হবার আগ পর্যন্ত এটি ছিল দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এখানে পৌঁছে মন পুলকিত অজেয়কে জয় করার আনন্দে। বর্ষাকালে রুমার রূপ একটু আলাদা থাকলেও বসন্তে রুমাতে যাবার মজাই আলাদা। রুমা যেন দেশের অন্যতম সুন্দরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
টিকে/