হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, এখানে ভোর ছয়টা বাজে। বাংলাদেশের সময় তখন সকাল ৯টা হয়ে গেছে।
কফিলউদ্দিন নামের এই বাংলাদেশি নগর-পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার রহিমা নগর গ্রামে। হিজরা রোডের কিছু এলাকা তার কাজের আওতাধীন। এই হলো ঐতিহাসিক-পুণ্য স্মৃতিময় হিজরা রোড, যে পথে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই পথ পরিচ্ছন্ন করার কাজে ভীষণ খুশি কফিল। মনের আনন্দে কাজকে উপভোগ করেন তিনি।
দু'দণ্ড কথা বলি তার সাথে। দেশের নানা খবরের জন্য মন তার আনচান করে। হাইস্পিড ওয়াইফাই সুলভ হওয়ায় নিজের গ্রামে দ্রুত যোগাযোগ করতে অসুবিধা হয় না তার। 'এ দেশে মোবাইল ফোনে টক টাইমের সাথেও প্রচুর ডাটা দেওয়া হয়। অনলাইনে বাংলাদেশের টিভি, নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে সব খবর পাই আমরা। আজ ১৬ ডিসেম্বর দেশাত্ববোধক গান ও নাটক দেখবো', জানান তিনি।
আলাপকালে তার কাছ থেকে আরও জানা যায়, সৌদিতে কাজের অবসর খুবই কম। ছুটি নেই বললেই চলে। ডিউটি শেষেও কাজ করতে হয়। পরিবার ও দেশের প্রতি দায়িত্ব কোনও ফুরসত দেয় না প্রবাসে শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত কর্মীদের।
সৌদিতে বিভিন্ন কাজে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত থাকলেও নগর-পরিচ্ছন্নতায় তাদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। মক্কা বা মদিনায় আরবি ভাষা না জেনেও যে কোনও বাংলাদেশি এদের কাছ থেকে প্রভূত সাহায্য পান। ঠিকানা হারিয়ে গেলে খুঁজে দিতে কিংবা মালপত্র প্যাকিং করতে ডাক পেলেই ছুটে আসেন এসব প্রবাসী কর্মী। ডিউটির শেষে তারা নানা কাজে লিপ্ত থাকেন আয়-রোজগার বাড়ানোর প্রয়োজনে। টাকা বাঁচাতে একজনের খাবার কিনে দুই-তিনজন ভাগ করে খান। সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতায় একে অপরকে জড়িয়ে রাখেন নিবিড় মায়া আর ভালোবাসায়।
ঊষর মরুর প্রান্তে ঘাম-ঝরানো শ্রমক্লান্ত-প্রবাসী হৃদয় অনাবিল শান্তি পায় বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল স্মৃতিতে। সুদূর বিদেশে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ স্বাধীনতা ও বিজয়ের আনন্দে নেচে ওঠে তাদের মন-প্রাণ। তাদের বুকের গভীর-গহীন থেকে উচ্চারিত 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' ধ্বনিপুঞ্জ যেন স্পর্শ করে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি ও আত্মাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭
এমপি/জেএম