শ্রীমঙ্গল থেকে: হাজারো প্রজাতির পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ, হরিণ, বানরসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির জীবজন্তু আর আকাশ ছোঁয়া সারি সারি বৃক্ষরাজির সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকরা আসেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। উদ্যানের ভেতরেই খাসিয়া পুঞ্জি, সেখানে পাহাড়ের বৃক্ষে-বৃক্ষে খাসিয়া পানের চাষ করেন খাসিয়ারা।
আনারস বাগান, চা বাগান আবার কোথাও লেবু বাগান দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমণপিপাসুরা। কিন্তু ডিপ ফিজাপ এরিয়া; সে আবার কী?
মাধবপুর লেক ঘুরে ফেরার পথে লাউয়াছড়ার ডিপ ফিজাপ এরিয়া উদ্দেশে যাত্রা শুরু। অটোরিকশা চালক, পথচারী ও এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাই যথাযথ লোকেশন। নিরাশ হতে হয় তাদের উত্তরে, ভেঙে বলি- ভাই, যে বনে গেলে শীত লাগে সেখানে যাব? তারা জানায়, লাউয়াছড়ায় এমনিতেই ঠাণ্ডা, বনের গহীনে গেলে ঠাণ্ডা আরও বাড়ে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেন না কোথায় সেই শীতল বন। যেখানে গেলে শরীর জুড়াবে। বিকেলের রৌদ্রে হেঁটে আমাদের শরীর আরও তপ্ত হয়।
অবশেষে সব নিজেরাই নেমে পড়ি শীতল বনের খোঁজে। লাউয়াছড়ায় বন বিভাগের বাংলোর পাশের মূল সড়ক ধরে ওয়াইল্ড লাইভ রেসকিউ সেন্টারের দিকে চলা শুরু করি। পথে হঠাৎ কোথাও কোথাও নেমে আসে শীতলতা। থেমে নানাজনকে জিজ্ঞেস করি, এটাই কি ডিপ ফিজাপ এরিয়া? নিশ্চয়তা পাই না কোনো। চলতে চলতে শীতল বন নিয়ে রসিকতা করতে করতে পৌঁছে যাই রেসকিউ সেন্টারে। যাওয়ার পথে বেশ কয়েকবার শীতল বাতাস ছুঁয়ে গেছে শরীর। শরীর টের পেলেও কেন জানি নিশ্চিত না হয়ে অচেনা বনের পথে বাহন ছেড়ে নেমে পড়তে সায় দেয়নি দ্বিধান্বিত মন।
তখন পড়ন্ত বিকেল, রয়েছে ফেরার তাড়া, তার ওপর সন্ধ্যার পর মেলে না যানবাহন। এতসব জটিলতায় দোটানায় পড়ে শীতল বনের শীতলতায় ডুবেও তাকে পেরিয়ে গেছি বারবার। শীতল বনকে কয়েকবার হাতের নাগালে পেয়েও সে যে রয়ে গেল অধরা, তা জানতে পারি ফিরে এসে বাংলানিউজের সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডলের সঙ্গে আলাপ করে। ‘শীতল বনের খোঁজে বোকা বনে যাওয়ার’ গল্প রাষ্ট্র হয়েছে ততক্ষণে। মনে পড়লো রবীন্দ্রনাথের গান- ‘এসেছিলে তবু আসো নাই জানায়ে গেলে’। লাউয়াছড়ার শীতল বন এভাবে আমাদের ফাঁকি দিয়ে পলাতকা হলো!
লাউয়াছড়া ভ্রমণে এসে ডিপ ফিজাপ এরিয়ার শীতলতা অনুভব না করে ফিরবেন না। কিন্তু সাবধান আমাদের মতো শীতল বনের খোঁজে বোকা বনে যাবেন না যেন। দিনে গরম পড়লেও লাউয়াছড়ার ডিপ ফিজাপ এরিয়ায় পৌঁছালেই আপনার শরীর জানান দেবে যথাযথ স্থানেই এসে পড়েছেন। শরীরের ওপর ভরসা রেখে অবশ্যই ডিপ ফিজাপ এরিয়ার গহীনে প্রবেশ করে আরও বেশি শীতল অনভূতি নেবেন।
ডিপ ফিজাপ এলাকাটি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ পাকা সড়কের শ্যামলী পর্যটন কেন্দ্রের উভয় পাশে আধা কিলোমিটার পযর্ন্ত বিস্তৃত। লাউয়াছড়ার ঘন জঙ্গলের একটু ভেতরে প্রবেশ করলেই শুরু হবে ডিপ ফিজাপ এরিয়া। তবে সম্পূর্ণ লাউয়াছড়া উদ্যানেই তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। শ্যামলী পর্যটন কেন্দ্রের উভয় পাশে আধা কিলোমিটার এলাকায় তাপমাত্রা খুব কম থাকায় একে বলা হয় শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়া।
আরও পড়ুন... দিনের যাত্রী আসনই রাতের বিছানা
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
এমজেএফ/টিআই