লাউয়াছড়া (মৌলভীবাজার) থেকে: নাগা মরিচ। নামের মধ্যেই একধরনের মার-দাঙ্গা ভাব আছে যেন! কাজে নাকি সত্যিই তাই।
ভারতের নাগাল্যান্ডেও জন্মে ঝালের জন্য বিখ্যাত এ মরিচ। নামটি সেখান থেকে এসেছে কিনা তা বলতে পারলো না কেউ। বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে ২০০৭ সালে এটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেয়। অবশ্য ২০১২ সালে ‘ক্যারোলিনা রিপার’ নামে আরেকটি মরিচ সবচেয়ে বেশি ঝাল মরিচের জায়গা দখল করে নেয়। তবু এখনও বিশ্বব্যাপী ঝাল মরিচের তালিকায় পঞ্চম স্থানেই রয়েছে নাগা!
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নামি এ মরিচটি জন্মে সিলেট অঞ্চলে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল এর মধ্যে অন্যতম। আগে থেকে জানা আছে, লাউয়াছড়া বনের আশপাশে রয়েছে কয়েকটি নাগা মরিচের খেত। কাছে এসে কাছ থেকে এ মরিচের আদ্যোপান্ত দেখার সুযোগ হাতছাড়া করবে কে? সেজন্যই কিনা তিন ঘণ্টার ট্রেইল থেকে ফিরেই যাওয়া শিপলুর খেতে। সঙ্গী রেঞ্জ অফিসার শাহেদ আলী।
**নাগা মরিচের আরও ছবি দেখতে ক্লিক করুন ফটো গ্যালারিতে
গিয়ে তো মনে হলো, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! খেতে তখন চলছে মরিচ তোলা। সপ্তাহে দু’বার তোলা হয়। ভাগ্যক্রমে আজ সে দু’বারের একবার হয়ে গেল। খেতে ঢোকার পথেই পরিচয় পর্ব সারা হয়ে গেলো। রোদে বীজ মরিচগুলো যেন তখন রোদকে শাসাচ্ছে। লাল-সাদা পাকা মরিচগুলো তাকিয়ে আছে যেন!
লেবু বাগান ঠেলে খেতে গিয়ে দেখা গেলো গতানুগতিক খেতের মতো নয়। টিলার ওপর-নিচ মিলিয়ে লেবু বাগানের সঙ্গে সখ্য গড়ে টিকে আছে গাছগুলো। এমন বাঘা মরিচের এই পরনির্ভরতা ভালো লাগলো না। আবদুল খালেক তখন বালতিতে করে মরিচ তোলায় ব্যস্ত। তাই ভাগ্নে মনিরকে নিয়ে এগোলাম খেতের ভেতরে।
মনিরকে পরনির্ভরতার বিষয়টি জিজ্ঞেস করে জানা গেলো এক নতুন তথ্য। তার দাবি, বন্য শুকরের হাত থেকে গাছগুলো বাঁচাতে লেবু গাছের গোড়ায় লাগানো হয়। কারণ শূকর গাছ উপড়ে ফেলে। কাটাওয়ালা লেবু থাকলে সেটা পারে না।
অবশ্য পরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুকল্প দাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ মরিচ মূলত সাথী ফসল। ভালো ফলন ও বেঁচে থাকার জন্য এর ছায়া প্রয়োজন হয়। সরাসরি রোদ লাগলে গাছ বাঁচে না। তাই লেবু গাছের সঙ্গে এর চাষ করা হয়।
জেলা প্রশাসকের আওতায় থাকা খাস জমি লিজ নিয়ে প্রায় ১০ একর জায়গার উপর গড়ে উঠেছে এ খেত। একটি পরিবারের গোটা পাঁচেক সদস্য সবসময় দেখভাল করেন।
বছরের প্রথম বর্ষায় এ মরিচের চারা লাগানো হয়। প্রতিটির স্থায়িত্ব হয় বছর দেড়েক। ইউরিয়া, খইর, টিএসপি সার দিতে হয়। এছাড়া লাগে কীটনাশক ক্যারাডিন।
এ মরিচের গন্ধের বিশেষ নাম আছে ঝালের পাশাপাশি। অনেক খাবারের সঙ্গে সামান্য একটু মিশিয়ে দিলে অথবা তরকারিতে আস্ত একটি ফেলে রাখলে স্বাদ ও ঘ্রাণ হয় বেশ। মনির যখন কথা বলছিলেন তখন পাশ থেকে তার মা জানালেন, এই মরিচ দিয়ে এক ধরনের আচারও তৈরি হয়।
মরিচ তোলার পর হাত চোখে লাগলে কিংবা শরীরের কোথাও লাগলেও নাকি জ্বালা সইতে হয়। সেজন্য অনেক সময় তারা হাতে পলিব্যাগ বাঁধেন।
এ মরিচ আবার হয় দুই রকম। একটি সাদা, একটি কালো। কালো শুনে একটু অবাক হয়ে কাছে গিয়ে দেখলাম। বুঝলাম গাঢ় সবুজকে তারা বলছে কালো। সাদাটে মরিচের নাকি আবার দাম একটু কম। বেশি দাম পাওয়া যায় কালোর। কারণ এতে ঝাল নাকি বেশি। তবে পাকলে লাল হয়।
চাষও বেশ লাভজনক। প্রতিটি মরিচ পাইকারি বিক্রি হয় এক থেকে দুই টাকা। প্রতি সপ্তাহে দুবার মরিচ তোলা হয়। একেবারে ওঠে ৭-৮ হাজার। সে হিসাবে মাস শেষে লাভ একেবারে কম নয়। সে তুলনায় খরচ কম।
দিনে দিনে এ মরিচে খ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়ছে পর্যটকদের কল্যাণে। কারণ পর্যটকরা নাকি এখন এই মরিচ খোঁজেন। আপনিও ভুলবেন না কিন্তু শ্রীমঙ্গল এলে।
**তবু থেকে যায় সাতরঙা চায়ের রহস্য
**রাতদুপুরে সবুজবোড়ার রাস্তা পারাপারের দুঃখ
**পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
**চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
আইএ/এএ