সিলেট থেকে: বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকির একাংশে জেগে ওঠা গ্রাম মোকাম। ডাকঘর যুধিষ্টিপুর।
শ্রাবণের চতুর্থ দিবসের (সোমবার, ১৮ জুলাই) সকাল। সূর্যের দেখা নেই। পানিবন্দি এ গ্রামটি ঘুরতে গিয়ে চোখে পড়ে ঘিলাছড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম ফলক। চোখ আটকায়, স্থাপিত: ১৯৬৩ খ্রি.। এরকম একটি অঞ্চলে এতো পুরনো স্কুল!
আগ্রহ টেনে নিয়ে যায় হেডমাস্টার মো. মিছবাহ উর রহমানের রুমে। ২০১০ সাল থেকে এ দায়িত্ব পালন করছেন। বাড়ি, বড়লেখা।
কথায় কথায় জানালেন, এ স্কুলে ছেলের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থী বেশি। প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যার্থী মেয়ে। তাদের রেজাল্টও তুলনামূলক ভালো।
গ্রামের বাসিন্দা অধিকাংশই জেলে, দিনমজুর, কৃষক- তাদের ঘরের মেয়ে হাইস্কুলের মুখ দেখবে এটাই বিস্ময়ের ব্যাপার! কথাটি স্থানের কথা মাথায় রেখে বলা। স্বাভাবিকভাবে এরকম প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার হারই কম হয়ে থাকে। যাও হয় সেখানে সংখ্যায় এগিয়ে থাকে ছেলেরা।
এই গ্রামে উল্টো হওয়ার কারণ? ‘সরকার নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করতে অনেক উদ্যোগ নিচ্ছে। বিনা বেতনে পড়াশোনা, উপবৃত্তি, চাকরির বিশেষ সুযোগসহ নানা কারণে মেয়েদের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখা যায়। অভিভাবকরাও তাদের পড়ানোর ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক ইতিবাচক। ’
স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা ১০ ও শিক্ষাথী সংখ্যা ৪৯০ জন। মাধ্যমিক পাস করে এই স্কুলের প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। সেক্ষেত্রে তাদের পড়তে হয় বেশ দূরে গিয়ে। তবে এক বছর হলো এই গ্রামে জমিরুন্নেসা একাডেমি নামে একটি কলেজ হয়েছে বলে জানালেন হেডস্যার।
সমস্যার কথা উঠলে বলেন, সবার লেখাপড়ার আগ্রহ রয়েছে কিন্তু স্কুলে আসার রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। এই কথাটি লিখবেন। দূর থেকে অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের আসতে হয়। এজন্য অনেকেই মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাবার পেশা ধরে।
এছাড়া স্কুলের ভবন যা রয়েছে তাতে ভালোভাবে হয়ে যায়। মাঠ, শহীদ মিনার সবই রয়েছে। তবে মেয়েদের শৌচালয়ের সমস্যা রয়েছে, যোগ করেন তিনি।
বাংলানিউজের ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে’র চলতি পর্ব সিলেটে। এরই অংশ হিসেবে এদিন হাকালুকি সফর-হেডস্যারের রুম।
একটু পর স্কুল বসবে। শেষবেলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ঢোকার তোড়জোড়। এই ফাঁকেই কথা হয় নাসিমা আক্তার (৭ম) ও শরিফা খাতুনের (৭ম) সঙ্গে। নাসিমার শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে আর শরিফা পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
চমৎকার একটি টিলার উপর স্কুলটি। উঠতে গেলে অনেক ধাপ বাঁধানো সিঁড়ি পেরিয়ে যেতে হয়। বুকে বই লেপ্টে একেকটি ধাপ টপকে চূড়ায় উঠছে তাহমিনা, রাবেয়া, মুক্তারা। তাদের যে উঠতেই হবে!
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৬
এসএনএস
*** ধুলো ঝেড়ে কুশিয়ারার ইস্ট-ইন্ডিয়া ঘাট
*** অরূপরতনের সন্ধানে শ্রীচৈতন্যের বাস্তুলীলায়
*** জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে রেমা-কালেঙ্গা
*** রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা
*** পিছুটান মুছে দেবে ভাড়াউড়া হ্রদ
*** লাউয়াছড়া গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া আসে
*** ‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’
*** ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন