সিলেট থেকে: ধূমকেতুর মতো তার ঢাকাই চলচ্চিত্রাকাশে আগমন আবার ধুমকেতুর মতোই বিদায়। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল- মাত্র তিন বছরেই ইতিহাস।
সালমান শাহ্ ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরের দারিয়াপাড়ায় তার নানার বাড়িতে জন্ম নেন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। তার মূল নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। চলচ্চিত্র জীবনে এসে সবার কাছে ‘সালমান শাহ’ নামেই পরিচিত ছিলেন।
কোটি ভক্তের গুণি এ নায়কের বাড়ি সিলেটের দারিয়াপাড়ার ‘সালমান হাউজে। এখানেই তার জন্ম, বেড়ে ওঠা ও ঠিকানা।
সোমবার (১৮ জুলাই) বৃষ্টিস্নাত শ্রাবণের রাতে সালমান হাউজের পাশের বাড়িতে গেলে দরজা খুলে দিলেন আলমগীর কুমকুম। সম্পর্কে তিনি সালমানের মামা। তিন ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে আলমগীর পঞ্চম এবং সালমানের মা নীলা চৌধুরী সবার বড়। মামা আলমগীর সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র থাকেন। বছরের ছয়-সাত মাস আবে হায়াত নামের এই বাড়িতেই কাটান। সালমান হাউজেরও সবকিছু দেখে-শুনে রাখেন তিনি।
মামার বাড়িতে ঢুকতেই হাতের বামদিকের বাড়িটিতে থাকতেন সালমান। তার ড্রইংরুম থেকে বেডরুম- গোটা ঘরও সালমানময়। ড্রইংরুমের পরেই যে ঘরটি, তাতে সাবেকি আমলের উঁচু খাট। আলমগীর কুমকুম জানালেন, ‘এই খাটেই জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা মহাতারকা সালমান’।
ততোক্ষণে গুছিয়ে আলাপের জন্য ডেকে নেন তিনি। শুরুতেই সালমানের মৃত্যু ও অমীমাংসিত বিচার কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। স্বাভাবিক। যার যায় সেই বোঝে প্রিয়জনের মৃত্যু কতো বেদনার। পাশাপাশি কোটি ভক্তের প্রাণঢালা ভালোবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই একটু নরম হয়ে আসেন।
‘বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তরা তো নিশ্চয়ই আসেন?’
‘অনেক! আমি তো ঘুমাতেই পারি না। দারোয়ানকে বলা আছে, দূর-দূরান্ত থেকে কেউ এলে খুতে দিতে। এটা আমাদের পারিবারিক বাড়ি। নিজেদের মতো থাকি। এতো মানুষজন এলে নিজেদেরও বিরক্ত লাগে। কিন্তু তাদের ভালোবাসার মূল্যটাও দিতে হয়। দেখা গেলো, খুলনা থেকে একজন এসেছেন, সালমানের বাড়িটা দেখতে। আমি কী করে ফিরিয়ে দেবো বলেন?’
‘তবে তার মা এ বাড়িতে থাকলে কাউকে ঢুকতে দেন না। লোকজন আসেন, সেলফি তুলে চলে যান। তারা এলে সালমানের স্মৃতিগুলো ভিড় করে হয়তো। মায়ের মন তো, কষ্ট হয়’- যোগ করেন আলমগীর কুমকুম।
সেক্ষেত্রে ভক্ত-দর্শনাথীদের জন্য মামা আলমগীরের ড্রইংরুম এবং সালমানের বাড়ির ভেতরের ডাইনিং স্পেস পর্যন্ত দেখানো হয়। এর মধ্যে সালমানের বিভিন্ন সময়ের ছবি, ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল পড়ে। অন্য রুমগুলোতে সালমানের সেই সময়কার ব্যবহার্য সব জিনিসপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। যতোটা পারা গেছে সালমানের স্পর্শধন্য জিনিসগুলো যত্নের সঙ্গে রাখা আছে।
এসব নিয়ে সালমান হাউজকে ভবিষ্যতে একটি মিউজিয়ামে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে পরিবারের।
সেটি কতোদূর জানতে চাইলে আলমগীর কুমকুম বলেন, ‘আগে সালমান শাহের মৃত্যুর বিচার, পরে মিউজিয়াম। এটি তার মায়েরও কথা’।
অল্পদিনের চলচ্চিত্র জীবনে সালমান মোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়া ধারাবাহিক ও একক নাটক এবং কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও তাকে দেখা গেছে। অনন্তকাল ধরে তাকে দেখা যাবেও। বেঁচে থাকবেন কোটি মানুষের ভালোবাসায়। চিঠি লিখে যাবেন আকাশের ঠিকানায়!
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৬
এসএনএস/এএসআর
*** শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে হাকালুকির কন্যারা
*** ধুলো ঝেড়ে কুশিয়ারার ইস্ট-ইন্ডিয়া ঘাট
*** অরূপরতনের সন্ধানে শ্রীচৈতন্যের বাস্তুলীলায়
*** জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে রেমা-কালেঙ্গা
*** রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা
*** পিছুটান মুছে দেবে ভাড়াউড়া হ্রদ
*** লাউয়াছড়া গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া আসে
*** ‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’
*** ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন