সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং হারুনের স্ত্রী। আর পরের তিনজন নবগঠিত জেলা বিএনপির যথাক্রমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিতেও যে প্রস্তুতির হাওয়া বইছে তার ঝাপটা লাগতে শুরু করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জেও। স্বভাবতই জেলার ৩ সংসদীয় আসনে কারা হতে পারেন বিএনপির প্রার্থী সে প্রশ্ন-আলাপ চলছে ঘুরে-ফিরে।
এই আলাপই উঠেছিল সদর শহর থেকে টমটমে ২৫ মিনিটের দূরত্বে তেররশিয়া গ্রামের একটি চায়ের দোকানে। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই পাঞ্জাবি পরিহিত মধ্যবয়সী আলতাফ হোসেনের প্রশ্ন, ‘এদের কাউকে কি কখনো রাস্তায় দেখা যায়? কেউ ঢাকায় থাকে, আবার কারও নামই শোনা যায় না! খালি ভোটের সময় এলেই কি ভোট দিবে মানুষ?’
সে কথায় হাসতে হাসতেই সায় দেন তার পাশে বসা আবদুস সালাম। টমটমে শহর থেকে এসে এই চা দোকানে আলাপে যোগ দিয়েছেন তিনি। বাহনে থাকতেই সহযাত্রীকে বলেছিলেন, নির্বাচনের দুইদিন আগে আসবে প্রার্থীরা। এখন কেন আসবে? এবার এখানে বললেন, ‘ভোটের সময় তো অনেকেই আসবে... মানুষ কাকে মনে রাখবে?’
আলতাফ হোসেন বলে চলেন, ‘এই যে শান্তির মোড় থেকে এলেন এখানে, রাস্তা দেখছেন, এখনকার এমপি (আবদুল ওদুদ) করেছেন, মানুষের চোখে যেটা পড়বে, মানুষ সেটা ভুলবে কী করে, আপনি কী কী করবেন, সেটা তো জনগণের কাছে আপনাকে গিয়ে বলতে হবে, মানুষকে নিজের দিকে টানতে হবে!’
শহরের পুরাতন বাজারে একটি ক্লিনিকের পাশে নারিকেলের ডাব খেতে খেতে এই অভিযোগগুলোই ক্ষোভ আকারে ঝাড়ছিলেন বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ এককর্মী।
তার দাবি অনুযায়ী, কমিটি রাজনীতি করবে, দলকে নেতৃত্ব দেবে। নির্বাচনে নিয়ে যাবে। কিন্তু এখানকার প্রতিনিধি হিসেবে একজন আছেন কেন্দ্রে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আত্মীয় বলে পরিচিত। নতুন করে যে ক’জনকে গত সপ্তাহে জেলার নেতৃত্বে আনা হলো তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার অর্থ-পৃষ্ঠপোষকতায় পদ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে। এক নম্বর পদবিধারী এ আসনের এমপির আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বলেও কথিত আছে। এদের কারও না পরিচিতি আছে, না আছে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। এমনকি কেউ কেউ নাকি একটি মামলার আসামিও নন। এরা কী রাজনীতি করবেন, দলকে কীভাবে নির্বাচনে নেবেন?
তার পাশে দাঁড়িয়ে আলাপ শুনছিলেন এক অটোরিকশাচালক। ক্ষোভটা যেন তার আরও বেশি ছিল। একেবারে সরাসরি বলে দিলেন, ‘ঠাণ্ডা রুমে বসে বসে কার্ড খেলে কি ভোটে জেতা যায়?’
এখানে কি তাহলে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকেন- বিএনপির এমন কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী নেই? ওই কর্মী হতাশাই ঝাড়লেন, ‘পারিবারিক বোঝাপড়ায় রাজনীতি করতে করতে এখানে বিএনপির অবশিষ্ট আর কিছু পাওয়া যাবে না। ’ আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যেখানে শক্ত-পোক্ত কমিটি দেওয়ার কথা, সেখানে এই কমিটি কীভাবে দেওয়া হলো সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মী।
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নির্বাচনে দলকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্বের বিষয়ে কথা হচ্ছিল সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মতির সঙ্গে। তার দাবি, বিএনপির সব উপজেলা-থানা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড নির্বাচনের জন্য সবসময়ই প্রস্তুত। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলেই সবাই মাঠে নেমে পড়বে। কিন্তু নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি সরকার মানবে কিনা সেটা নিয়েই তারা দ্বন্দ্বে আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ বা সদর আসনে আগামী নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মতি বলেন, অষ্টম সংসদে এ আসন থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশিদের কথা। গতবার এ আসনে দাঁড়িয়েছিলেন বিএনপির আরেক নেতা আবদুল ওয়াহেদ। তবে কেন্দ্র নির্বাচনে না যাওয়ার পরও তিনি লড়েছিলেন বলে ওয়াহেদকে বহিষ্কার করা হয়।
কমিটিতে নির্বাচিত কারো নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে আমিনুল ইসলাম বলেন, এই আসনে হারুনুর রশিদই বিএনপির তথা জনগণের প্রার্থী থাকবেন। আর নতুন কমিটি নিয়ে কথা আছে…আমরা মহাসচিবের সঙ্গে বসবো। তবে সে কথা আরেকসময় হবে…। ’
** ‘ভোটে’ ‘বিশ্বাস’ নেই চাঁপাইবাসীর
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
এইচএ/জেডএম