বললাম যদি হয় তাহলে কি? বললেন, তালে কওয়া যাচ্ছে না? আমি বললাম, কেন? তিনি বললেন, যদি শিমুলের সাথে দুলুর ভোট হয়, তালে জিতপি দুলুই। আর যদি ভোটত দুলু না দাঁড়ায়, তার বৌ দাঁড়ায়, তালে জিতপি শিমুলই।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে ভোটের সমীকরণ পরিবর্তন হতে পারে বলে শহরের মাদরাসা মোড়ের চায়ের দোকানে আলাপের সময় জানালেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী।
তার কথায় নাটোর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই দলেরই অবস্থান সমান সমান। নাটোরে ধানের শীষের জনপ্রিয়তা আছে। অপরদিকে শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীর সাংগঠনিক নেতৃত্বের কারণে জেলায় আওয়ামী লীগেরও শক্ত অবস্থান রয়েছে। দুই দলের প্রার্থী কারা কারা হবেন, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে কি না? তার উপর নির্ভর করবে, নির্বাচনে কোন দল জয়ী হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে এমপি হওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য শিমুলের ইমেজ বর্তমানে ততটা ভালো নয়। এলাকায় দাপট থাকলেও এমপি হওয়ার পর বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড, পেশীশক্তির রাজনীতির কারণে বর্তমানে তিনি জনগণ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। পাশাপাশি নিজ দলেরও প্রায় সব সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতা তার বিরোধী। তাই আগামী নির্বাচনে তিনি বিএনপির কনফার্ম প্রার্থী দুলুকে ঠেকাতে পারবেন না। আবার যদি দুলু নির্বাচন করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের। সেক্ষেত্রে আবার চান্স আছে শিমুলের।
তবে নাটোর সদরে দুই দলেরই প্রার্থী মনোনয়নে সমস্যা আছে বলে জানালেন, স্থানীয় এক সাংবাদিক।
তিনি বলেন, দুলু বিএনপির কনফার্ম প্রার্থী সেটা ঠিক আছে। তবে তার নামে অনেক মামলা। যেগুলোর বিচার শেষ হওয়ার পথে। যদি সাজা হয়ে যায় তবে দুলু নির্বাচন করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে প্রার্থী হবেন তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমীন। তিনি নৌকার বিপক্ষে কতটা কুলোতে পারবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আবার আওয়ামী লীগেও এমপি শিমুলের মনোনয়ন পাবেন তার কোনো গ্যারান্টি নেই বলে জানালেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক তৃণমূল কর্মী। জানালেন, এবার সম্ভাবনা আছে রমজানের, মেয়র উমা চৌধুরী জলির। এমনকি আহাদ আলী ফের মনোনয়ন পেতে পারেন।
শহরের কানাইখালি মোড়ে এক আড্ডায় তিনি জানালেন, শিমুলের বিরুদ্ধে একাট্টা নাটোর আওয়ামী লীগের প্রায় সব প্রভাবশালী নেতা। শিমুল মনোনয়ন পেলে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, পৌরসভা মেয়র উমা চৌধুরী জলি, এবং শিমুলের সমসাময়িক প্রভাবশালী জেলা যুবলীগ সভাপতি বাছিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া তার পক্ষে কতটা মাঠে নামবেন তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আবার শিমুল মনোনয়ন না পেলে তিনিও কতটা দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন তারও গ্যারান্টি নেই।
সেক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থী যদি দুলু হয় তাহলে নাটোর সদরে বিএনপিকে ঠেকানো মুশকিল হবে আওয়ামী লীগের। তবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে নামলে, আর দুলু ধানের শীষের প্রার্থী হলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। জানালেন ওই আওয়ামী লীগ কর্মী।
বিএনপির গৃহদাহ তো আরও মারাত্মক। এমনকি দুলু প্রার্থী হলেও বিএনপির জন্য নাটোর সদর আসনে জয়লাভ কঠিন হবে এই গৃহদাহের কারণেই। কারণ দুলু দলে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন একে একে প্রায় সব সিনিয়র নেতাকে। তাদের জায়গায় বসিয়েছেন নিজের আত্মীয়-স্বজন ও অনুগত নেতাদের। যাদের ওই সব পদে বসার যোগ্যতা নিয়ে নাটোরের সাধারণ মানুষের আছে সংশয়। বহিষ্কার করতে করতে এখন নাটোর বিএনপির অবস্থা ঠগ বাছতে গাঁ উজার হওয়ার মত। কারণ বহিষ্কৃত নেতাদেরও শহরে অবস্থান আছে, তাদের কারও কারও আছে জনপ্রিয়তা। আগামী নির্বাচনে দুলু বা তার মনোনীত যে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই দুলু বিরোধী নেতারা যদি একাট্টা হয়ে মাঠে নামেন সেক্ষেত্রে দুলুর জন্য নির্বাচনে জেতা কঠিন হয় পড়বে।
সব মিলিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে যদি দুলু প্রার্থী হন, আর আওয়ামী লীগেও যদি প্রভাবশালী সব পক্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে, তা হলে ধানের শীষ-নৌকা লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। জানালেন, শহরের স্টেশন এলাকার স্থানীয় এক বয়োবৃদ্ধ মুরুব্বি।
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
জেডএম/