ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

রাজনীতি জটিল পাবনায়

রাইসুল ইসলাম, এডিশনাল আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৭
রাজনীতি জটিল পাবনায় পাবনা শহরের একটি চায়ের দোকান

পাবনা থেকে: পাবনা শহরে এসে যখন পৌঁছুলাম তখন রাত প্রায় দশটা। আব্দুল হামিদ রোড। এই সড়কটাই পাবনা শহরের মূল কেন্দ্রস্থল। বেশ কয়েকটি বহুতল বিপণিবিতান, ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ শহরের বড় বাজারটিও এই সড়কের পাশেই।

ঢাকাগামী পরিবহন সংস্থাগুলোর কাউন্টার থাকায় নাইটকোচগুলোও ছাড়ে এখান থেকেই। তাই রাতের বেলাতেও এখানে প্রচুর মানুষের ভিড়, হইচই।

সস্তা একটি হোটেলে দেখলাম গরম ভাত থেকে ধোঁয়া উঠছে। ক্ষিদে চাগিয়ে ওঠায় ঢুকে পড়লাম সেখানেই। ডিম, আলু ভর্তা আর নাম না জানা ছোট মাছের চরচরি দিয়ে গরম ভাতকে মনে হলো অমৃত।

সাংবাদিকতার কাজে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরার সময় আমার একটি অভিজ্ঞতা বেশ ভালো হয়েছে। তা হলো প্রচণ্ড ক্ষিদের সময় দুই প্লেট গরম ভাত খেতে নামীদামী রেস্টুরেন্টের বদলে এসব রাস্তার পাশের সস্তা হোটেলগুলোই উত্তম। পাবনা শহরের কেন্দ্রস্থল ব্যস্ততম আব্দুল হামিদ রোডআর এখানে খাবারের দামও তুলনামূলক অনেক কম। দোকান মালিক ও কর্মচারীরাও আন্তরিক।

হোটেলটিতে যারা ভাত খাচ্ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী। আবার হোটেলটিতে চায়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। আমার বেঞ্চেই বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন এক বয়স্ক ভদ্রলোক। কথা হলো তার সঙ্গে। জানালেন, তার বাড়ি শহরের কেষ্টপুর এলাকায়। এক সময় ঠিকাদারি ও ‘টুকটাক’ ব্যবসা করতেন। এখন শহরে দোকান আছে তার।

তার কাছেই জিজ্ঞেস করলাম এলাকার রাজনীতির কি অবস্থা। প্রথমে মুখ খুলতে চান না। পরে সাংবাদিক পরিচয় প্রদান এবং ঢাকা থেকে এসেছি শুনে মুখ খুললেন। কথা শুরু করলেন নিচু স্বরে। তার কাছ থেকেই পাওয়া গেল পাবনার জটিল রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির অনেক বাঁকের তথ্য।

মাঠঘাটের ভোটের খবর নিতে বাংলানিউজের অন্যান্য সহকর্মীদের মতই ঘুরে বেড়াচ্ছি উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মাঠ, ঘাট, গঞ্জ, শহর ও বন্দরে। কথা বলছি বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে। তবে নিজের অভিজ্ঞতায় একটু জিনিস বুঝতে পেরেছি, একটি এলাকা বা জনপদের ভোটের রাজনীতির খবর নেয়ার আগে প্রয়োজন ওই এলাকার রাজনৈতিক ঐতিহ্য বা লিগাসি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার। কারণ তাহলেই সেখানকার ভোটের পলিটিকসটা বোঝা সহজ হয়ে পড়ে। আর এ কারণে যখন একটা এলাকায় গিয়ে এক হিন্দু ভোটারের মুখেই শুনি, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপছন্দের প্রার্থীকে ঠেকাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ ভোট এবার পড়েছে জামায়াতের প্রার্থীর মার্কায়, তখন আর অবাক হতে হয় না।    

পাবনা অবিভক্ত ব্রিটিশ বাংলার অন্যতম প্রাচীন জনপদ। দেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে এই শহর থেকে উঠে আসা রাজনীতিকরাও দেশের রাজনীতিতেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঐতিহ্যবাহী পাবনা পৌরসভা কার্যালয়ের প্রধান ফটক জাতীয় চার নেতার এক নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর শহরও পাবনা। আবার বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর অধ্যাপক আবু সাইদও পাবনার সন্তান। তাই পাবনার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যও কম নয়।

আবার স্বাধীনতার আগে পরে এই বৃহত্তর পাবনা ছিলো আওয়ামী বিরোধী বাম রাজনীতিরও অন্যতম ঘাঁটি। মওলানা ভাসানীর জন্মও বৃহত্তর পাবনা জেলায়। (সিরাজগঞ্জ সে সময় পাবনা জেলার অধীনে মহকুমা ছিলো)।

আবার পাবনা নকশাল নেতা কামরুল মাস্টার, টিপু বিশ্বাসেরও এলাকা। তাদের হাত ধরে দেশের নকশাল আন্দোলনের অন্যতম ঘাঁটি ছিলো বৃহত্তর পাবনা অঞ্চল। তারা আর বেঁচে নেই, তবে তাদের রাজনৈতিক লিগাসি যেন এখনও অটুট পাবনার পথে প্রান্তরে। কান পাতলেই শোনা যায় তাদের কথা।

যুদ্ধপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর কারণেও পাবনাতে রয়ে গেছে দলটির উল্লেখযোগ্য প্রভাব। পাবনায় বেশ ভালো ভোটব্যাংক রয়েছে দলটির।

এছাড়া পাবনার স্থানীয় রাজনীতিতে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলেরও একটি রাজনৈতিক লিগাসি আছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সদলবলে তার বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর চেহারাই পাল্টে যায় পাবনা বিএনপির। শহরের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বামধারার রাজনীতির সঙ্গে টেক্কা দেয়া শুরু করে এই দলটি। ২০০০ সালে রহস্যজনক এক সড়ক দুর্ঘটনায় রফিকুল ইসলাম বকুলের মৃত্যু হলেও মৃত্যুর পরও অসম্ভব জনপ্রিয় এই নেতা।

বলা হয়, বর্তমানে পাবনার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের রাজনীতিই এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন মুক্তিযোদ্ধা বকুলের অনুসারী কিংবা তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা। কোনো মার্কা নয়, পাবনা শহরে এখনও ভোট চাওয়া যায় শুধু তার নামেই।  

এসব বিষয় একটির সঙ্গে আর একটি জড়িয়ে পাবনার রাজনীতির গতি প্রকৃতি একটু জটিলই বলে জানালেন ওই ভদ্রলোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তিও এক সময় বামপন্থি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। পাবনার রাজনীতির গতি প্রকৃতি ও অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি নিজেও।

আরও জানালেন, পাবনার রাজনীতির অন্যতম আর একটি অন্ধকার অধ্যায়ের কথা। জানালেন, পাবনার দুই বড় দলেই আছে আন্ডারগ্রাউন্ড নকশাল রাজনীতির প্রভাব। নকশাল রাজনীতির ছোঁয়ায় অতীতে পাবনার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে ভর করে সহিংসতা। শুরু হয় অস্ত্রের ঝনঝনানি। খুন আর পাল্টা খুন।

তবে ইদানিং এর প্রভাব কমতে শুরু করেছে। কারণ হিসেবে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় না দিতে জেলার বড় দুই দলেরই বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছার পাশাপাশি চরমপন্থি দমনে বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করলেন তিনি।

ভাতের হোটেলে ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ শেষ হলো তখনই।

তবে পরের কয়েকদিন পাবনার ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া থেকে শুরু করে সদর, সাথিয়া, বেড়া, আতাইকুলা ঘুরে সত্যতা মিললো ভদ্রলোকের কথার। সব মিলিয়ে ঐতিহ্য আর লিগাসির ছোঁয়ায় পাবনার রাজনীতিটা ‍আসলেই জটিল।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৭
জেডএম/

সিংড়ায় লড়াই আ'লীগের উন্নয়ন বনাম ধানের শীষের জনপ্রিয়তার

মার্কা পেতে কোন্দল নেই সিংড়া বিএনপিতে

সিংড়ায় পলকই নৌকার মাঝি, কোন্দল নেই মনোনয়নে

সিংড়ায় পলককে ঘিরে রাখে জনতা

‘সব ঠিক থাকলে’ নাটোরে ধানের শীর্ষ নৌকা তুমুল লড়াই

পরিবারতন্ত্রেই অটল নাটোর বিএনপির একনায়ক দুলু

নাটোর সদরে নৌকা ডুবতে পারে গ্রুপিং-কোন্দলে

নাটোর সদরে নৌকা পেতে টক্কর সেয়ানে সেয়ানে

ছোট শহরের বড় পলিটিকস নাটোরে

সহিংস রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চায় না বনলতা সেনের নাটোর
চামড়া কিনছে না ট্যানারি, হাহাকার নাটোরের চামড়ার হাটে

নাটোরে লিচুর রাজা চায়না থ্রি, কম যায় না মোজাফফরও

আহ বৃষ্টি!, কি যে স্বস্তি!

মায়ের কোলে ফিরলো হারিয়ে যাওয়া শিশু

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।