বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট থেকে এবার আর মনোনয়ন দেওয়া হলো না তানসেনকে। চুপচাপ দেখে যেতে থাকেন ধানের শীষ ও নৌকার কর্মকাণ্ড।
বিএনপি’তো নির্বাচনেই এলো না। তবে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসন ছেড়ে দেওয়া হলো জাতীয় পার্টিকে। প্রার্থী হলেন নুরুল আমিন বাচ্চু।
ধানের শীষের এই দূর্গে জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন বাচ্চু যে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নন, সেটি ভালোভাবেই জানতেন তানসেন। অতীতে ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বার পদে নির্বাচন করেও জিততে পারেননি তানসেন। একই র্যাংকিংয়ের খেলোয়াড় বাচ্চুও, তিনিও কখনো কোনো নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি।
বগুড়া অঞ্চলে একটি কথা প্রচলিত আছে। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কলাগাছ নির্বাচন করলেও জয়যুক্ত হবে। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে যেহেতু ধানের শীষ প্রতীক ব্যালটে নেই, এটাইতো সুবর্ণ সুযোগ জুয়া ধরার।
১৪ দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে জাসদকে নির্বাচনে ৪টি সংসদীয় আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা। সেটি দিলেনও শেখ হাসিনা। তবে জাসদের কেন্দ্র থেকে বগুড়া-৪ আসনে কাউকে আর মনোনয়ন দেওয়া হলো না। এ ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিলেন না তানসেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থী হলেন নির্বাচনে। কেউ সঙ্গে থাকুক আর না থাকুক, একলা চলো নীতিতে ভোটের দিন পর্যন্ত চললেন। প্রচার-প্রচারণায় তেমন অর্থও খরচ করতে হলো না।
তবে মহাজোটের জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দিতে গেলেন বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরা। তাও খুব নগন্য। প্রায় ২২ হাজারের মতো ভোট পেলেন তানসেন। ঘনবসতির এ দেশেতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আরো বেশি ভোট পড়ে। তবে এ ভোট পেয়েও নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়ে গেলেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তানসেন। প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার প্রার্থী ৬ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেলেন।
শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে দাঁড়ানোর এ সিদ্ধান্ত ইস্কাপনের টেক্কার মতো কাজে লাগলো তানসেনের ক্ষেত্রে। তারপরও নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয়রা এখন রসিকতা করে ‘বাইশ হাজারি তানসেন’ বলেও নিজেদের মধ্যে উচ্চারণ করেন এ এমপির নাম।
না আওয়ামী লীগ খুশি, না বিএনপি, না জাসদ, না জাতীয় পার্টি, না জনগণ খুশি, নন্দীগ্রাম আর কাহালুর সংসদ সদস্য এখন রেজাউল করিম তানসেন।
দু’টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গেলে ভোটারদের রসাত্মক মন্তব্য ছিল, ‘ইস্কার টেক্কা খেলা এই এমপি শুধু নামেই’।
নন্দীগ্রাম বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ এলাকা এখন মা-বাপ ছাড়া। এমপি এলাকাতেই আসেন না। তার দলের গুটিকয়েক নেতাকর্মীদের সঙ্গেও ওঠাবসা নেই। গত কয়েক বছরে এলাকার উন্নয়ন বলতে শূন্য। শুনেছি, ঢাকা থেকে কাজ এলেও তার খবর শুধু তিনিই রাখেন’।
প্রবাসী রুহুল আমিন দুবাই থেকে এসেছেন নিজ গ্রামে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বরেন্দ্রর এ অঞ্চল এখনও অবহেলিত। তিন বছর আগে দেশ থেকে যাওয়ার সময় যা দেখে গিয়েছি, তাই আছে। রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন হয়নি, নতুন কোনো স্থাপনাও চোখে পড়েনি’।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুর রহমান বাংলানিউজ বলেন, ‘তানসেনকে তো জাসদও বলা যায় না। জাসদের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্রও বলা যায় না। কোনো দলের জামা নেই তার গায়ে। নিজের ইচ্ছেমতো চলছেন। এখানে আওয়ামী লীগেরই প্রায় এক লাখ ভোটার আছেন। তারাও এখন হতাশ’।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি একে আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘তিনি চতুরতার আশ্রয় নিয়ে এমপি হয়েছেন। তাই বর্তমান সরকারের সমর্থনও নেই’।
এদিকে জেলার দলীয় কার্যালয় থেকেও বিতাড়িত হয়েছেন তানসেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের থেকে দূরে থেকেছেন। বিশেষ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো খোঁজও নেননি। সব মিলেই নিজ দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের দানা বড় হতে থাকে। দীর্ঘ নয় মাস পর গত বছরের ডিসেম্বরে দলীয় কার্যালয়ে এলে নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে তাকে অফিস থেকে বের করে দেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাকিব উদ্দিন বলেন, ‘তানসেনকে এলাকার মানুষ চিনতেন। কথিত আছে, তিনি বাংলায় পড়াশোনা করলেও একটি কলেজে ইংরেজির শিক্ষকতা করতেন। আবার আশির দশকে ব্যাংক ডাকাত হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। জেল পলাতক আসামি হিসেবেই মানুষ চিনতেন তাকে’।
স্থানীয় নেতাকর্মী এবং জনগণের মতোই বারবার চেষ্টা করেও এমপি তানসেনকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৭
এমএন/এএসআর