জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর-পাঁচবিবি) আসনের অন্তর্গত এ উপজেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের দু’জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে দলীয় কোন্দলে এ আসন হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের মনে।
সীমান্তবর্তী এ উপজেলা সদরের পাঁচমাথা মোড় সংলগ্ন পৌর পার্কের সামনে সারি সারি বিলবোর্ড ও প্রচারণা ফেস্টুন লাগানো। এ দৃশ্য শহরের প্রায় সবখানেই। নানা উপলক্ষে লাগানো এসব ব্যানার, সাইনবোর্ড, ফেস্টুন বা বিলবোর্ডে কেবল দু’জনেরই ছবি থাকছে।
তাদের একজন বর্তমান সংসদ সদস্য জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম দুদু আর অন্যজন পাঁচবিবি পৌরসভার বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব।
নার্সারি ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির সঙ্গে জেলা সভাপতি শামসুল আলম দুদু’র প্রকাশ্য দ্বন্দ্বই পরস্পরবিরোধী এ প্রচারণার কারণ। স্বপনের শিষ্য হিসেবে পরিচিত হাবিব এবার এ আসনের প্রার্থী হতে চান। অন্যদিকে হাবিবের চ্যালেঞ্জ উতরে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে চান বর্তমান এমপি দুদুও।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, এমপি দুদুকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভালোভাবেই প্রস্তুত হাবিব। জেলা রাজনীতির জটিলতায় তার মনোনয়ন পাওয়াও অসম্ভব নয়।
চা-দোকানি মকবুল হোসেনের সোজাসাপ্টা বক্তব্য, স্বপন-দুদু’র বিবাদ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে হাতছাড়া হওয়ার পথে জয়পুরহাট-১ আসন। এখন যে ধরনের নির্বাচনই হোক না কেনো, সামান্য নিরপেক্ষ হলেও আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে।
এমনিতেই জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি সব সময়ই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল ‘জামায়াতের ব্রিডিং ফার্ম’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোটের তাণ্ডবেও এর নমুনা দেখা যায়। এমনকি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়িয়েও সারাদেশের চেয়ে বেশি তাণ্ডব হয়েছিল পাঁচবিবিতে। আর এক যুদ্ধাপরাধী আব্দুল আলীমেরও আসন ছিল এটি।
অন্যদিকে তুলনামূলক কম উন্নয়ন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বাণিজ্য, তদবির, দখল ও জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ ইত্যাদি ইস্যুতে চাপেই আছেন ক্ষমতাসীনরা।
এ অবস্থায় বিভক্ত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে এ আসন ধরে রাখতে পারবে কি-না- এমন আস্থার সংকট খোদ তৃণমূল নেতাকর্মীদেরই।
পাঁচবিবির আওয়ামী লীগ নেতা বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ আসনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য অন্য আসনের চেয়ে আলাদা। পাঁচবিবি উপজেলায় জামায়াতই বিএনপির বড় শক্তি। জামায়াতি তাণ্ডবের প্রধান এলাকাও এটি। দুই দলের জোট হলেই এখানকার চিত্র পাল্টে যায়’।
‘তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। নতুন প্রজন্ম আওয়ামী লীগকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। ৮টি ইউপির ৫টিতেই আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছে। এ আসনে জামায়াত-বিএনপি জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভোটের ব্যবধান এখন মাত্র ১৫ হাজার।
তিনি বলেন, ‘এ আসনের এমপি জেলা সভাপতি শামসুল আলম দুদু এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জয়পুরহাট-২ (কালাই-আক্কেলপুর-ক্ষেতলাল) আসনের এমপি আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপনের বাড়ি এ উপজেলাতেই। আবার জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিও দু’জনের নেতৃত্বে দুই ভাগে বিভক্ত। এ আসন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির তিতাস চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছিলেন মহাজোট প্রার্থী হিসেবে। দ্বন্দ্ব থাকলেও নেত্রীকে বুঝিয়ে স্বপন পরে শামসুল আলম দুদুর মনোনয়ন নিশ্চিত করেন’।
‘কিন্তু জেলা সভাপতি দুদু কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে প্রকাশ্যে স্বপনের বিরোধিতা করেন এবং তিনি যেন সাংগঠনিক সম্পাদক না হতে পারেন, তার সব ব্যবস্থাও গ্রহণ করেন। এতে পরিস্থিতি পাল্টে যায়’।
দুদু’র কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার আনিসুর রহমান বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, এ আসনে মনোনয়নে এগিয়ে আছেন বর্তমান এমপি। দল-মত নির্বিশেষে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি মনোনয়ন পেলে আসন ধরে রাখার সম্ভাবনা আছে। পৌর মেয়র হাবিবেরও মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আবার স্বপনের লোক। তবে হাবিব মনোনয়ন পেলে বর্তমান এমপি ও জেলা সভাপতি মনোযোগ দিয়ে নির্বাচনী কাজ নাও করতে পারেন। আবার দুদু মনোনীত হলে হাবিব জোরেসোরে প্রচারণায় নাও নামতে পারেন। এ আসন ধরে রাখার ক্ষেত্রে এটিই হলো মূল সমস্যা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৭
আরএম/এএসআর
** জুলুমে চাপা পড়েছে উন্নয়ন
** এক মার্ডারেই তছনছ বিএনপি
** ইমাজ প্রামাণিকেই নড়বড়ে আওয়ামী লীগ
** ইমাজের ইমেজ নষ্ট পাঁচ পাণ্ডবে
** আতাঁত-বিবাদে ঘাঁটিতেই তিন ভাগ বিএনপি