নরেন হেমব্রমের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে নেই তেমন কোনো মাটির প্রশস্ত রাস্তা। সাইকেল ছাড়া আর কোনো যানবাহনে যাতায়াত করবার উপায় নেই এই রাস্তায়।
নরেন হেমব্রম জানান, কোনো রাস্তা না থাকায় সাঁওতালদের বাচ্চাদের স্কুলে যেতে অন্তত ২ থেকে ৩ কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতে হয়। এর ফলে শিশুরা স্কুলে যেতে অনাগ্রহ দেখায়। শিশুদের লেখাপড়ার জন্যই দরকার রাস্তা।
অন্যদিকে রাস্তার পাশাপাশি একটি গীর্জারও দাবি সাঁওতালদের মধ্যে যেসব পরিবার খ্রিষ্টান হয়েছে, তাদের। অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষরা নিজেদের মতো করে নিজেদের প্রার্থনাগৃহে প্রার্থনা করতে পারলেও খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত সাঁওতাল পরিবারগুলোর এখানে কোনো প্রার্থনাগৃহ নেই। এ কারণে যৌথ প্রার্থনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত দেবীগঞ্জ উপজেলার গরুঘুমা এলাকার খ্রিষ্টান সাঁওতাল পরিবারগুলো।
এদেরই একজন শান্তি মাড্ডি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দেখুন সবাই উপাসনা করে। কিন্তু আমাদের কি একটু প্রার্থনা করারও অধিকার নেই? সব দলের কাছে আমরা গীর্জার জন্য বলে আসছি। কিন্তু তারা আমাদের দাবি পূরণ করেন না।
স্থানীয় সাঁওতাল ও সদ্য ভারতীয় ছিটমহল থেকে বাংলাদেশি ভূ’খন্ডে চলে আসা মানুষরা জানান, পঞ্চগড়-২ আসনে সাঁওতাল পল্লীগুলোতে যিনি বা যে প্রার্থী অন্তত একটি মাটির রাস্তা ও গীর্জা করে দেবেন, ভোটের পাল্লা তার দিকেই ভারী থাকবে। সাঁওতাল পরগনা ও ছিটমহল থেকে বাংলাদেশি ভ’খন্ডে আসা মানুষদের ভোট পাবেন দাবি পূরণকারীরাই।
সদ্য ভারতীয় ছিটমহল থেকে বাংলাদেশে এসে নাগরিকত্ব পেয়েছেন পঞ্চাষোর্ধ্ব ওয়াজেদ আলী। সাবেক ছিটমহলবাসীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবাও একটি বড় ইস্যু বৈকি।
ওয়াজেদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গরুঘুমা এলাকায় না আছে রাস্তা না আছে হাসপাতাল। কেউ খুব গুরুতর অসুস্থ হলে তাদের নিয়ে যেতে হয় খাটিয়ায় করে দেবীগঞ্জ হাসপাতালে। আর এদিকে দেবীগঞ্জ হাসপাতালের করুণ দশা হওয়ায় ডাক্তাররা আমাদের রংপুর যেতে বলেন। রংপুর যেতে একটি মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়ে অন্তত ৩ হাজার টাকা। আমরা যেখানে খেতেই পাই না সেখানে তিন হাজার টাকা মাইক্রো ভাড়া দেয়া কঠিন।
দেবীগঞ্জ উপজেলার গরুঘুমা এলাকার মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যে প্রার্থী সাঁওতাল পল্লী এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করবেন, গীর্জা ও হাসপাতাল তৈরি করে দেবে স্থানীয় মানুষের ভোট যাবে তার পক্ষেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭
ইউএম/জেএম