তার মতে, ‘বাজিতপুর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আবদুল মোনায়েম খানের এলাকা। মুসলিম লীগার তথা ডানপন্থিদের বড় সমর্থক শ্রেণী থাকায় স্বাধীন বাংলাদেশেও তার ছেলে খালেকুজ্জামান খান হুমায়ূন এ আসনের সংসদ সদস্য হন।
অ্যাডভোকেট ফারুকী বলেন, ‘বাজিতপুরে তাই প্রার্থী নয়, রাজনীতিই আসল কথা’।
অন্যদিকে নিকলীর সরারচর বাজারের ব্যবসায়ী তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামীবিরোধী ভোটের দাপটে নিকলীর প্রয়াত মজিবুর রহমান মঞ্জু বিএনপি থেকে তিনবার সংসদ সদস্য হন, যদিও তাকে কেউ চিনতেনই না’।
তিনি বলেন, ‘নিকলীর ভোট কম। কিন্তু বাজিতপুরের একাধিক প্রার্থী হলে একাট্টা হয়ে ভোট দেয় নিকলী। রাজনীতি ও আঞ্চলিকতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দলও স্থানীয় রাজনীতি ও ভোটের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু’।
বর্তমানে এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তার সমর্থকরা বাজিতপুর ও নিকলীর গ্রাম-গঞ্জ, প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন। মাঠে-ময়দানে প্রচার-প্রচারণা ও জনসংযোগ এবং মনোনয়ন পেতে ঢাকায় লবিং করছেন নানাভাবে।
স্কুল শিক্ষিকা সেতারা ফেরদৌসী বলেন, ‘মনোনয়ন পেলে বা না পেলেও তারা সকলেই ফ্যাক্টর। শেষ পর্যন্ত যিনি বিজয়ী হবেন, তাকে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিকজনকে হাতে নিতে হবে। তা হলেই কেবল বিজয় সম্ভব’।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, প্রবীণ নেতা মিসবাহউদ্দিন আহাম্মদ ও প্রবীণ নেতা আলাউল হকের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। বিএনপির শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল ছাড়াও মোনায়েম খানের ছেলে মুসলিম লীগ নেতা কামরুজ্জামান খসরু বিএনপি জোটে যোগ দিয়ে প্রার্থী হতে পারেন। সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জু পরিবারের কোনো একজনেরও বিএনপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিকলীর দামপাড়ার সিরাজ মিয়ার মতে, ‘বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ বেশি সঙ্কটে রয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের সঙ্গে দলের দূরত্ব ও বিরোধ তুঙ্গে। তার সঙ্গে বাজিতপুর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দুর্দিনের কাণ্ডারি মিসবাহউদ্দিন আহমদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিরোধ শক্তি প্রয়োগ ও মামলাবাজিতে গড়ায়। এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত আওয়ামী লীগের বিপদ ডেকে আনছে, সুবিধা পাচ্ছে বিএনপি’।
গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ মেয়র প্রার্থী দিতে পারেনি। সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলের অনেকের বিরোধ সংঘর্ষের পর্যায়েও গড়ায়।
দলের নেতাকর্মীরাও বলছেন, ‘আফজাল হোসেন সংসদ সদস্য হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েও মাঠে-ময়দানে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও আহামরি কোনো অর্জন নেই তার। গ্রুপিং-কোন্দলে বেশি ব্যস্ত থাকায় তার ইমেজ সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে’।
‘আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এ সুযোগে নিজেদেরকে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরে ও ব্যাপক গণসংযোগ করে এগিয়ে গেছেন’।
‘গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার মতো নিজেদের মধ্যে লড়ছে বাজিতপুর আওয়ামী লীগ। এর সুবিধা পাচ্ছেন আওয়ামীবিরোধী রাজনীতির লোকজন, বিশেষত বিএনপি’- বিষয়টির প্রতীকী ব্যাখ্যা করেন ভাগলপুরের সাংস্কৃতিক কর্মী তাপস রায়।
বিএনপিতে চাপা দলাদলি থাকলেও প্রকাশ্য ও তীব্র দ্বন্দ্ব নেই। নিজেদের পকেট এলাকাগুলোতে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে কাজ করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আপাতত কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য সামনে না এনে এ প্রচার কৌশলে অঞ্চল ও ভোট ব্যাঙ্ক গড়ার চেষ্টাই বেশি লক্ষ্যণীয়। ভোটারদেরকে প্রণোদিত করতে একই এলাকায় একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী গিয়ে অভিন্ন ম্যাসেজ দিচ্ছেন যে, ‘আগামী নির্বাচনে জেতার জন্য সবাই একযোগে কাজ করুন’। তাদের সমর্থকরাও মাঠে সরব ও তৎপর।
‘নিজেদের স্বার্থেই ঐক্যবদ্ধ বিএনপি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, মোটামুটিভাবে সবাই তার হয়েই কাজ করবেন’ বলে বিশ্বাস করেন হিলচিয়ার পল্লী চিকিৎসক আরজত আলী।
আরও কয়েকজনের ভাষায়, ‘বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সবাই সম্ভাবনাময় ও শক্তি-সামর্থ্যে সমানে সমান। শেষ পর্যন্ত যিনি মনোনয়ন পাবেন, বিএনপিপন্থি ভোটারদের সমর্থন সেদিকেই হেলে যাবে’।
কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের বিরাট সংখ্যক ভোটার ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লায় ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও গ্রামের বাড়ির সঙ্গে তাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। দল বা প্রার্থীর পক্ষে রমজানে দান ও ইফতার সামগ্রী নিয়ে তারাও মাঠে নেমেছেন। সামনের ঈদ হয়ে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত এ ধারা চলবে।
সব মিলিয়ে রাজনৈতিক বিন্যাস অনুসারে ভোটের প্রচার-প্রচারণা ও মেরুকরণ ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। ব্যাপক জনসংযোগের পাশাপাশি চলছে কোটারি ভিত্তিক প্রকাশ্য ও গোপন বোঝাপড়া। বড় ধরনের রাজনৈতিক চাঞ্চল্য সৃষ্টির সব লক্ষণই প্রকাশ পাচ্ছে ভোটের মাঠে-ময়দানে।
তবে দীঘিরপাড়ের দোকানি শঙ্কর সাহা বলেন, ‘এ আসনে আসল মেরুকরণ হবে মনোনয়ন নির্ধারণের পর। প্রতিপক্ষের গোপন সমর্থন ও ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ প্রকাশ্যে চলে আসবে। আসলে কে কার লোক, সেটা তখনই বোঝা যাবে’।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭
এএসআর
** আ’লীগের পোয়াবারো কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে