নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের এ রাজনৈতিক চিত্রের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের ওপর চরম অসন্তুষ্ট নিজ দলেই নেতাকর্মীসহ ভোটাররা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-১ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী পরাজিত হন আফতাব উদ্দিন সরকারের কাছে।
তবে জাফর ইকবালের সঙ্গে এলাকাবাসীর যোগাযোগ রয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে সাহায্য-সহযোগিতা করায় এলাকায় তিনি অনেক জনপ্রিয়। সুবিধা-অসুবিধা-সহায়তা তার কাছ থেকেই পেয়ে থাকেন বলে জানান অনেক সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার প্রার্থী হলে সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিকীর বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, আফতাবের এলাকায় যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে। জনগণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই।
ডোমার পৌর এলাকার ইনতু আলী বলেন, জাতীয় পার্টি মিশে আছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। জাফর ইকবাল সিদ্দিকী হেরে যাওয়ার পর থেকে এলাকায় দলীয় কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। তবে জাফর ইকবাল ব্যক্তিগতভাবে জনগণের সমস্যা সমাধান ও যার যতোটুকু প্রয়োজন, আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন। এ কারণে তিনি এলাকায় এলে তার বাড়িতে ছুটে যান লোকজন।
গত বছরের ০৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত ডোমার পৌরসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ময়নুল হক। দলের একটি অংশ নির্বাচনে সহযোগিতা না করার অভিযোগ করেন তিনি। দু’দিন পরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
দলীয় কোন্দল ও এলাকায় আফতাব উদ্দিনের অনুপস্থিতিতে নতুন মুখ চান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।
অনেকেই বলছেন, দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকে মনোনয়ন দিলেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারবেন ডোমার-ডিমলা আসনে। ঢাকায় বসে এলাকায় পোস্টার টানিয়ে হওয়া নেতাদেরকেও মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি তাদের।
তবে কোন্দল থাকলেও ক্ষমতাসীন দলটির সাংগঠনিক অবস্থা ভালো। নিয়মিত দলীয় কার্যক্রম চলে।
এ আসনে প্রার্থী হতে চান ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যপাক খায়রুল আলম বাবুল। তিনি বলেন, ‘স্কুল জীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। তখন থেকেই সব ধরনের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছি। ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর ডোমার-ডিমলায় বিএনপি-জামায়াত জোটকে প্রতিরোধ করেছি’।
‘আমার এবং দলের সফলতা-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব জনগণের। একটাই দাবি, আগামী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামত নিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হোক। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি বিজয়ী হবো বলে আশা করছি’।
বাবুল আরও বলেন, ‘ডিমলায় ৩৩ বছর শিক্ষকতা করেছি। আমার অনেক ছাত্র এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। রাজনীতির পাশাপাশি আমি ব্যবসায়ী ও নাট্য সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। মনোনয়ন পেলে আশা করি, সকলের সহায়তা পাবো’।
গত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনছুরুল ইসলাম দানু। গ্রেফতারের ভয়ে দানু সংসদ নির্বাচনে পর থেকে পৌর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি বলে জানান এলাকাবাসী। আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একারণে দানুর ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরাও।
এলাকাবাসী জানান, দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা, রয়েছে আর্থিক সংকটও। ফলে ডোমার-ডিমলায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ নেই, যিনি অর্থ ও নেতৃত্ব দিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখবেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিন ইসলাম তুহিনের নাম শোনা গেলেও তিনি বিদেশে পলাতক থাকায় প্রার্থী নিয়েও সংকটে রয়েছে বিএনপি।
আফতাব উদ্দিন সরকারের বাড়ি ডিমলায়। সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়াও সক্রিয় রয়েছে জামায়াত। তবে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মী থাকলেও নীলফামারী-১ আসনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয় ডোমার থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
এসই/এএসআর