ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

বগুড়া-৪: তবে কি এখন সবাই আ’লীগ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
বগুড়া-৪: তবে কি এখন সবাই আ’লীগ! ছবিতে বাঁয়ে পাঞ্জাবি পরিহিত নন্দীগ্রাম আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি জাহিদুর রহমান এবং ডানে উপজেলা বিএনপি সভাপতি একে আজাদ।

বগুড়া থেকে ফিরে: সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এলাকা হিসেবে পরিচিত দেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে উন্নত শহর বগুড়া। তাইতো এখানে নির্বাচনের মার্কা হিসেবে ধানের শীষের জনপ্রিয়তাও বেশি।

ভোট আপনি কাকে দেবেন? সেটা একান্তই ব্যক্তিগত। তবে এই দেশে প্রতিবেশীর হাঁড়ির খবরই বেশি জানার অভ্যাস।

তাইতো মফস্বল এলাকায় আর গ্রামে ঘুরলে কে কোন দল করে, কোন মার্কা নিয়ে আগে মিছিল করেছিল, সবই কিন্তু সবার জানা।

তারপরও এখানে এখন সবাই আওয়ামী লীগ। নন্দীগ্রামে চা বিক্রেতা সোহেল বলেছিলেন, ‌এইখানে কি এখন আর ধানের শীষ খুঁজে পাবেন! সবাই এখন আওয়ামী লীগ করে। বিএনপি'র কোন কর্মসূচিও নেই।

নন্দীগ্রামের কথাইবা বিশেষভাবে কেন বলা? কারণ উপজেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, এখানে সাধারণ মানুষ বিএনপি করে বেশি। তবে বিএনপির আর কোন কার্যক্রম নেই। কারণ সভাপতি একে আজাদ সবসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে থাকেন। কোন কর্মসূচি দেন না। তাকে আওয়ামী লীগ ছাড়া খুঁজে পাবেন না।

রাজনীতির বাঘ আর মহিষ যদি এক ঘাটে জল খায়, সেখানে না বাঘের তেজ থাকে, না মহিষের জোর থাকে! এই কথা বললেন, নন্দীগ্রাম বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জহিরউদ্দিন। তিনি বলেন, এই এলাকায় এখন আর কোন বিএনপি খুঁজে পাবেন না। দলীয় নেতাকর্মীরা এতো বেশি মামলা হামলার শিকার হয়েছেন যে, এখন আর কেউ বাড়তি ঝামেলায় জড়াতে চান না। আর দলের কোন ভবিষ্যতও দেখা যাচ্ছে না। হতাশায় ভুগছেন সবাই।

২০০১ সালের অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বগুড়া-৪ এর এই আসন ছিল বিএনপি’র ঘাঁটি। বিগত দিনগুলোর মতোই জিয়াউল হক মোল্লা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে প্রায় ৫০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। মোট ভোট পান ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১৪। যেখানে ভোটের পর ৫৯ শতাংশ ছিল ধানের শীষের ভোট। আজ সেখানে বিএনপি অনুপস্থিত!

২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন বাচ্চু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই জয়ী হয়ে যাওয়ার কথা। মাঝে জেলা জাসদের সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন ঝোপ বুঝে কোপ মারেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ২২ হাজার ভোট পেয়ে এই নন্দীগ্রাম ও কাহালুর সেনাপতি বনে যান।

রাজনীতিতে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের শারীরিক উপস্থিতি কম থাকলেও ভোটের সময় তারা ধানের শীষকেই ভোট দেবেন বলেও মনে করেন অনেক স্থানীয়।

কাহালু বাজারের অটোচালক মাইনুল বাংলানিউজকে বলেন, এটা সবাই জানে এখানে ধানের শীষের ভোট। এখন চুপচাপ আছে ধানের শীষের লোকেরা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। অথচ এখন যার সঙ্গেই কথা বলবেন, তারই একটা আওয়ামী লীগ পরিচয় বের হয়। এমনকি পরিবারেও আওয়ামী লীগের শাখা প্রশাখা পাওয়া যায়। অথচ বাস্তবের অবস্থাটা হয়তো ভিন্ন।

তবে বিএনপির কর্মসূচি যে নন্দীগ্রামে কমে গেছে সেটার যথাযথ কারণ পাওয়া গেলো আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি জাহিদুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে। কথা বলার সময় পাশে একজন লোক চুপচাপ বসে ছিলেন। এমনকি জাহিদুর রহমান যখন বগুড়াতে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার কথা বলছিলেন, তখনও ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি চুপ।

শেষ দিকে পরিচয় জানতে চাইলে জানা যায়, তিনিই উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি একে আজাদ। বোঝা গেল গোলাম রাব্বানীর ক্ষোভ যে একেবারেই মিথ্যা নয়।

একে আজাদ জানান, এখানে বিএনপির অবস্থান সবসময়ই জোরালো। আগামী নির্বাচনে তিনি চান তার দল নির্বাচনে আসুক এবং সরকার গঠন করুক।

স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বললে বিএনপি’র কোন নেতার নামও মুখ ফুটে বলতে রাজি হননি তারা। তবে গোলাম রাব্বানি নিজেকে ছাড়াও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রাফী পান্নাকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে জানান। এছাড়াও কেন্দ্রীয় জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের সহ-সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মোশারফ হোসেনের নামও বলেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।