মূলত অর্থনৈতিক নানা দুর্নীতি এবং আড়ালে থেকে উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে নিজ দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করায় ঠাকুরগাঁওয়ে ভেতরে ভেতরে নিজ দলেই কর্মীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছেন এমপি রমেশ চন্দ্র সেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুলের দপ্তরি থেকে পুলিশের কনসটেবল, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের আওতাধীন সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই ঘুষ দিতে হয় এমপি রমেশ চন্দ্র সেনকে।
খোদ ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের এক সদস্য অভিযোগ করেন, এমপির নিয়োগ বাণিজ্যের টাকার যোগান দিতে গিয়ে সবর্শান্ত হতে হয়েছে অনেক পরিবারকে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শহরের ৬৫টি স্কুলে সম্প্রতি তিনজন করে দপ্তরি নিয়োগ দেয়া হয়। এসব দপ্তরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন এমপি রমেশ চন্দ্র সেন। এ ক্ষেত্রে অনেক পরিবার জায়গা জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আবার অনেক ক্ষেত্রে পদের জন্য জামায়াতের লোকজন বাড়তি টাকা দিলে চাকরি বঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমূল নেতা কর্মী। এভাবে আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমূল কর্মীকে জায়গা জমি বিক্রি করে অসহায় হতে হয়েছে।
অন্যদিকে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৫ হাজার টন গম নিয়ে বিশাল দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের বিরুদ্ধে।
একই সঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলার আওয়ামী লীগের কমিটি নির্বাচনেই সভাপতির পদে ঠাকুরগাঁ-২ আসনের এমপি দবিরুল ইসলামের কাছে হেরে গেছেন রমেশ চন্দ্র সেন। নিয়োগ বাণিজ্য, কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্বের কারণেই নিজ দলের জেলা কমিটির নির্বাচনে তিনি হেরে গেছেন বলে অভিযোগ একাধিক কর্মীর।
এছাড়া টাকার বিনিময়ে, ঠাকুরগাঁও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তাহমিনা মোল্লার বিরুদ্ধে এমপি রমেশ চন্দ সেন ভেতরে ভেতরে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার এক নেতার অভিযোগ, ঠাকুরগাঁও পৌর নির্বাচনে নেত্রী (শেখ হাসিনা) মনোনয়ন দিয়েছিলেন তাহমিনা মোল্লাকে। কিন্তু তাহমিনা মোল্লার কাছ থেকে যেহেতু এমপি সাহেব টাকা নিতে পারবেন না, তাই পক্ষ নেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোট ভাই মির্জা ফয়সালের। এমপি তার লোকজনকে গোপনে নির্দেশনা দেন তাহমিনা মোল্লার বিরুদ্ধে কাজ করার। আর জেলার এমপি যদি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেন তাহলে তার পক্ষে কাজ করা কঠিন। তাই শেষ পর্যন্ত হেরে যান তাহমিনা মোল্লা। জিতে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাই মির্জা ফয়সাল।
শুধু তাই নয়, ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে খোদ এমপি রমেশ চন্দ্র সেন অঘোষিতভাবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। যার ফলে উপজেলা নির্বাচনেও ঠাকুরগাঁওয়ে হেয়ে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী স্থানীয় সাবেক যুবলীগ নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি টিটু দত্ত। যার কারণে উপজেলায় ক্ষমতায় আসে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর রহমান।
এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের এসব কর্মকাণ্ডের জবাব জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির নির্বাচনে দিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তার পরাজয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন দবিরুল ইসলাম।
সরেজমিনে ঘুরে বেশ বোঝা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচনের পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রমেশ চন্দ্র সেনের বিপক্ষে যেতে পারেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে জোরেসোরে তৈরি হচ্ছেন অনেকেই।
মনোনয়নের এই দৌড়ে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি টিটু দত্ত। তবে নেত্রীর কথা তার কাছে সর্বোচ্চ নির্দেশনা বলে জানান তিনি।
বাংলানিউজকে টিটু বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য আমি আবেদন করব। কিন্তু নেত্রী (শেখ হাসিনা) যা বলবেন তারওপর আমার কোনো কথা নেই। নেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন, তার জন্য নির্বাচনে কাজ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
এদিকে তৃণমূল কর্মীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যাদের কাজ করার ইচ্ছা তারাই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তৃণমূলের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। মনোনয়ন পত্র অনেকেই জমা দিতে পারেন। এতে কিছু আসে যায় না। নেত্রী যাকে মনোয়ন দেবেন তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
জেডএম/