একদিকে গোলাম মোস্তফার উন্নয়নের গুণকীর্তন প্রচার করা হলে, অন্যদিকে প্রচারিত হয় দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং যাচাই-বাছাই কমিটির আহবায়ক হয়ে নিজের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্তির পর বাতিলের খবর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ও গণিত বিভাগের ছাত্র ফারুক হোসেন হত্যা মামলার আসামি শিবির নেতা আরাফাত হোসেনকে টেংগনমারি সরকারি কলেজের শিক্ষক পদে চাকরি দিয়েছেন জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গোলাম মোস্তফা।
২০১০ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারি আরাফাত হোসেনসহ একদল শিবির কর্মী ফারুক হোসেনের হাত-পায়ের রগ কেটে হলের পাশে ম্যানহোলে ফেলে রাখেন। পরদিন ফারুকের মরদেহ ম্যানহোল থেকে তোলা হয়। ওই রাতে শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের আরও চার নেতার হাত-পায়ের রগ কেটে দেন। পিটিয়ে জখম করেন অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্যকে।
এলাকাবাসী জানান, একই কলেজে চাকরি হয়েছে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ শিবিরের সভাপতি কাজীমুল ইসলাম ও দিনাজপুর শহর শিবিরের সভাপতি আবুল কাইয়ুমের। নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির আজিজুল ইসলামের ছেলে মাসুদ বিন ইসলামকেও গোলাম মোস্তফা চাকরি দিয়েছেন জলঢাকা আইডিয়াল কলেজের প্রভাষক পদে।
২০০৬ সালে সারাদেশে একযোগে বোমা হামলাকারী জেএমবি’র সদস্য হিসেবে জলঢাকায় আটক হয়েছিলেন আজিজুল ইসলামসহ দু’জন। দুই বছর জেলও খেটেছেন তারা। আজিজুলকেও এমপি চাকরি দিয়েছেন পূর্ব খুটোমারা মাধাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে।
জলঢাকা ডিগ্রি কলেজে চাকরি হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেলের বাড়ি পোড়ানো মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামি নুর হকের।
ভিজলিডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আহমেদ হোসেনের মাধ্যমে একজনের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা নিয়েছেন গোলাম মোস্তফা। এর আগে একই পদে নিয়োগ দিতে আরেক প্রার্থীর কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েও কয়েক কিস্তিতে ফেরত দিয়েছেন। এখনো ৬-৭ লাখ টাকা ফেরত দেননি।
এভাবে একের পর জামায়াতের নেতাকর্মীদের সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনকে চাকরি দিয়ে গোলাম মোস্তফা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ছেন বারবার। জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেল ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুরের অভিযোগ, এলাকার সব ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের দু’একজন ছাড়া কোনো নেতাকর্মীকে তিনি ডাকেন না।
এখানকার টিআর-কাবিখা’র নিয়ন্ত্রণ করেন গোলাম মোস্তফার ভাতিজা হেদায়েতুল ইসলাম হেদ্দা। জলঢাকা ডিগ্রি কলেজে অনার্স চালু করতে প্রায় ৩০ জন শিক্ষক নিয়োগে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। এসব টাকা লেনদেন হয়েছে তার স্ত্রী জলঢাকা মহিলা কলেজের প্রভাষক মার্জিয়া সুলতানার মাধ্যমে।
অন্যদিকে গোলাম মোস্তফার সঙ্গে রয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও স্থানীয় ছাত্রলীগের কেউ কেউ।
তবে স্থানীয় একাধিক মানুষের অভিযোগ, এমপি গোলাম মোস্তফা একা নন, জলঢাকা আওয়ামী লীগের অন্য দু’একজন নেতার সঙ্গেও জামায়াতের যোগাযোগ আছে। এ আঁতাতের ফলেই জলঢাকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াতের প্রার্থীরা।
জলঢাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সন্তানদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ আছে, মানি। নাই কোন নেতার? আর গোলাম মোস্তফা জামায়াতের নেতাকর্মীদের চাকরি দিলেও এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। তার সময়েই উপজেলায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু হয়েছে। জলঢাকা থেকে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগে সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এসই/এএসআর
** নীলফামারী-৩: নিষ্ক্রিয় বিএনপি, শক্ত অবস্থানে জাপা