এরাই এলাকায় এমপির সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আর্থিক দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের এন্তার অভিযোগও রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।
টিআর, কাবিখা, চাকরিতে নিয়োগ তদবির, টেন্ডারবাজি সব কিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করেন। এখানে টিআর, কাবিখার প্রকল্পে ঢালাও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন এবং গুটিকয়েক নিজস্ব লোক এসব প্রকল্পের টাকা লুটপাট করছেন। প্রায় সব প্রকল্পের কাজই তারা করেন। আবার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব প্রকল্পের কাজ বরাদ্দ দিয়ে থাকেন এবং ভাগ বাটোয়ারা করে নেন।
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমপি নুরুজ্জামান আহমেদের ভাই কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহাবুবুজ্জামান, ছেলে রাকিবুজ্জামান, মেয়ে জামাই রেফাজ রাঙা, এমপির নিকট আত্মীয় জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি তাহিদ তাহু, ছেলের বন্ধু মনিরুজ্জামান এখন কালিগঞ্জের হর্তাকর্তা। ছেলে রাকিবুজ্জামান এমপিরই পিএস হিসেবে কাজ করেন। তিনি যেভাবে বলেন সব কিছু সেভাবেই চলে।
আদিতমারিতে তাহির তাহু ও তার শ্যালক সাদেকুল এমপির সব কাজ দেখাশোনা করেন। এখানকার সব কিছু এদের কথাতেই চলে।
এই দুই উপজেলায় এরাই মন্ত্রীর আশপাশে থাকেন এবং দেনদরবার, তদবিরের কাজ করেন। চাকরি, ঠিকাদারি কাজ পেতে হলে এদের মাধ্যমে যেতে হয় এবং এদের মোটা অংকের টাকার ভাগ দিতে হয়। টাকা ছাড়া এরা কাউকে পাত্তা দেন না, কারো সঙ্গে কথা বলেন না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি, পুলিশের চাকরিসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, চাকরির তদবিরের জন্য এরা এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
এদিকে এদের কারণে এলাকার আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এমপি’র কাছে ভিড়তে পারেন না। যারা কখনও আওয়ামী লীগ করেননি বা আওয়ামী লীগের ধারে কাছেও ছিলেন না, তারাই এখন এমপির ডান হাত-বাম হয়ে বসে আছেন। এরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পদে বসারও চেষ্টা করছে। মন্ত্রীর আত্মীয় ও তার ডান হাত তাহিদ তাহুর শালা সাদেকুলকে আদিতমারি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি করার চেষ্টা চলছে। সাদেকুল উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। আগে কখনও তিনি আওয়ামী লীগ করেননি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্তও ছিলেন না। দুলাভাই এমপির ডান হাত এই প্রভাবে তিনিও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।
এ সব নিয়ে দলের নেতাকর্মীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে কালিগঞ্জে। গত মার্চে মন্ত্রীর এক কর্মসূচির মঞ্চ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করে ভেঙে দেয়। এই কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের আমন্ত্রণ না করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটায় বলে জানা গেছে।
এদিকে আদিতমারি ও কালিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমপি নুরুজ্জামান আহমেদের আমলে এ এলাকায় উন্নয়ন কাজও তেমন একটা হয়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থাও ভাল না। এমপি নুরুজ্জামান আহমেদ প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরও এসব উন্নয়ন কাজে নজর দিচ্ছেন না। আর যে সব কাজ হচ্ছে সেসব কাজেও রয়েছে এমপির লোকজনের হস্তক্ষেপ।
লালমনিরহাট বুড়িমারি সড়কের সংস্কার কাজ চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। এই রাস্তার কাজেও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই রাস্তার কাজের জন্য ইট, পাথর, বালি সাপ্লাইয়ের কাজ করছেন এমপির ভাইয়ের মেয়ে জামাই রেফাজ রাঙা ও আত্মীয় বদিউজ্জামান। নামুড়ী বানিনগর বাইপাস সড়কেরও বেহাল দশা। ভাঙা চোরা রাস্তা দিয়েই যানবাহন চলাচল করছে। এ রাস্তাটির সংস্কার কাজের কোনো উদ্যোগ নেই।
আদিতমারির একজন মুদি দোকানদার আনছার আলী বাংলানিউজকে বলেন, নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি হওয়ার পর মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি চেষ্টা করলে এ এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ হতে পারে। কিন্তু কোনো উন্নয়ন এখানে হয়নি।
কালিগগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশে এক চায়ের দোকানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রউফ এর সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এমপির নিজের লোকদের কারণে তার দুর্নাম হচ্ছে। তারা যা বলে যা করে সেভাবেই সব চলে। আওয়ামী লীগের লোকজনও এটা ভাল চোখে দেখছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এসকে/জেডএম