কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এই ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থক। তার ভাষ্য, ‘শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ চালান, আমরা সন্তুষ্ট।
কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণের উলিপুর ও পাশের চিলমারী উপজেলা মিলে কুড়িগ্রাম-৩ আসন। উলিপুরের ১৩টি ও চিলমারীর চারটিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন এ আসনের অন্তর্গত।
আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মাইদুল ইসলাম। ১৯৭৭ সালে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রথম জ্বালানিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তারই ছোট ভাই তাসভিরুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি।
তাদের বাবা প্রয়াত আবুল কাসেম পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ছিলেন। আবুল কাসেম পরবর্তীতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ও পরে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। মনে-প্রাণে পাকিস্তানের প্রতি প্রেমও ছিলো তার। স্থানীয়ভাবে ‘রাজাকার’ হিসেবেও পরিচিত তিনি।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ হলেও পরিবারিক বন্ধনে দুই ভাই মিলে লাঙ্গল ও ধানের শীষকে এক করে ফেলেছেন এ আসনে।
তবে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আগের চেয়ে নৌকার ভোট বেড়েছে উলিপুরে।
তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, এখানে দরকার আওয়ামী লীগের শক্ত ও গ্রহণযোগ্য একজন প্রার্থী। তাহলেই লাঙ্গল-ধান যতোই মিলে-মিশে একাকার হোক না কেন, ফসল ঘরে তুলবে নৌকা।
তাদের মতে, আগামী নির্বাচনী নৌকা, লাঙ্গল ও ধানের শীষের ত্রিমুখী লড়াই হবে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে। তবে কোন্দল মিটিয়ে আওয়ামী লীগের সবপক্ষ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে আসন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর যদি নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে, তবে সুবিধা নেবে লাঙ্গল অথবা ধানের শীষ।
তবে উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব থাকলেও চিলমারীতে নেই। ক্ষমতাসীনদের এ কোন্দলেই উলিপুর পৌরসভা ও উপজেলার স্থানীয় সরকারের সবগুলো নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বিএনপি।
এ আসনে নৌকার মাঝিও হতে চান বেশ কয়েকজন। মনোনয়ন প্রত্যাশী চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী সরকার বীরবিক্রমের একক নেতৃত্বে চিলমারি উপজেলা আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল নেই। তবে উলিপুর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলী, সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ তালুকদার, এম এ মতিন ও সৌমেন্দ্র প্রসাদ পাণ্ডে গবা মনোনয়ন পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভিযোগ, লাঙ্গল নৌকায় না এসে ধানের শীষে মিলে গেছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ছোট ভাই হওয়ায় এক হয়ে কাজ করছেন স্থানীয় জাপা এমপি বড় ভাই মাইদুল।
এমপি এলাকায়ও খুব বেশি থাকেন না। তার চাচাতো ভাই শফিকুল ইসলাম দারা-ই সব কাজ করেন। ফলে ব্যক্তির কারণে ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে জাপার।
তবে উলিপুরবাসী ইতোমধ্যেই আভাস পেয়েছেন, বিএনপির তাসভিরুল ও জাপার মাইদুলই আগামী নির্বাচনে স্ব স্ব দলের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন।
উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এ এলাকাটি বলতে গেলে আওয়ামী লীগ বিরোধী বেশি। তবে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নে বর্তমানে আওয়ামী লীগের ভোট অনেক বেড়েছে। দুই ভাই মিলে-মিশে লাঙ্গল ও ধানের শীষকে এক করে ফেললেও নৌকা নিজস্ব অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই এক হতে পারলে সফলতা আসবেই’।
উলিপুরের একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৮ হাজার ৫০৭ জন এবং নারী ৯৬ হাজার ১৮৩ জন। অন্যদিকে চিলমারী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মোট ভোটার ৬৫ হাজার।
এলাকার লোকজন বলছেন, চিলমারীর ৭৫ শতাংশ ভোটই পড়ে নৌকার বাক্সে। অন্যদিকে উলিপুরে ৩৭ হাজার হিন্দু ভোটার রয়েছেন। এসব ভোটও বরাবরই নৌকা পেয়ে আসছে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালে কানাই লাল সরকার এবং ১৯৯১ সালে আমজাদ তালুকদার নৌকার হাল ধরে বিজয় ছিনিয়ে আনেন।
তাদের মতে, এবারের প্রেক্ষাপটে পরিবারিক সূত্রে লাঙ্গল-ধান এক হয়েছে। তারপরও স্থানীয়ভাবে বেড়েছে নৌকার ভোট। দলের সবপক্ষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে আসন্ন নির্বাচনে নৌকাকে এগিয়ে রাখছেন সবাই।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর